দেশের দ্বিতীয় বৃহত্তম স্থলবন্দর রাজশাহীর সোনামসজিদ স্থলবন্দরে প্রধান আমদানি পণ্য ভারতীয় পাথর। ভারত থেকে পাথর ও ফ্লাই-অ্যাশ আমদানি বন্ধ হয়ে যাওয়ায় গত কয়েকদিন ধরে সংকটে পড়েছে বন্দরটি। জানা গেছে, বন্দর ব্যবস্থাপনা সংস্থা পানামা সোনামসজিদ পোর্ট লিংক লিমিটেডের অযাচিত ট্যারিফ সংযোজনের মৌখিক নির্দেশে পাথর ও ফ্লাই-অ্যাশ আমদানি বন্ধ রেখেছেন আমদানিকারকরা।
প্রকাশিত সংবাদে জানা গেছে, গত ১৭ নভেম্বর থেকে বন্দর দিয়ে ঢোকেনি পাথর ও ফ্লাই-অ্যাশবাহী কোনো ট্রাক। এ বন্দর দিয়ে প্রতিদিন ২০০ ট্রাক পাথর ও ফ্লাই-অ্যাশআমদানি হয়। প্রতি টনে ৭৭৬ টাকা হারে সরকার ট্রাক রাজস্ব পায় ৩৯ হাজার টাকা। সেই হিসাবে দিনে এ বন্দর থেকে কেবল পাথর ও ফ্লাই-অ্যাশেই সরকারের রাজস্ব আদায় হয় প্রায় ৭৮ লাখ টাকার মতো। গত ১৭ নভেম্বর থেকে বন্দরে ঢোকেনি পাথর ও ফ্লাই-অ্যাশবাহী কোনো ট্রাক। ফলে সরকার এ ক’দিনেই রাজস্ব হারিয়েছে প্রায় সোয়া নয় কোটি টাকা। এখন যদি দ্রুত এই স্থবিরাবস্থার অবসান ঘটানো না যায় তাহলে সরকারকে আরও বেশি রাজস্ব ক্ষতির সম্মুখীন হতে হবে।
আমদানিকারকরা বলছেন, সরকারি রাজস্ব বাদেও ট্রাকপ্রতি এতোদিন বন্দর ট্যারিফ ধারা হচ্ছিলো ৭৮৩ টাকা করে। এর ৫১ শতাংশই নিচ্ছে পানামা। বাকি ৪৯ শতাংশ পাচ্ছে সরকার। বন্দর চালুর পর থেকেই অবকাঠামো উন্নয়নে ভূমিকা রাখেনি পানামা। উল্টো বন্দরের অবকাঠামোগত সংকটের কারণে বাইরে মালামাল খালাস করে আসছিল আমদানিকারকরা। কিন্তু হঠাৎই ১৪ নভেম্বর বন্দর ট্যারিফ প্রতি টনে ১৬২ টাকা আরোপের মৌখিক নির্দেশনা দেয় পানামা। একই সঙ্গে বন্দরের ভেতরে পণ্য খালাসের নির্দেশ দেয়। বিষয়টি নিয়ে দুপক্ষের বৈঠকের পর সুরাহা না হওয়ায় আমদানি বন্ধ করে দেন আমদানিকারকরা। ভারতীয় প্রান্তে অতিরিক্ত খরচ, ডাম্পিং, পাথরের গুণগতমান, ধুলাবালি মিশ্রিত পাথর, একাধিক সাইজের মিশ্রিত পাথরসহ নানা অসুবিধায় এতোদিন তারা চরম বেকায়দায় ছিলেন তারা। এর সঙ্গে নতুন করে পানামা সোনামসজিদ পোর্ট লিংক লিমিটেড ট্যারিফ সংযোজন ও বন্দরের ভেতরে পণ্য খালাসের ঘোষণা দিয়েছে। ব্যবসায় লোকসান ঠেকাতে বাধ্য হয়ে আমদানি বন্ধ রেখেছেন ব্যবসায়ীরা।
পানামা সোনামসজিদ পোর্ট লিংক লিমিটেডের পক্ষ থেকে বলা হচ্ছে, ট্যারিফ সংযোজন পানামার নিজস্ব কোনো বিষয় নয়, এটি বাংলাদেশ স্থলবন্দল কর্তৃপক্ষের সিদ্ধান্ত। তাদের ভাষ্য অনুযায়ী, স্থলবন্দর কর্তৃপক্ষের প্রতিনিধি সব পক্ষকে নিয়ে বৈঠক করে ট্যারিফ আরোপের সিদ্ধান্ত বাস্তবায়নের সুপারিশ করে যান; এরপরই ট্যারিফ সংযোজনের নির্দেশনা দেয়া হয়। আমরা আশা করি, উভয়পক্ষ আবার বৈঠক করে বিষয়টির সুরাহা হবে।
এছাড়া পাথর আমদানি বন্ধ থাকায় বেকার বসে রয়েছেন এখানকার শ্রমিকরা। এই স্থলবন্দরে প্রতিদিন প্রায় ৪ হাজার শ্রমিক পণ্য ওঠা-নমার কাজে নিয়োজিত থাকেন। দিনে অন্তত ৫০০ টাকা করে মজুরি পান এরা। কিন্তু বন্দরে পাথর আমদানি বন্ধ থাকায় একেবারেই কর্মহীন হয়ে পড়েছেন শ্রমিকরা। এতে নিদারুণ কষ্টে দিন যাচ্ছে খেটে খাওয়া মানুষগুলোর। বিকল্প আয়ের ব্যবস্থা না থাকায় পরিবার-পরিজন নিয়ে ভুক্তভোগী এই লোকগুলোর প্রতি সদয় দৃষ্টি দেওয়াটাও জরুরি।