প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার দশটি বিশেষ উদ্যোগের একটি ‘আশ্রয়ণ প্রকল্পে’র লক্ষ্য গৃহহীনের বাসস্থান নিশ্চিত করা। ভূমি মন্ত্রণালয়াধীন গুচ্ছগ্রাম প্রকল্পের মাধ্যমে আশ্রিত মানুষ শতভাগ সামাজিক নিরাপত্তা অধিকার ভোগ করছে। খোলা আকাশের নিচে অথবা কারো অনুগ্রহে যারা অতিকষ্টে এতোকাল দিন পার করেছে, তাদের এখন সুখের দিন। গৃহহীন, ঠিকানাবিহীন, ছিন্নমূল মানুষদের মাথা গোঁজার ঠাঁই করে দিয়েছে গুচ্ছগ্রাম প্রকল্প। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা’র অবদান গৃহহীনের বাসস্থান নিশ্চিত করা।
সরকারের নির্বাচনী ইশতেহার অনুযায়ী অগ্রাধিকার প্রকল্প বিবেচনায় ৩১ শে মার্চ ২০০৯ তারিখে একনেক সভায় গুচ্ছগ্রাম (ক্লাইমেট ভিকটিমস্ রিহেবিলিটেশন প্রজেক্ট) নামে প্রকল্পটি অনুমোদিত হয়। সে সময় থেকে এ পর্যন্ত সারাদেশে বিগত দশ বছরে ৩১ হাজার ৩৫০টি গৃহহীন ও ছিন্নমূল পরিবারের লক্ষাধিক মানুষকে পুনর্বাসন করা হয়েছে। প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশে ভূমি মন্ত্রণালয়ের পক্ষ থেকে গুচ্ছগ্রাম তৈরির মাধ্যমে ২০১৯ সালের মধ্যে সারাদেশে ৫০ হাজার গৃহহীন, ভূমিহীন ও ছিন্নমূল মানুষের জন্য খাসজমিতে ঘর নির্মাণ করে তাদের পুনর্বাসন করার কার্যক্রম অব্যাহত রয়েছে।
গুচ্ছগ্রাম প্রকল্প বাস্তবায়নের ফলে প্রাকৃতিক দুর্যোগের শিকার, নদীভাঙ্গা গৃহহীন, ছিন্নমূল মানুষেরা নতুন ঘরে এখন উৎসব করছে। জামালপুরের চরযথার্থপুর গুচ্ছগ্রামের লেবুজা, আমেনাদের দিন ফিরেছে। দু’জনই বিধবা, বেওয়া। দু’জনেরই সন্তান আছে। আমেনার এক ছেলে ও এক মেয়ে। মেয়েটির ২১ বছর ও তার ছোট ছেলের বয়স ১৯। মেয়েটি সরকার প্রদত্ত নারীদের বিনা খরচে শিক্ষা দান সুবিধা পেয়ে নান্দিনা ডিগ্রী কলেজ থেকে এইচএসসি পাশ করে স্থানীয় একটি কুটিরশিল্প প্রতিষ্ঠানে চাকরি নিয়েছে। ২০১৮ সালের মে মাসে মেয়েটির বিয়ে হয় কুটির শিল্প প্রতিষ্ঠানেরই একজন ক্ষুদ্র ব্যবসায়ী আকবরের সাথে। আকবরের বয়স ২৩। এখন সুখে, স্বাচ্ছন্দে তাদের দিন কাটছে। একসময় তাদের কোনো স্বজন ছিল না। এখন আমেনার বেয়ান হয়েছে। আত্মীয় স্বজন হয়েছে। আমেনার কন্যা সাথীর স্বামী আকবর লেবুজা বেওয়ার একমাত্র পুত্র। আকবরও নান্দিনা ডিগ্রী কলেজ থেকে এইচএসসি পাশ করেছে। চরযথার্থপুর গুচ্ছগ্রামে দু’পরিবার ঘর পেয়ে তাদের আনন্দের যেন সীমা নেই।
গুচ্ছগ্রাম ও বিআরডিবি’র সহায়তায় ২০১৩ সালে লেবুজার ছেলে আকবর ও আমেনার মেয়ে সাথী ক্ষুদ্র কুটির শিল্প কাজের উপর প্রশিক্ষণ গ্রহণ করে। বিআরডিবি গুচ্ছগ্রামে আশ্রিত পরিবারের যুবক-যুবতীদের মাঝে ১৫ হাজার টাকা ক্ষুদ্রঋণ বিতরণ করে। প্রশিক্ষণ শেষে আকবর আর্ট কার্ড, খাম, বক্স তৈরি ও প্রিন্টিং কাজের একটি মেশিন ক্ষুদ্র ঋণের টাকা দিয়ে ক্রয় করে। প্যাকেজিং ও প্রিন্টিং কাজে দিনে দিনে আকবরের ব্যবসার প্রসার ঘটতে থাকে। কোনো কোনো মাসে ত্রিশ হাজার টাকা পর্যন্ত আয় হয়।
এদিকে সাথী বিআরডিবি থেকে প্রশিক্ষণ নিয়ে স্থানীয় কুটির শিল্প নকশি কাঁথা বিক্রয় প্রতিনিধি হিসেবে মাসে ৮ হাজার টাকা বেতনের চাকরি নেয়। চোখের কাছে বড় হওয়া ঘরের লক্ষ্মী সাথীকে পুত্রবধু হিসেবে পেয়ে লেবুজা বেওয়ার খুশির আর সীমা নেই। নিজের মেয়ের মতো করেই পুত্রবধুর সাথে দিন কাটছে। অথচ সেই ২০১২ সালের সেপ্টেম্বর মাস পর্যন্ত এই আমেনা ও লেবুজারা খোলা আকাশের নিচে ও অন্যের গলগ্রহে ছোট বাচ্চাদের নিয়ে বহু কষ্টে দিন পার করেছে। ২০১২ সালের আগ পর্যন্ত মানুষের বাড়ি বাড়ি ঝি এর কাজ এমন কি ভিক্ষে করে জীবিকা নির্বাহ করতে হয়েছিল তাদের।
