রাজশাহীর পবা উপজেলার কুলপাড়া সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষিকা ওয়াছিমা আফরোজ কোন নিয়মনীতির তোয়াক্কা না করে ছুটি ছাড়াই প্রায় দেড় বছর কর্মক্ষেত্রে অনুপস্থিত রয়েছেন। এতে ওই বিদ্যালয়ের মারাত্মকভাবে পাঠদান কার্যক্রম ব্যাহত হচ্ছে। একটি সুত্র জানায়, তিনি বর্তমানে বিদেশে তার স্বামীর কাছে অবস্থান করছেন। এ বিষয়টিকে কেন্দ্র করে অন্যান্য শিক্ষক ও স্কুলের ম্যানেজিং কমিটি সংশ্লিষ্ট দপ্তরের কর্মকর্তাদের কাছে কয়েক দফা লিখিত অভিযোগ দাখিল করলেও এখন পর্যন্ত এই শিক্ষিকার বিরুদ্ধে অজ্ঞাত কারণে কোন ব্যবস্থা না নেওয়া হচ্ছে না বলেও অভিযোগ উঠেছে। ফলে বিষয়টি নিয়ে স্কুলের শিক্ষক, শিক্ষার্থী, অভিভাবক ও ম্যানেজিং কমিটির সদস্যদের মধ্যে চরম ক্ষোভের সৃষ্টি হয়েছে। তবে দেরীতে হলেও এ শিক্ষিকার বিরুদ্ধে বিভাগীয় মামলা করে ২৫ এপ্রিল চিঠি প্রেরণ করা হয়েছে বলে শুক্রবার (২৬ এপ্রিল) রাতে জানিয়েছেন জেলা শিক্ষা কর্মকর্তা।
জানা গেছে, সহকারী শিক্ষিকা পদে ওয়াছিমা আফরোজ বিউটি ২০১৬ সালের ১০ আগস্ট কুলপাড়া সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়ে যোগদান করেন। যোগদানের পরেই শুরু হয় ছুটি আর ছুটি। ২০১৬ সাল হতে ২০১৮ সালের ১১ জানুয়ারী পর্যন্ত চিকিৎসা ছুটি নিয়ে নিয়ে চাকুরী করেছেন। প্রথমে চিকিৎসা ছুটি ৮মাস পরে মাতৃত্ব ছুটি ৬মাস। কিন্তু ২০১৮ সালের ১১ জানুয়ারির পরে আর ছুটি নেয়ার প্রয়োজন মনে করেননি। সেই সময় থেকে তিনি আর স্কুলে যাননি এবং প্রধান শিক্ষকসহ কারো সাথে কোনরুপ যোগাযোগ রক্ষা করেননি। কোন প্রকার ছুটি বা কর্তৃপক্ষকে অবগত না করেই এখন পর্যন্ত তিনি অনুপস্থিত আছেন। এতে স্কুলের পাঠদান কার্যক্রম মারাত্মকভাবে বিঘ্ন হচ্ছে।
স্কুলের ম্যানেজিং কমিটির সদস্যরা ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, দীর্ঘদিন তার অনুপস্থিতির বিষয়টি লিখিতভাবে কর্তৃপক্ষকে জানানো হলেও রহস্যজনক কারণে তারা এ ব্যাপারে কোন ব্যবস্থা নিচ্ছেনা। শিক্ষক সংকটে পাঠদান ব্যাহত হচ্ছে। শিক্ষিকা ওয়াছিমা আফরোজের ব্যবহারকৃত মুঠোফোন বন্ধ থাকায় কোন বক্তব্য পাওয়া যায়নি।
বিষয়টি নিয়ে স্কুলের প্রধান শিক্ষক গোলাম রসুল বলেন, সহকারী শিক্ষিকা ওয়াছিমা আফরোজ ছুটি না নিয়ে দীর্ঘদিন অনুপস্থিত। এতে স্কুলে সুষ্ঠুভাবে শিক্ষা কার্যক্রম পরিচালনা করতে হিমশিম খেতে হচ্ছে। তিনি বিষয়টি উপজেলা শিক্ষা অফিসে বারংবার জানিয়ে আসছেন। সম্প্রতি স্কুলের একজন সহকারি শিক্ষিকা ওয়াছিমা আফরোজের খোঁজ নিতে তার উপশহরের ১নং সেক্টরের ১৬০নং ভাড়া বাসায় গেলে বাড়ির মালিক বলেছেন, তিনি বিদেশে স্বামীর কাছে গেছেন।
এ ব্যাপারে পবা উপজেলা শিক্ষা কর্মকর্তা মোখলেছুর রহমান শুক্রবার সন্ধ্যায় বলেন, ‘ওই শিক্ষিকার অনুপস্থিতির বিষয়টি নিশ্চিত হয়ে তার বাড়ি পর্যন্ত খোঁজ করেছি, কিন্তু তাকে পাওয়া যায়নি। পরে অনুপস্থিতির বিষয়ে জবাবসহ দাপ্তরিকভাবে তার বরাবরে চিঠি প্রেরণ করা হয়। কিন্তু প্রেরিত চিঠির কোন উত্তর না পাওয়ায় প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিতে জেলা শিক্ষা অফিসারকে জানানো হয়েছে। আমার জানা মতে, শিক্ষিকা ওয়াছিমা আফরোজের বিরুদ্ধে বিভাগীয় মামলা দায়ের করা করেছেন জেলা শিক্ষা কর্মকর্তা।’ ওই শিক্ষিকার বর্তমান অবস্থান কোথায় এমন প্রশ্নের উত্তরে বলেন, তার বাসার প্রতিবেশীদের কাছ থেকে শুনেছি, তিনি এখন স্বামীর সাথে অন্য দেশে অবস্থান করছে।
বিভিন্ন কারণে এ শিক্ষিকার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে দেরি হয়েছে স্বীকার করে রাজশাহীর জেলা শিক্ষা কর্মকর্তা আব্দুস সালাম শুক্রবার রাতে বলেন, ‘ওই শিক্ষিকার অনুপস্থিতির বিষয়টি নিশ্চিত পূর্বক তার বিরুদ্ধে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়ার জন্য উপজেলা শিক্ষা কর্মকর্তা আমার দপ্তরে সম্প্রতি একটি চিঠি প্রেরণ করে। এর প্রেক্ষিতে শিক্ষিকা ওয়াছিমা আফরোজের বিরুদ্ধে বিভাগীয় মামলা দায়ের করে গতকাল বৃহস্পতিবার (২৫ এপ্রিল) প্রথম দফায় জবাবের জন্য তার বরাবরে একটি চিঠি প্রেরণ করা হয়েছে। যেটির সন্তসজনক জবাব পরবর্তি দশ কর্মদিবসের মধ্যে না দিলে ২য় এবং শেষ চিঠি প্রেরণ করা হবে। এরপরই চাকুরীচ্যুত হবেন পবা উপজেলার কুলপাড়া সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষিকা ওয়াছিমা আফরোজ।’