জ্যামিতিক হারে বাড়ছে নিত্যপণের দাম। এতে নিম্ন ও মধ্যআয়ের সংসারে চলছে অস্থিরতা। দেশের পরিস্থিতি এমন যে, নিম্নবিত্তের উচ্চদামে পণ্যক্রয়ের কষ্ট বোঝার বা দেখার কেউ নেই। কোনো কিছুর উপরই যেন সরকারের নিয়ন্ত্রণ নেই। সিন্ডিকেট ব্যবসায়ীরাও বুঝে গেছে তাদের নিয়ন্ত্রণের ক্ষমতা সরকারের নেই। কোনো কিছুর দাম একবার বাড়লে আর কমে না। দেশে এখন ব্যবসায়ীরাই সবচেয়ে শক্তিশালী, মূল্য নির্ধারণের কলকাঠি তাদের নিয়ন্ত্রণে। পরিবহন সেক্টরের মতোই ব্যবসায়ী সিন্ডিকেটের কাছে সর্বসাধারণ যেন অসহায়।
প্রায় প্রতিদিনই বাড়ছে কোনো না কোনো পণ্যের দাম। গত কয়েক মাস ধরেই চরম অস্থিরতা বিরাজ করছে কাঁচাবাজারে। গত ঈদের সময় মাছ-মাংস ও মসলা নিয়ে যে নৈরাজ্যের শুরু, তা পূর্ণতা পায় দুই মাস আগে ভারত পেঁয়াজ রপ্তানি বন্ধের ঘোষণা দেয়ার পর। বর্তমানে ওষুধসহ প্রায় প্রতিটি পণ্যের দামই বাড়তি। পেঁয়াজের পর দাম বেড়েছে রসুন, আদা, চাল, তেলসহ বেশকিছু পণ্যের। আর নির্দিষ্ট কোনো সীমারেখা না থাকায় কাঁচা শাকসবজির দাম নিয়ে চলছে তুঘলকি কা-। ফলে বাজারে গিয়ে সীমিত আয়ের মানুষের নাভিশ্বাস উঠেছে। কাঁচাবাজার এখন এক মূর্তিমান আতঙ্ক হয়ে উঠেছে। এতে চরম বিক্ষুব্ধ সাধারণ মানুষ। সরকারের যথাযথ মনিটরিং না থাকায় এ অবস্থার সৃষ্টি বলে আমরা মনে করি।
যে দেশে বিরোধী দল ছোট্ট একটি মিছিলও করতে পারে না পুলিশের ভয়ে। সে দেশে সকাল-বিকেল পণ্যের মূল্য লাফিয়ে লাফিয়ে বৃদ্ধির রহস্য কী? সরকার রাজনীতি নিয়ন্ত্রণ করতে পারে, বাজার নিয়ন্ত্রণ করতে পারে না? বাজার সিন্ডিকেটের পেছনে সরকারের রাঘব-বোয়ালরা রয়েছে বলে অভিযোগ রয়েছে। বিক্ষুব্ধ ক্রেতারা সংবাদ মাধ্যমকে জানিয়েছেন, একাদশ সংসদের বেশিরভাগ মন্ত্রী ব্যবসায়ী হওয়ায় কৌশলে সিন্ডিকেটের সাথে হাত মিলিয়ে হাতিয়ে নিচ্ছেন হাজার হাজার কোটি টাকা। তাই পেঁয়াজ-চাল-ডাল-তেলসহ নিত্যপণ্যের বাজারে কার্যকরি নিয়ন্ত্রণ ও মনিটরিং নেই। যে কারণে ধুমধাম করে একটার পর একটা পণ্যের দাম বেড়ে যাচ্ছে।
এবছর সবচেয়ে আলোচিত পণ্য পেঁয়াজ নিয়ে দেশব্যাপী এখনো হাহাকার চলছে। গত সপ্তাহে ২৭০ টাকা থেকে মাত্র চারদিনের ব্যবধানে ১৬০ টাকা কেজিতে নেমে আসে পেঁয়াজের দর। কিন্তু সপ্তাহ যেতে না যেতে ফের তা বেড়ে ২৫০ টাকায় ওঠে। বর্তমানে ২৩০ থেকে ২৫০ টাকার ঘরে ঘুরপাক খাচ্ছে পেঁয়াজবাজার। এতে করে সরকারের পেঁয়াজ আমদানি, ব্যবসায়ীদের উদ্যোগ, বাজার নিয়ন্ত্রণে নানা ঘোষণায় কোনো সুফলই দেখছেন না সাধারণ ক্রেতারা।
অক্টোবর মাসে সরকার সরাসরি আমদানির মাধ্যমে বাজারে পেঁয়াজের সরবরাহ বাড়ানোর উদ্যোগ নিলে বাজার ব্যবস্থা এতোটা অকার্যকর হয়ে পড়তো না। ব্যবসায়ীদের ওপর নির্ভর না করে সরকারের সরাসরি পণ্য সরবরাহ বাড়ানোর বিকল্প নেই। ভোক্তা স্বার্থ রক্ষায় বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ে পৃথক বিভাগ অথবা স্বতন্ত্র মন্ত্রণালয় গঠন করা উচিত। দ্রব্যমূল্য নিয়ন্ত্রণে কয়েকটি মন্ত্রণালয় কাজ করছে; অথচ তাদের সমন্বয় নেই। তাই পৃথক বিভাগ বা মন্ত্রণালয় গঠনের দরকার আছে কীনা সরকারকে ভাবতে হবে।