লক্ষ্মীপুরে স্বেচ্ছাশ্রমে প্রায় ছয়শ’ ফুট লম্বা একটি কাঠের ব্রিজ নির্মাণ করেছেন দক্ষিণ চরফলকন এলাকাবাসী। জেলার খায়েরহাট-পাটারীরহাট সড়কের জারিরদোনা খালের ওপর প্রায় তিন লাখ টাকা ব্যায়ে স্বেচ্ছাশ্রম কাঠের এ ব্রিজটি নির্মাণের ফলে দীর্ঘদিনের ভোগান্তি থেকে মুক্তি মেলেছে এলাকাবাসীর।
এলাকাবাসী জানান, খায়েরহাট-পাটারীরহাট সড়কের পাটারীরহাট বাজার সংলগ্ন জারিরদোনা খালের ওপর ব্রিজ না থাকায় দীর্ঘ ছয় বছর ধরে পথচারীরা কাদাপানিতে ভিজে এক এলাকা থেকে অন্য এলাকায় যাতায়াত করে আসছিলেন তারা। এক মাস আগে শুরু হওয়া ব্রিজটির নির্মাণকাজ বৃহসম্পতিবার বিকেলে শেষ হলে সন্ধ্যায় এলাকাবাসী নিজেরাই আনুষ্ঠানিকভাবে এর উদ্বোধন করেন। এতে করে স্কুল-কলেজ-মাদ্রাসার শিক্ষার্থীসহ ওই এলাকার হাজারো মানুষের মাঝে চলাচলে বাধা না থাকায় স্বস্তি ফিরে পেয়েছেন তারা।
এছাড়া এর আগে স্কুল-কলেজ-মাদ্রাসায় আসা-যাওয়াসহ স্থানীয়দের হাট-বাজারে যাতায়াতে ছাত্রছাত্রীদের ওই খালটি পার হতে অতিরিক্ত সময় লাগায় তাদের দুর্ভোগের শেষ ছিলো না তাদের। তারা ব্রিজ নির্মাণের জন্য দীর্ঘদিন ধরে বিভিন্ন সরকারি কয়েকটি দফতর ও জনপ্রতিনিধির কাছে আবেদন করলেও কোনো উদ্যোগ নেওয়া হয়নি এতোদিন।
মাকছুদ আলম, দিদার হোসেন, সাহেদ আলী ও ইসমাইল হোসেনসহ ব্রিজ নির্মাণকাজে সম্পৃক্ত যুবকরা জানান, বর্তমান সরকার দেশের প্রত্যন্ত অঞ্চলে অসংখ্য রাস্তা-ঘাট ও ব্রিজ-কালভার্ট নির্মাণ করেছেন। এখানে একটি ব্রিজ নির্মাণের জন্য সরকারি দফতরের পাশপাশি জনপ্রতিনিধিদের কাছে তারা অনেক ধর্না দিয়েছেন। কিন্তু কেউ কোনো উদ্যোগ না নেওয়ায় তারা নিজেরাই শ্রম ও অর্থ দিয়ে এ ব্রিজ নির্মাণে এগিয়ে আসেন এবং ‘নিউ তারুণ্য তরঙ্গ সংসদ’সহ চারটি সংগঠনের সদস্যরা সেপ্টম্বর মাসে সেখানে একটি কাঠের ব্রিজ নির্মাণের উদ্যেগ নেন। সংগঠনগুলোর যুবক সদস্যরা একত্র হয়ে খালেরপাড়েই সভা করে ব্রিজ নির্মাণের পরিকল্পনা করেন। সে অনুযায়ী এলাকবাসীর সহযোগিতায় খুঁটি, কাঠ ও আনুষঙ্গিক জিনিসপত্রসহ নগদ অর্থ সংগ্রহ করে ৮ অক্টোবর কাঠের ব্রিজ নির্মাণকাজ শুরু করেন তারা। তাদের দীর্ঘ ২৮ দিনের স্বেচ্ছাশ্রমে বৃহস্পতিবার বিকেলে ব্রিজটির নির্মাণকাজ শেষ হয়।
স্থানীয় স্টার ক্লাবের সহ-সভাপতি মাকছুদ আলম জানান, খুঁটি, গাছ, কাঠ ও নগদ অর্থসহ এলাকাবাসীর বিভিন্ন রকমের সহযোগিতায় এ কাঠের ব্রিজটি নির্মাণ করা হয়েছে। আন্তরিকতার সহিত এলাকার যুবকরা একত্র হয়ে কাজ করলে, আর তাতে এলাকাবাসী সহযোগিতা করলে অনেক বড় কাজও করা যায়; এটাই তার উদাহরণ।
স্থানীয় সাবেক ইউপি সদস্য আবুল হোসেন বলেন, ‘ব্রিজটি নির্মাণে স্থানীয় যুবকরা যেভাবে উদ্যোগ নিয়েছে তা সত্যিই প্রশংসনীয়। এ ব্রিজটি নির্মাণ হওয়ায় ছাত্রছাত্রীসহ এ এলাকার মানুষের দীর্ঘদিনের দুর্ভোগ লাঘব হলো।’
স্থানীয় পাটারীরহাট ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান অ্যাডভোকেট একেএম নুরুল আমিন রাজু জানান, এলাকাবাসীর দীর্ঘদিনের এ সমস্যাটি সমাধানের জন্য তিনি বিভিন্ন সময়ে উদ্যোগও নিয়েছেন। কিন্তু নানান সীমাবদ্ধতার কারণে তা সম্ভব হয়ে ওঠেনি। যে কারণে, স্থানীয়রা নিজেদের অর্থে এ কাঠের ব্রিজটি নির্মাণ করেন। এর মাধ্যমে ওই এলাকার মানুষের দীর্ঘদিনের কষ্ট সাময়িকভাবে হলেও নিরসন হওয়ার কথা উল্লেখ করে তিনি বলেন, ‘সমস্যাটির স্থায়ী সমাধানে আমার চেষ্টা অব্যাহত থাকবে।