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নির্দেশে সারাদেশে প্রাকৃতিক দুর্যোগের শিকার অথবা অন্য কোনো কারণে গৃহহীন ও আশ্রয়হীন হয়ে পড়া মানুষদের জন্য আশ্রয়ণ, একটি বাড়ি একটি খামার, ঘরে ফেরা এবং গুচ্ছগ্রাম প্রকল্পের মাধ্যমে ঘর নির্মাণ করে সেখানে লক্ষাধিক মানুষকে পুনর্বাসন করা হয়েছে। ২০১২ সালের ২৮ সেপ্টেম্বর মাসে জামালপুর সদরের লক্ষ্মীরচর ইউনিয়নের চরযথার্থপুর গ্রামে ৫০টি গৃহহীন পরিবারের মধ্যে এই দুই বেওয়া সম্পূর্ণ বিনামূল্যে আট শতাংশ জমির উপর দুই কক্ষের ঝকঝকে টিনের ঘর পায়। লেবুজা, আমেনাদের পরিবারে এখন আর অভাব নেই। এরকম হাজার হাজার আশ্রিত পরিবার এখন স্বাবলম্বি হচ্ছে গুচ্ছগ্রামে আশ্রয় পেয়ে।
বর্তমান সরকার সারাদেশে প্রাকৃতিক দুর্যোগের শিকার গৃহহারা মানুষ, বিশেষ করে বিধবা নারীদেরও মাথা গোঁজার ঠাঁই করে দিয়েছে। গুচ্ছগ্রামে স্বামী-স্ত্রীর যৌথ নামে এবং বিধবাদের নিজের নামে কবুলিয়ত দলিল প্রদান করা হয়। নারীর ক্ষমতায়ন শতভাগ বাস্তবায়িত হচ্ছে গুচ্ছগ্রামগুলোতে। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার দশটি অগ্রাধিকার প্রকল্প একটি বাড়ি একটি খামার, আশ্রয়ণ প্রকল্প, ডিজিটাল বাংলাদেশ, শিক্ষা সহায়তা কর্মসূচি, নারীর ক্ষমতায়ন, ঘরে ঘরে বিদ্যুৎ, কমিউনিটি ক্লিনিক ও মানসিক স্বাস্থ্য, সামাজিক নিরাপত্তা কর্মসূচি, বিনিয়োগ বিকাশ, পরিবেশ সুরক্ষার মতো প্রকল্পগুলো দেশকে এগিয়ে নিয়ে যাচ্ছে অপ্রতিরোধ্য গতিতে। গুচ্ছগ্রাম প্রকল্পের আওতায় বিদ্যমান সরকারি বিভিন্ন সুযোগ সবিধা পেয়ে আসছে।
গুচ্ছগ্রাম প্রকল্পের মূল উদ্দেশ্য হলো দেশের গৃহহীন, ভূমিহীন নিঃস্ব পরিবারকে পুনর্বাসিত করা। এছাড়া পুনর্বাসিত পরিবারের আর্থ সামাজিক অবস্থার উন্নয়ন; নারীর ক্ষমতায়ন নিশ্চিত করা। মানব সম্পদের উন্নয়ন করাও এ প্রকল্পের আওতাধীন। গুচ্ছগ্রাম প্রকল্পের যাবতীয় উন্নয়ন কার্যক্রম স্থানীয় পর্যায়ে জেলা প্রশাসকের সার্বিক তত্ত্বাবধানে এবং উপজেলা নির্বাহী অফিসারের নেতৃত্বে প্রকল্প বাস্তবায়ন কমিটি (পিআইসি)’র মাধ্যমে স্থানীয় শ্রমশক্তি ও উপকরণ ব্যবহার করে বাস্তবায়িত হয়ে থাকে। জেলা ও উপজেলা প্রশাসনের সার্বিক তত্ত্বাবধানে বাংলাদেশ পল্লি উন্নয়ন বোর্ড (বিআরডিবি)’র মাধ্যমে পুনর্বাসিত পরিবারের মধ্যে সামর্থবান যুবক-যুবতীদের মাঝে আয়বর্ধনমূলক দক্ষতাবৃদ্ধিমূলক প্রশিক্ষণ প্রদান এবং ক্ষুদ্র ঋণ প্রদানের মাধ্যমে তাদেরকে স্বাবলম্বি করে জাতীয় দারিদ্র্য বিমোচনে সহায়তা করাই হচ্ছে গুচ্ছগ্রামের মূল কাজ।
বঞ্চিত, গরীর ও অসহায় মানুষের ভাগ্যের উন্নয়নে কাজ করছে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সরকার। নদী ভাঙন, দুস্থ এবং ঝড়-জলোচ্ছাসে ক্ষতিগ্রস্ত মানুষদের খাস জমিতে আশ্রয় দেওয়ার জন্য সরকার হাতে নেয় গুচ্ছগ্রাম প্রকল্প। একজন নদী ভাঙন কবলিত নিঃস্ব মানুষের কাছে এ আশ্রয়টুকু অনেক বড়। তবে প্রকৃত ভূমিহীনরাই যেন গুচ্ছগ্রাম প্রকল্পের সুবিধা পায় সে দিকে খেয়াল রাখতে হবে। পাশাপাশি সরকারের এ মহৎ কাজে সবাইকে আন্তরিক সহযোগিতার হাত প্রসারিত করতে হবে।