নড়াইলের সাংসদ মাশরাফি বিন মুর্তজা আকস্মিক জেলা সদর হাসপাতালে গিয়ে চিকিৎসক না পাওয়ার পর ওই হাসপাতালের চার চিকিৎসকের বিরুদ্ধে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে। চার চিকিৎসককে বিনা অনুমতিতে হাসপাতালে অনুপস্থিতির কারণ দর্শানোর নোটিশের পাশাপাশি দায়িত্ব থেকে সরিয়ে দিয়েছে স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রণালয়।
এই চিকিৎসকরা হলেন- নড়াইল সদর হাসপাতালের সার্জারির সিনিয়র কনসালটেন্ট ডা. মো. আখতার হোসেন, কার্ডিওলজির জুনিয়র কনসালটেন্ট ডা. মো. শওকত আলী ও ডা. মো. রবিউল আলম এবং মেডিকেল কর্মকর্তা ডা. এ এসএম সায়েম।
রোববার স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রণালয়ের এক প্রজ্ঞাপনে এই চিকিৎসকদের ওএসডি করে সাত কর্মদিবসের মধ্যে মহাখালীতে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরে যোগ দিতে বলা হয়েছে।
এর আগে, বৃহস্পতিবার (২৫ এপ্রিল) দুপুর সাড়ে ৩ টা থেকে সাড়ে ৫টা টানা দু ঘন্টা নড়াইলের সাংসদ মাশরাফি বিন মুর্তজা ঝটিকা সফর করেন নড়াইল আধুনিক সদর হাসপাতালে। সম্পূর্ন হাসপাতালে সে সময় জরুরী বিভাগে মাত্র একজন ডাক্তারের উপস্থিতি দেখতে পেয়ে ক্ষিপ্ত হয়ে ওঠেন তিনি। সদর হাসপাতালের পুরুষ ওয়ার্ডে মাত্র ২ জন নার্স দেখে তাদের ডিউটির ব্যাপারে খোঁজ নেন,জানতে পারেন হাসপাতালে পর্যাপ্ত নার্স থাকলে ও কেন দুই/এক জন নার্স দিয়ে বিভিন্ন ওয়ার্ড পরিচালিত হচ্ছে। তখনই নীচে নেমে এসে নার্সিং সুপারভাইজারদের খোঁজ করেন। রুমে তালা দেখতে পেয়ে টেলিফোন করেন,এসময় একজন সুপারভাইজারের ফোন বন্ধ পান এবং অপরজনের ফোন খোলা থাকলেও কথা বলেনননি।
রোগীদের অনুরোধে হাসপাতালের বাথরুম ও তার পরিবেশ নিজে দেখেন এবং মোবাইলে ছুবি তুলে নেন। কয়েকটি বাথরুমের দরজা ভাঙ্গা এবং দূর্গন্ধ তাকে অত্যন্ত বিব্রত করে তোলে তিনি এ ব্যাপারে জানার জন্য আবাসিক মেডিকেল কর্মকর্তা কে ফোন করতে বলেন। অফিস সহকারী কাম কম্পিউটার অপারেটর বিথী খাতুন এ সময় অফিসে উপস্থিত থেকে মাশরাফির নানা প্রশ্নের জবাব দিতে থাকেন। তিনি জানতে পারেন হাসপাতালের চিকিৎসক সংকট থাকলেও নার্সের কোন সংকট নাই, ৭৩ জন নার্স রয়েছে বর্তমানে।
আবার দোতলায় এসে ডাক্তারদের অবস্থান জানতে চেয়ে হাজিরা খাতা দেখেন। এখানে অনেকের মধ্যে একজন সার্জারী চিকিৎসক সিনিয়র কনসালটেন্ট ডা.আকরাম হোসেন এর ৩ দিনের অনুপস্থিত দেখতে পেয়ে ছুটির আবেদন দেখতে চান। পরে জানতে পারেন ছুটি ছাড়াই তিনি ৩ দিন অনুপস্থিত। এ সময় ক্ষিপ্ত অধিনায়ক প্রথমে রোগী হিসেবে ঐ চিকিৎসক কে ফোন করলে তিনি রোগীকে অর্থাৎ মাশরাফি কে রবিবার হাসপাতালে এসে চিকিৎসা নিতে বলেন। এ সময় নিজের পরিচয় দিয়ে ডাক্তারকে বলেন“এখন যদি হাসপাতালের সার্জারী প্রয়োজন হয় তাহলে সেই রোগী কি করবে” তার কর্তব্য এর কথা স্মরন করিয়ে দিয়ে দ্রুত এলাকায় ফিরে আসতে বলেন।
