বর্তমানে বাংলাদেশে ট্রেনের সর্বোচ্চ গতি ঘণ্টায় ১০৫ কিলোমিটার। আর এই সামান্য গতিবেগে ট্রেন ছুটতে গিয়েও হরহামেশা ঘটছে দুর্ঘটনা। অথচ প্রতিবেশী দেশ ভারত কিংবা দক্ষিণ এশিয়ার অন্যতম বৃহৎ অর্থনৈতিক দেশ চীনের ট্রেনের গতি ১০০-৩৮০ কিলোমিটার। এমন পরিস্থিতিতে রেললাইন ঢেলে সাজানোসহ ট্রেনের গতি বাড়াতে ব্যাপক পরিকল্পনা নেয়া হয়েছে। পাশাপাশি শম্ভুকগতিতে নয়, দেশে ট্রেন চলাচলের গতি অন্তত ১৬০ কিলোমিটারে উন্নীত করতেও উদ্যোগ নিতে যাচ্ছে সরকার। বাংলাদেশ রেলওয়ে সংশ্লিষ্ট সূত্রে এসব তথ্য জানা যায়।
সংশ্লিষ্ট সূত্র মতে, সারা বিশ্বেই ট্রেন এখন অন্যতম যানবাহন। এদেশের মানুষের কাছেও ট্রেন জনপ্রিয়। কিন্তু মাঝে মাঝে ঘটে যাওয়া দুর্ঘটনায় ট্রেনসেবা যেমন ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে, তেমনি মানুষের জানমালেরও ক্ষতি হচ্ছে। এমন অবস্থায় রেলের প্রতি আস্থা ফেরাতে এবং রেলসেবার মান আরো বাড়াতে গতি বাড়ানোর পরিকল্পনা নেয়া হয়েছে। ঘণ্টায় ১৬০ কিলোমিটার বেগে ট্রেন চলাচল করাতে পারলে তা হবে দেশের জন্য একটি যুগান্তকারী পদক্ষেপ।
সূত্র জানায়, পুরো রেললাইনকেই ঢেলে সাজানোর প্রস্তুতি চলছে। রেললাইনে নতুন করে অত্যাধুনিক স্লিপার বসানো, রেললাইন সংস্কার, ডাবল লাইনে উন্নীতকরণসহ নানা কাজও হাতে নিতে যাচ্ছে রেলপথ মন্ত্রণালয়। বিগত ২০১৬-১৭ সালে পশ্চিমাঞ্চলের রেলপথের গতি বাড়াতে কয়েক শ কোটি টাকা ব্যয় করা হয়। পশ্চিমাঞ্চল রেলওয়ের সবকয়টি রুটেই আগের চেয়ে ১০-৩০ কিলোমিটার গতি বাড়ানো হয়েছিল। এর মধ্যে পাঁচুরিয়া-ফরিদপুর লাইনে ঘণ্টায় সর্বোচ্চ ৮০ কিলোমিটার থেকে বাড়িয়ে করা হয়েছে ১০০ কিলোমিটার। লালমনিরহাট-বুড়িমারী লাইনে ঘণ্টায় ৭৫ কিলোমিটার থেকে বাড়িয়ে করা হয় ৮০ কিলোমিটার। পার্বতীপুর-বঙ্গবন্ধু সেতু পশ্চিম লাইনে ঘণ্টায় ৯৫ কিলোমিটার থেকে বাড়িয়ে ১০৫ কিলোমিটার, চাটমোহর ভাঙ্গুড়া সেকশনে ৫০ কিলোমিটার থেকে বাড়িয়ে ৮০ কিলোমিটার, বঙ্গবন্ধু সেতু পূর্ব-জয়দেবপুর সেকশনের সর্বোচ্চ গতিবেগ ঘণ্টায় ৮৫ কিলোমিটার থেকে বাড়িয়ে ১০০ কিলোমিটার, ও দৌলতপুর-যশোর সেকশনের গতিবেগ ঘণ্টায় ৮০ কিলোমিটার থেকে ১০০ কিলোমিটারে বাড়ানো হয়। কিন্তু গতি বাড়ানোর সিদ্ধান্ত এক বছরও টেকেনি। গত বছরের মাঝামাঝি সময়ে বিভিন্ন স্থানে রেললাইনের করুণ দশা তৈরি হলে আগের গতিতে ফিরিয়ে আনা হয় ট্রেন। এমনকি কোথাও কোথাও আগের চেয়েও গতি কমিয়ে দেয়া হয়।
এদিকে এ প্রসঙ্গে রেলওয়ে পশ্চিমাঞ্চলের মহাব্যবস্থাপক মিহির কান্তি গুহ জানান, দেশের ট্রেনের গতি ১৬০ কিলোমিটারে উন্নীত করতে নীতিগত সিদ্ধান্ত নিয়েছে রেলপথ মন্ত্রণালয়। এ নিয়ে কী কী উদ্যোগ গ্রহণ করা যায় সে ধরনের প্রস্তুতি নিতে বলা হয়েছে। রেলপথ মন্ত্রণালয় থেকে এই ধরনের বার্তা আমাদের কাছে এসেছে। সে অনুযায়ী কাজ করার প্রস্তুতি নেয়া হচ্ছে।