রক্তগুলো এখনো গড়িয়ে পড়ছে। রাতে লাল থাকলেও ক্রমেই চকলেটের বর্ণে রুপান্তরিত হচ্ছে। কিছু কিছু জায়গায় জমাট বেঁধেছে। স্থূলকার দেহের রক্ত বলে কথা। লাশের পাশেই বসে আছে সামিনা। ভাবছে, এত শক্তিশালী একজন মানুষকে কিভাবে সে ধরাশায়ী করে দিল। মাঝে মাঝে এই ভেবে হাসছে যে, আমার গায়েতো অ-নে-ক শক্তি। শক্তিমাপার যন্ত্র যদিও আছে। কিন্তু সামিনা তা এখনো দেখেনি। পলকহীনভাবে তাকিয়ে আছে লোকটির ঠোঁটের দিকে। সিগারেটের পেছনের অংশকে আটকে রাখতে রাখতে অনেকটা ধূসর হয়ে গেছে। মানুষের ঠোঁট না হলে, এই মাংসের পিস দু’টো কুকুরের নিতম্বের মাঝখানের অংশটা হতো। ভাবে আর মিটিমিটি হাসে। আর একঘন্টা পর সে উঠবে, গোসল করবে। তারপর বাইরে থেকে তালা মেরে চিরদিনের জন্য এই ঘর ছেড়ে চলে যাবে। এই ঘরে তার অনেক আদরে রাখা একুরিয়াম আছে। আছে ১৪টি মাছ। লোকটার সাথে দস্তদস্তির একপর্যায়ে যখন তরকারি কাটার বটিটা মাথার মাঝখানে চালিয়ে দেয় সামিনা তখন মাছগুলো নিথর হয়ে তাকিয়ে ছিল। সামিনার কাছে মনে হচ্ছিল মাছগুলো তাকে সম্মতি দিয়েছে। কেননা, নিরবতাই সম্মতির লক্ষন। যদিও মাছেরা কথা বলতে পারে কি না তা সামিনার জানা নেই। হয়তো পারে। হয়তো পারে না। সামিনা এখন তা ভাবছে না। ভাবছে তার দূর সম্পর্কের এই চাচার কথা। লোকটিকে সামিনা তার বাবার মত সম্মান করতো। লোকটিও স্নেহ করতো। তবে উপরে। সামিনা প্রথম যখন তাকে তার সমস্যার কথা বলেছিল, লোকটি বলেছিল, কোন সমস্যা নেই তুমি আমার বাসার নিচের রুমটিতেই থাকবে। স্ত্রী-সন্তান দেশের বাইরে থাকে। আর লোকটি ছিল দেশে। এখন লোকটি আকাশে। তার দেহ পড়ে আছে ফ্লোরে। কিছুক্ষন ভাবতে ভাবতেই একটা উদাস করা হাসি এসে ভর করে সামিনার ঠোঁটে। মনে মনে ভাবে পাঁচতলা এই বাড়িটির মালিক হিসেবে তার নিশ্চয়ই এলাকায় একটা পরিচিতি আছে। বেশি দেরি করলে আবার তাঁকে খোঁজাখুঁজি করতে থাকবে অনেকেই। তার আগেই বের হওয়া উচিৎ। বের হয়ে গেছে ৫ ঘন্টা আগে। হাটছোতো হাটছেই। পেছনে পড়ে আছে ইডেন কলেজের যানজটময় স্মৃতি। প্রিয় মানুষটির শরীরের ঘ্রাণ...
এই মানুষটিও তার কোন উপকারে আসেনি। যেমন আসেনি বাবা-মা অথবা একমাত্র ভাইটি। উপকারে যে এসেছিল তাকেই একদিন আগে আকাশের ঠিকানায় পোষ্ট করে দিয়েছে সে। অথচ প্রিয় মানুষের মন পেতে কি-না করেছে সামিনা? প্রশ্নের উত্তরে ভেসে আসে স্মৃতির স্যালুলয়েড। সেখানে সামিনা দাঁড়িয়ে আছে। পাঁচতলা বরাবর নিচের কোনাটায়। এখান থেকে তার রুমের জানালা সরাসরি দেখা যেত, দেখা যেত তার হাতের ইশারাও...