কিশোরগঞ্জের বাজিতপুর উপজেলা আওয়ামী লীগের সম্মেলনকে ঘিরে একটি পৌরসভাসহ ১১টি ইউনিয়নে পোস্টার, ব্যানার, ফেস্টুন ও ১৫-২০টি গেইট রয়েছে। সাধারণ সম্পাদক পদে প্রার্থীরা হলেন- আব্দুল্লাহ আল মামুন, রকিকুল হাসান শিবলী, গোলাম রসুল দৌলত, শামসুর রহমান চঞ্চল ও মোস্তাক আহাম্মেদ দাদা ভাই এর প্রার্থীদের চোখে এখন ঘুম নেই। ঘুম কেড়ে নিয়েছে উপজেলা আওয়ামী লীগের সম্মেলন। কারণ সাধারণ সম্পাদক পদটি পেতে তাঁরা এখন মাঠে সক্রিয় রয়েছেন। সকাল থেকে শুরুকরে তৃণমূলের নেতা-কর্মীদের বাড়ি বাড়ি হানা দিচ্ছেন মধ্যরাত পর্যন্ত। বাড়ি ফিরেও স্বস্থি নেই তাঁদের। এরপর চলে প্রযুক্তি নির্ভর যোগাযোগ। মুঠোফোনে হাই হ্যালো করতে করতে পার হয়ে যায় আরো কিছুটা সময়। সুখ নিদ্রা হারাতে তাঁদের অপেক্ষা করতে হয়েছে টানা ২৬ বছর। শেষে এক সপ্তাহ আগে পূর্ণাঙ্গ কমিটি গঠনের উদ্দেশ্যে সম্মেলনের তারিখ নির্ধারণ হয়েছে ১১ নভেম্বর। সাংগঠনিকভাবে নিরবতা নেমে আসা ক্ষমতাসীনের রাজনীতিতে এরপর থেকেই চাঞ্চল্য ফিরে আসে।
সাধারণ সম্পাদক প্রার্থী আব্দুল্লাহ আল মামুন। তিনি ১০১ সদস্য বিশিষ্ট আহ্বায়ক কমিটির একজন সদস্য। সম্মেলন নিয়ে নিজের অবস্থান তুলে ধরতে গিয়ে বলেন, ঘোড়ার কাজ যেমন গাধা দিয়ে হয় না, তেমনি আহ্বায়ক কমিটি দিয়ে পূর্ণাঙ্গ কমিটির ফলাফল আশা করা যায় না। দীর্ঘদিন পূর্ণাঙ্গ কমিটি না থাকায় বাজিতপুরে আওয়ামী লীগের রাজনীতিতে শৃঙ্খলা ছিল না। ছিল বিভক্তি। আশা করছি কমিটি হলে নেতৃত্বে যেমন গতি আসবে, তেমনি নেতা-কর্মীদের সঙ্গে বাড়বে আন্তযোগাযোগও।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, সাধারণ সম্পাদক পদে একাধিক প্রার্থী মাঠে থাকলেও এখন পর্যন্ত কেউ সভাপতি পদটিতে প্রার্থীতা ঘোষণা করেননি। এই পদে কিশোরগঞ্জ ৫ আসনের সাংসদ আলহাজ¦ মোঃ আফজাল হোসেন সভাপতি পদে প্রায়ই নিশ্চিত। এই অবস্থায় যত উত্তেজনা সাধারণ সম্পাদক পদ নিয়ে।
এখন পর্যন্ত সাধারণ সম্পাদক পদে পাঁচজন প্রার্থী মাঠে সক্রিয় রয়েছেন। তাঁরা হলেন, আহ্বায়ক কমিটির সদস্য আব্দুল্লাহ আল মামুন, বাজিতপুর ডিগ্রী কলেজের সাবেক জিএস ও বাজিতপুর উপজেলা আওয়ামী লীগের যুগ্ন আহ্বায়ক রকিবুল হাসান শিবলি, উপজেলা যুবলীগ এর সাবেক সভাপতি গোলাম রসুল দৌলত ও কলেজ ছাত্রলীগের সাবেক সাংগঠনিক সম্পাদক শামসুর রহমান চঞ্চল ও আওয়ামী লীগ নেতা মোস্তাক আহাম্মেদ দাদা ভাই।
