আশ্বাস নয়, দাবির শতভাগ বাস্তবায়ন চান নৌযান শ্রমিকরা। বারবার আশ্বাস দিয়েই শ্রমিকদের দাবি আদায়ের আন্দোলন থামিয়ে গেজেট প্রকাশে সন্তুষ্ট নয় শ্রমিকরা। দেশের বর্তমান আর্থসামাজিক প্রেক্ষাপটে একজন শ্রমিককে তার পরিবারসহ বেঁচে থাকার ন্যূনতম চাহিদার কথা ভাবতে হবে। ২০১৬ সালের আগস্টে আন্দোলনের প্রেক্ষিতে সরকার শ্রমিকদের দাবি মেনে নিয়ে গেজেট প্রকাশ করে। আমরা দেখছি কাগজে কলমে আইন আছে, আদালত আছে, কিন্তু বিচার কোথায়? প্রতিশ্রুতি বা আইন বাস্তবায়ন না হলে, সে আইন দিয়ে কী হবে? মালিকদের সাথে নৌযান শ্রমিকদের চুক্তি আছে বলে দাবি করছে অভ্যন্তরীণ নৌ চলাচল ও যাত্রী পরিবহন সংস্থা। আমরাতো দেখছি চুক্তি আছে ঠিকই, কিন্তু চুক্তি অনুযায়ী দাবি পূরণ করা হয়েছে কতটুকু?
২০১৬ সালের গেজেট বাস্তবায়ন না হওয়ায় গত ২৩ জুলাই থেকে টানা ৩ দিন কর্মবিরতি পালন করে শ্রমিকরা। ওই সময় দাবি মেনে নেয়ার আশ্বাস দিয়ে এক মাসের সময় নিলেও সেসব দাবিও পূরণ না হওয়ায় শ্রমিকরা পুনরায় কর্মবিরতির ডাক দেয়। সর্বশেষ গত শুক্রবার মধ্যরাত থেকে ১১ দফা দাবি আদায়ে ফের ধর্মঘটের (কর্মবিরতি) ডাক দেয় শ্রমিকরা। যদিও ধর্মঘটের বিরোধিতা করছে মালিকপক্ষসহ সংশ্লিষ্ট অন্যান্য সংগঠনগুলো। এদিকে লঞ্চ চলাচল বন্ধ থাকায় ব্যাপক প্রভাব পরে দেশের দক্ষিণ জনপদে। দক্ষিণাঞ্চলসহ দেশের যে সব এলাকায় যথেষ্ট সড়কপথের যোগাযোগ নেই, সেসব নৌসংশ্লিষ্ট এলাকাগুলোতে যাত্রী ভোগান্তি চরমে পৌঁছে। এলাকার সঙ্গে যোগাযোগের ক্ষেত্রে বিপাকে পরে সাধারণ যাত্রীরা। এ ছাড়া চট্টগ্রাম ও মোংলা বন্দরে দেশি ও বাণিজ্যিক জাহাজের পণ্য খালাস বাধাপ্রাপ্ত হয়। সর্বশেষ ধর্মঘট আহ্বানের প্রায় ২৪ ঘণ্টার মাথায় নৌযান শ্রমিক ফেডারেশন নেতাদের সঙ্গে ফলপ্রসূ আলোচনার প্রেক্ষিতে সারা দেশে চলমান নৌ ধর্মঘট প্রত্যাহার করেছেন নৌযান শ্রমিকেরা। গত শনিবার বিকেল সাড়ে তিনটা থেকে শ্রম অধিদপ্তরে রাত ১১টা পর্যন্ত সরকার ও শ্রমিক নেতাদের সভা অনুষ্ঠিত হয়।
বেতন-ভাতা বাড়ানো ছাড়াও শ্রমিকদের ১১ দফা দাবির মধ্যে রয়েছেÑ পেনশন, সার্ভিস বুক চালু, নৌপথে সন্ত্রাস-চাঁদাবাজি বন্ধ, সামাজিক নিরাপত্তা নিশ্চিতকরণ, মেরিন আইনের সঠিক বাস্তবায়ন ও সব ধরনের শ্রমিক হয়রানি বন্ধ করা, সব নৌশ্রমিককে খাদ্য ভাতা দেওয়া, কর্মস্থল ও দুর্ঘটনায় মৃত শ্রমিকদের ক্ষতিপূরণ ১০ লাখ টাকা নির্ধারণ ইত্যাদি। নৌযান শ্রমিক ফেডারেশন ধর্মঘটের ডাক যৌক্তিক বলেই আমরা মনে করি। নৌযানের মালিকেরা শ্রমিকদের বারবার ভাতাসহ অন্যান্য সুবিধা দেয়ার আশ্বাসই শুধু দেন। বাস্তবে অনেকটাই পূরণ হয় না। যদিও নৌসংশ্লিষ্ট কতিপয় সংগঠন অভিযোগ করে বলছে, বিশেষ মহলের মদদেই সম্পূর্ণ ‘অযৌক্তিক’ভাবে নৌ ধর্মঘট ডেকে নৈরাজ্য করা হয়েছে।
মধ্যরাত থেকে শ্রমিকদের কর্মবিরতি শুরু হওয়ায় অনেক যাত্রীরা জানতেন না এ ধর্মঘটের তথ্য। যে কারণে অধিকাংশ যাত্রীই ঘাটে এসে সমস্যায় পড়েন। হঠাৎ করে দাবি আদায়ের নামে নৌযান শ্রমিকদের নৈরাজ্যের নামে যাত্রী ভোগান্তি কোনোক্রমেই গ্রহণীয় নয় বলে আমরা মনে করি।