আলোচনার কেন্দ্রবিন্দুতে রাজশাহী নগরীর মসজিদ মিশন একাডেমীর দশম শ্রেণির সেই শিক্ষার্থীরা। যারা টিফিনের টাকা বাঁচিয়ে নগরীতে থাকা ভাসমান ক্ষুধার্তদের মাঝে পহেলা বৈশাখের সেই বিশেষ দিনে দুপুরের খাবার বিতরণ করেছিলেন। তরুণ এসব শিক্ষার্থীদের এমন মহানুভবতায় এক বেলার জন্য হলেও বিশেষ দিনের বিশেষ খাবার খেয়ে মুখভরে হেসে সৃষ্টিকর্তার কাছে দোয়া প্রার্থনা করেছিলেন সেসব ভাসমান ক্ষুধার্তরা। বিষয়টি সংবাদ মাধ্যমে সেভাবে প্রকাশ না হলেও সোস্যাল মিডিয়ার সুবাদে মঙ্গলবার (১৬ এপ্রিল) নগরীর বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানসহ আড্ডাস্থল চা-এর দোকানেও ছিল আলোচনার ঝড়।
মহানগরীর অন্যান্য স্থানের মতো মঙ্গলবার ডিঙ্গাডোবা এলাকার একটি চাস্টলে ঢুকেও দেখা যায় সেসব শিক্ষার্থীদের নিয়েই চলছে আলোচনা। একই সাথে এসব শিক্ষার্থীদের মানবিক গুনাবলীর জন্যও তাদের অভিভাবক ও প্রতিষ্ঠান প্রধানসহ অন্যান্যের প্রসংশা ছিল লক্ষ্যনীয়। যাদের দিকনির্দেশনায় সঠিক পথে চলছে এসব শিক্ষার্থীরা।
এ বিষয়ে চাস্টলে থাকা বাবু, জিয়াসহ অন্যান্যরা বলেন, ‘এসব শিক্ষার্থীরা বিত্তবানদের চোঁখে আঙুল দেখিয়ে সামাজিক দায়বদ্ধতার বিষয়টি জানান দিয়েছে। পহেলা বৈশাখের বিশেষ দিনের সেই আনন্দ উল্লাসের বিষয়টি উপভোগ না করে এসব ছাত্ররা মানবিক গুনাবলীর এমন মহৎ পরিচয় ঘটিয়েছে। এদের কাছ থেকে সমাজের বিত্তবানসহ জনপ্রতিনিধিদের শিক্ষা নেওয়া উচিৎ।’
প্রসজ্ঞত, গত রোববার বাঙ্গালীর ঐহিত্য পহেলা বৈশাখের দিন দুপুরে মসজিদ মিশন একাডেমীর দশম শ্রেণির কিছু শিক্ষার্থী তাদের টিফিনের টাকা বাঁচিয়ে রেলস্টেশন এলাকায় থাকা ক্ষুধার্ত পথশিশু ও অসহায়দের মাঝে খাবার বিতরণ করে।
খাবার বিতরণকারী নয় শিক্ষার্থীদের মধ্যে থাকা রিহাব বলেন, ‘বছরের বিশেষ দিনগুলোতে আমরা হৈ হুল্লড় করে টাকা খরচ করি। কিন্তু কখনোই এসব অসহায়দের বিষয়ে ভাবিনা। যে কারণে আমরা ক্ষুদ্র পরিসরে হলেও নিজেদের স্বাধ্যমত এই শ্রেনীর মানুষদের মুখে খাবার তুলে দিতে পেরে আনন্দিত। ভবিষ্যতে এদের জন্য আরো বড় পরিসরে এগিয়ে আশার চিন্তা করেছি। আল্লাহ তায়ালা চাইলে অবশ্যই আমাদের এই স্বপ্ন সফল করবো।’
খাবার বিতরণকারী অন্যান্য শিক্ষার্থীরা হলো- অমিত, নিফাত, রাফিউ, সৈকত, রুম্মন, তাসদিদ, আপন ও আসিফ। তারাসহ অন্যান্য সহপাঠিদের কাছে থাকা টিফিনের টাকা তুলে এমন উদ্যোগ গ্রহণ করেছে বলেও জানান।
এ বিষয়ে মঙ্গলবার মসজিদ মিশন একাডেমীর অধ্যক্ষ নুরুজ্জামান খান জানান, ‘আমরা সবসময়ই সামাজিক দায়বদ্ধতার বিষয়টি মাথায় রেখে শিক্ষার্থীদের শিক্ষা দেই। তবে তারা আমাদের অজান্তেই এমন একটি ঘটনার বিষ্ফোরণ ঘটাবে ভাবিনি। এখন থেকে সামাজিক দায়বদ্ধতার বিষয়টি আরো গুরুত্ব দিয়ে আমরা দেখবো। এছাড়াও এমন কর্মকা-ে প্রত্যক্ষভাবে জড়িত হয়ে বড় পরিসরে কাজ করার জন্য এসব ছাত্রদের পাশে থাকবো।