দলীয় সূত্রে জানা যায়, বাজিতপুর উপজেলা আওয়ামী লীগের সর্বশেষ পূর্ণাঙ্গ কমিটি হয় ১৯৯২ সালের শুরুর দিকে। ওই কমিটিতে সাবেক পৌর মেয়র মিজবাহ উদ্দিন আহমেদ সভাপতি ও আইনজীবী আবদুর রহমান বোরহান সাধারণ সম্পাদক ছিলেন। তিন বছর মেয়াদি কমিটি ছিল সাড়ে চার বছর; ১৯৯৬ সাল পর্যন্ত। বিশেষ পরিস্থিতিতে ১৯৯৬ সালে কমিটি স্থগিত করা হয়। সেই থেকেই আহ্বায়ক কমিটির পথচলা। তখন আহ্বায়কের দায়িত্ব দেওয়া হয় বিলুপ্ত কমিটির সাধারণ সম্পাদক আবদুর রহমান বোরহানকে। কথা ছিল, আহ্বায়ক কমিটি দ্রুত সম্মেলনের মাধ্যমে পূর্ণাঙ্গ কমিটি গঠনের উদ্যোগ নেবে। কিন্তু আবদুর রহমান বোরহান ২০০১ সাল পর্যন্ত দায়িত্বে থাকলেও পূর্ণাঙ্গ কমিটি আর উপহার দিতে পারেননি।
ব্যর্থতার দায় নিয়ে আবদুর রহমান বোরহান আহ্বায়কের পদ ছাড়তে হয়। তখন কমিটি বাতিল না হয়ে কেবল আহ্বায়ক পরিবর্তন হয়। আহ্বায়ক করা হয় জেলা আওয়ামী লীগের সহ-সভাপতি শেখ নুরুন্নবী বাদলকে। শেখ নুরুন্নবী বাদল প্রায় এক যুগ এ পদে ছিলেন। কিন্তু ফলাফল সেই একই। সর্বশেষ ২০১২ সালে তাঁকে সরিয়ে দেওয়া। তাঁর জায়গায় স্থলাভিসিক্ত হন সংসদ সদস্য আলহাজ¦ মোঃ আফজাল হোসেন। কমিটির বাকী সদস্য যাঁর যাঁর পদে বহাল থাকেন।
সাধারণ সম্পাদক গোলাম রসুল ওই তালিকার একজন। হঠাৎ করে সাংসদ ভক্ত হয়ে উঠার কারণ জানতে চাইলে গোলাম রসুলের উত্তর হলো, একসময় মান অভিমান ছিল। সাংসদ আমাদের কাছের মানুষ। কাছের মানুষের সঙ্গেই নেতা-কর্মীদের মান অভিমান থাকে। আমারও ছিল। এখন তিনি (সাংসদ) আমাকে গভীর স্নেহ করেন। আমিও মন ভরে শ্রদ্ধা করি।
সাধারণ সম্পাদক প্রার্থী রকিবুল হাসান। তিনিও সাংসদ বিরোধী পক্ষ হিসেবে পরিচিত ছিলেন। এখন তিনি সাংসদের দোয়া ও আর্শিবাদের ওপর ভর করেই প্রার্থী হয়েছেন।
রকিবুল হাসান বলেন, আগে যাই ছিল, এখন বাজিতপুরের রাজনীতিতে কোন বিভক্তি নেই। সম্মেলনের মাধ্যমে নতুন নেতৃত্ব প্রতিষ্ঠা হলে বিষয়টি আরো স্পষ্ট হবে।
প্রার্থী হচ্ছেন কিনা- জানতে চাইলে সাংসদ আফজাল হোসেন বলেন, এখনো আমার পক্ষ থেকে কোন পদের জন্য প্রার্থীতা ঘোষণা করিনি। আমার দায়িত্ব হলো শুষ্ঠু ও সুন্দরভাবে সম্মেলন আয়োজন করা। সেটা নিয়ে ভেবেই সময় পার করছি। বাকীটা পরে দেখা যাবে।
দলীয় সূত্র জানায়, এরইমধ্যে সম্মেলনকে ঘিরে কাউন্সিলর নির্বাচন প্রক্রিয়া শুরু হয়ে গেছে। বাজিতপুরের ১২টি ইউনিয়ন থেকে ৩১ জন করে কাউন্সিরর নির্বাচন করা হয়েছে। পৌরসভার প্রতিটি ওয়ার্ড থেকেও ৩১জন করে কাউন্সিলর করা হয়েছে। আহ্বায়ক কমিটি থেকে কাউন্সিলর থাকছে ৭১ জন। আর সম্মেলনের দিন কো-অপশনের মাধ্যমে কাউন্সিলর নেওয়া হবে ১৫জন। এইসব কাউন্সিলরদের প্রত্যক্ষ ভোটে নেতা নির্বাচন হবে। সম্মেলনে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত থাকবেন আওয়ামী লীগ কেন্দ্রীয় কমিটির সাংগঠনিক সম্পাদক ও শিক্ষা প্রতিমন্ত্রি মহিবুল হাসান চৌধুরী নওফেল, জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি কামরুল আহসান শাহজাহান ও জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক অ্যাডভোকেট এম এ আফজাল। সম্মেলন হবে বাজিতপুর সরকারি কলেজ মাঠে।