মাশরাফির হাসপাতালে আসার খবর পেয়ে ইতোমধ্যে আবাসিক মেডিকেল কর্মকর্তা ডা.মশিউর রহমান বাবু ছুটে এসছেন হাসপাতালে। আরেক চিকিৎসক ডা.আলিমুজ্জামান সেতুও চলে এসেছেন। এ সময় চিকিৎসকদের অনুপস্থিতি বিষয়ে কথা বলে র আবাসিক মেডিকেল কর্মকর্তা কে দিয়ে ঐ চিকিৎসকের ৩দিনের অনুপস্থিত করিয়ে নেন।
হাসপাতালের তত্ত্বাবধায়কের রুমে বসে তিনি তত্ত্বাবধায়ক ডা.আব্দুস সাকুরকে ফোন করেন। সে সময় তিনি খুলনায় একটি সভায় অংশগ্রহণ করে মাগুরায় বাড়ির দিকে যাচ্ছিলেন। স্টেশনে অবস্থান করার কথা জানিয়ে রাতের মধ্যেই তাকে হাসপাতালে চলে আসতে বলেন মাশরাফি। খবর পেয়ে একঘন্টার মধ্যেই সদর হাসপাতালে আসেন তত্ত্বাবধায়ক ডা.আব্দুস সাকুর।
এরপর হাসপাতালের নানা স্থান ঘুরে ঘুরে দেখেন এমপি মাশরাফি, তখন এক অন্য মূর্তি তার যেন জাতীয় দলের ক্যাপ্টেন। এমপি সাহেবরা যে এমন রুপ ধারন করতে পারেন এটা বিশ্বাসই করতে চায় না নড়াইল বাসি। উপস্থিত সাধারন মানুষের মধ্যে এ সময় আনন্দের হাসি থাকলেও হাসপাতালের প্রশাসনিক কর্তারা নিজেদের দোষ ঢাকতে তখন ব্যস্ত। আবর্জনা পূর্ন ড্রেন এবং নানা নোংরা পরিবেশ দেখে আবাসিক মেডিকেল অফিসারকে দূরাবস্থার কথা জানতে চাইলে আবাসিক মেডিকেল কর্মকর্তা ডা. মশিউর রহমান নড়াইল পৌরসভার উপর দায় চাপিয়ে কোন রকমে রেহাই পান। এ সময় উপস্থিত দুই চিকিৎসক এবং কর্মকর্তারা মাশরাফির কাছে এই সকল ঘটনার খবর না ছাপানোর জন্য অনুরোধ করেন। হাসপাতালের সংক্রামক ওয়ার্ডে গেলে রোগীরা নানা অভিযোগ করেন সংসদ সদস্যের কাছে-বাইরে থেকে স্যালাইন কিনে আনতে হয় এই অভিযোগ শুনে তিনি হাসপাতালের বাইরের দোকানগুলোতে সরকারী স্যালাইন পাওয়া যায় কিনা এটা দেখার জন্য নির্দেশ দেন। হাসপাতালের ওষুধ সংকট শুনে স্টোর কিপারকে ডাকেন পরে তাকে না পেয়ে রাতে আবার সভা করবেন বলে বেরিয়ে যান।
একই বিষয় নিয়ে রাত সাড়ে দশটায় হাসপাতালের তত্ত্বাবধায়ক, সিভিল সার্জন, ডাক্তার, নার্স ও কর্মচারীদের সাথে সভা করেন সাংসদ মাশরাফি। এ সময় তার সাথে জেলা প্রশাসক ও পুলিশ সুপার ছাড়াও হাসপাতালের অবকাঠোমো দেখভাল করা প্রতিষ্ঠান গনপূর্ত বিভাগের নির্বাহী প্রকৌশলীও উপস্থিত ছিলেন। দুপুরে নানা জনের কাছ থেকে প্রাপ্ত নানা অভিযোগ এবং নিজের দেখা অনিয়মের ব্যাপারে বিষয়ে তিনি সকলের সাথে রূদ্ধদ্বার বৈঠক করেন। এ সময় হাসপাতালের নানা অনিয়মের মধ্যে বাইরের এম্বুলেন্স, দালাল এবং বিক্রয় প্রতিনিধিদের কঠোরভাবে দমনের কথা বলেন। আগামীতে এইসব ব্যবস্থার উন্নতির আশা করেন। তিনি হাসপাতালকে মানুষের সেবার জন্য উন্মুক্ত করতে বলেন।
আমার কাজটি অনেক সহজ হয়ে গেলো,এখন আর কেউ আমার বিরুদ্ধে দল পাকাতে পারবে না।
নিজের পরিদর্শনের ব্যাপারে সংসদ সদস্য মাশরাফি বলেন, সাধারন মানুষের জন্য কয়েকটি গুরুত্বপূর্ন বিষয়ের একটি হলো চিকিৎসা। এই সেবার মান নিশ্চিত করতে আমার যা কিছু করার আমি সবই করবো। কিছু মানুষের জন্য নিরীহ জনগন কষ্ট পাবে এটা কেউই সহ্য করবে না।