পর্যটকের আসা-যাওয়া নিয়ন্ত্রণের মাধ্যমে সেন্ট মার্টিনকে বাঁচানোর উদ্যোগ নিচ্ছে পরিবেশ অধিদপ্তর ও কক্সবাজার উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ (কউক)। এখন থেকে এই দ্বীপে যেতে অনলাইনে নিবন্ধন করতে হবে। মৌসুম শুরু হলে টেকনাফ থেকে ছয়-সাতটি প্রমোদতরি এবং ৩০টির বেশি কাঠের ট্রলারে সেন্ট মার্টিন যাওয়া-আসা করেন দৈনিক ১৫ হাজার পর্যটক। আগামি মৌসুম থেকে সেই সুযোগ আর থাকছে না। তখন সেন্ট মার্টিনে যেতে হলে অনলাইনে নিবন্ধন লাগবে। নিবন্ধন ছাড়া কোনো ব্যক্তি সেন্ট মার্টিনে গেলে শাস্তি কিংবা অর্থদণ্ড দিতে হবে। এর লক্ষ্যে একটি সফটওয়্যার তৈরির কাজ চলছে।
এর সত্যতা নিশ্চিত করে পরিবেশ অধিদপ্তর কক্সবাজারের সহকারী পরিচালক কামরুল হাসান বলেন, পর্যটকের অতিরিক্ত চাপ নিয়ন্ত্রণ সম্ভব না হলে পরিবেশগত ঝুঁকি থেকে সেন্ট মার্টিনকে রক্ষা করা কোনোমতেই সম্ভব নয়। চলতি মৌসুমে দৈনিক সর্বোচ্চ ১৫ হাজার পর্যটক সেন্ট মার্টিনে গিয়েছেন। আগামি মৌসুম থেকে যেতে পারবেন ১ হাজার ২৫০ জন করে। এর মধ্য থেকে কতজন দ্বীপে রাত যাপন করতে পারবেন, তা-ও নীতিমালায় নির্দিষ্ট করে দেওয়া হবে।
১৬ এপ্রিল কক্সবাজার সৈকতের একটি তারকা হোটেলে ‘কক্সবাজারের পরিবেশ ব্যবস্থাপনা’ বিষয়ক এক সেমিনারের আয়োজন করে পরিবেশ অধিদপ্তর। সেমিনারে পরিবেশ অধিদপ্তরের মহাপরিচালক সুলতান আহমদ বলেন, সেন্ট মার্টিন দ্বীপ প্রতিবেশগত ঝুঁকির মধ্যে রয়েছে। দ্বীপকে রক্ষার জন্য বিপুলসংখ্যক পর্যটকের যাতায়াত নিয়ন্ত্রণ করা হবে। আগামি মৌসুম থেকে দৈনিক ১ হাজার ২৫০ জন পর্যটক সেন্ট মার্টিনে যেতে পারবেন। সেন্ট মার্টিন ভ্রমণে ইচ্ছুকদের আগে থেকে অনলাইনে নিবন্ধন করতে হবে।
সভায় বক্তব্য দেন অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (মানবসম্পদ উন্নয়ন) এস এম সরওয়ার কামাল, কউক সদস্য লে. কর্নেল আনোয়ার উল ইসলাম, অতিরিক্ত পুলিশ সুপার আবেদিল ইসলাম, পরিবেশ অধিদপ্তরের পরিচালক মোহাম্মদ জিয়াউল হক, কক্সবাজার প্রেসক্লাবের সভাপতি মাহবুবুর রহমান, কক্সবাজার সাংবাদিক ইউনিয়নের সভাপতি আবু তাহের, কক্সবাজার বন ও পরিবেশ সংরক্ষণ পরিষদের সভাপতি দীপক শর্মা প্রমুখ। বক্তারা সবাই সেন্ট মার্টিনকে বাঁচানোর লক্ষ্যে দ্রুত নীতিমালা কার্যকরের ওপর গুরুত্বারোপ করেন।
৭ দশমিক ৮ বর্গকিলোমিটার আয়তনের সেন্ট মার্টিনের লোকসংখ্যা প্রায় ১০ হাজার। পরিবেশ অধিদপ্তরের তথ্যমতে, ১৯৯৯ সালে সেন্ট মার্টিন দ্বীপকে পরিবেশগত সংকটাপন্ন এলাকা (ইসিএ) ঘোষণা করে সরকার। দ্বীপটিতে ১৫৪ প্রজাতির শৈবাল, ১৫৭ প্রজাতির উদ্ভিদ, ৬৮ প্রজাতির প্রবাল, ১৯১ প্রজাতির শামুক-ঝিনুক, ১০ প্রজাতির কাঁকড়া, ৬ প্রজাতির প্রজাপতি, ২৩৪ প্রজাতির মাছ, ৪ প্রজাতির উভচর ও ২৯ প্রজাতির সরীসৃপ রয়েছে। দ্বীপে ৭৭ প্রজাতির স্থানীয় পাখি, ৩৩ প্রজাতির পরিযায়ী পাখিসহ মোট ১১০ প্রজাতির পাখি ও ২৫ প্রজাতির স্তন্যপায়ী প্রাণী ছিল। এখন অনেক বিলুপ্ত হয়ে গেছে।