গরম ভাতের সঙ্গে ঢ্যাঁড়স ভাজির স্বাদ অতুলনীয়। খেতে সুস্বাদু এবং ঝটপট রান্না করা যায় বলে ঢ্যাঁড়সের অনেকের কাছেই প্রিয়। সুস্বাদু এই সবজিতে আমাদের শরীরের জন্য প্রয়োজনীয় বিভিন্ন পুষ্টি উপাদান বিদ্যমান। এসব পুষ্টি উপাদানের কারণে ঢ্যাঁড়স আমাদের স্বাস্থ্যের জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।
এককাপ ঢ্যাঁড়সে ২১ মিলিগ্রাম ভিটামিন সি, ২২ গ্রাম প্রোটিন, ৬০ মিলিগ্রাম ম্যাগনেসিয়াম, ২৯৯ মিলিগ্রাম পটাশিয়াম, ৩ গ্রাম ফাইবার, ৩৩ ক্যালরি, ৭.৬ গ্রাম কার্বো হাইড্রেট, ৮০ মিলিগ্রাম ফলিক এসিডএবং ২ গ্রাম ফ্যাট আছে। লো ক্যালরি হওয়ায় এটি কোলেস্টেরল লেভেল কমিয়ে ওজন হ্রাস করে থাকে। ঢ্যাঁড়স অধিক ক্যালসিয়াম সমৃদ্ধ সবজি। এসব পুষ্টি উপাদানের কারণে ঢ্যাঁড়স আমাদের স্বাস্থ্যের জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।
হবু মায়েদের ঢ্যাঁড়স খাওয়ার পরামর্শ দেয়া হয়ে থাকে। ঢ্যাঁড়সের অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ পুষ্টি উপাদান ভিটামিন বি গর্ভের শিশুর সুস্থ বৃদ্ধি নিশ্চিত করে এবং শিশুর জন্মগত সমস্যা, যেমন- স্পাইনাল বিফিডা (ংঢ়রহধষ নরভরফধ) হওয়ার আশঙ্কা হ্রাস করে।
এ ছাড়া ফলিক অ্যাসিড সমৃদ্ধ এই সবজি নতুন কোষ উৎপাদন ও তার সুস্থতা বজায় রাখতে সাহায্য করে, যা কিনা সুস্থ গর্ভধারণের জন্য অপরিহার্য। ঢ্যাঁড়সের ফলেট গর্ভপাত প্রতিরোধ করে এবং ভিটামিন সি ভ্রƒণের উন্নয়নে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে। গর্ভাবস্থায় খাদ্য তালিকায় ঢ্যাঁড়স অন্তর্ভুক্ত করুন (বিশেষ করে গর্ভধারণের ৪ থেকে ১২ সপ্তাহের মধ্যে)। এ সময় ভ্রƒণের স্নায়ুর বিকাশ সাধন হয়।
প্রতি ৮ জনের মধ্যে ১ জন নারীর তাদের জীবনকালের মধ্যে স্তন ক্যান্সারে আক্রান্ত হওয়ার সম্ভাবনা থাকে। খাদ্য তালিকায় ঢ্যাঁড়স অন্তর্ভুক্ত করার মাধ্যমে এই হার অনেকটাই হ্রাস করা সম্ভব। এক গবেষণায় জানা যায়, ঢ্যাঁড়সে উপস্থিত ল্যাকটিন স্তন ক্যান্সারের কোষ বিনষ্ট করতে সক্ষম।
ঢ্যাঁড়স আমাদের শরীরের ক্যালসিয়াম ও ম্যাগনেসিয়ামের ঘাটতি পূরণ করে। সুস্থ হাড়ের পাশাপাশি হৃদযন্ত্র, রক্তচাপ ও কোলেস্টেরলের মাত্রা ঠিক রাখতে ক্যালসিয়াম প্রয়োজন। এ ছাড়া পেশি ও স্নায়ু সঞ্চালনেও ক্যালসিয়াম ভূমিকা রাখে।
ঢ্যাঁড়সের দ্রবণীয় ফাইবার কোলেস্টেরলকে স্বাভাবিকভাবে কমিয়ে আনে এবং আমাদের শরীরে হৃদরোগের সম্ভাবনা হ্রাস করে। এ ছাড়া ঢ্যাঁড়সের অন্যতম পুষ্টি উপাদান পেক্টিন (চবপঃরহ) রক্তে উচ্চ কোলেস্টেরল কমিয়ে হার্টের সুস্থতা নিশ্চিত করে।
চোখ ভালো রাখতে ঢ্যাঁড়সের জুড়ি নেই। ঢ্যাঁড়স ভিটামিন এ এবং বিটা-কেরাটিনে ভরপুর, যা চোখের চমৎকার দৃষ্টিশক্তি বজায় রাখতে গুরুত্বপূর্ণ অবদান রাখে। দৃষ্টিশক্তি ভালো রাখার পাশাপাশি এটি আমাদের চোখের অন্যান্য অসুখের ভয় কমাতে সাহায্য করে।
ঢ্যাঁড়স আমাদের হজম প্রক্রিয়া সুষ্ঠুভাবে পরিচালনা করে। এর হাই ফাইবার খাদ্য হজমে সাহায্য করে। ঢ্যাঁড়স পেটের অতিরিক্ত গ্যাস, হজমজনিত কারণে পেটে ব্যথা, কোষ্ঠকাঠিন্য ইত্যাদি সমস্যা প্রতিরোধ করে। এ ছাড়া ঢ্যাঁড়সের জলীয় অংশ ডায়রিয়া প্রতিরোধ করে।
ঢ্যাঁড়সের বিভিন্ন অ্যান্টি-অক্সিডেন্ট উপাদান এবং উচ্চ ভিটামিন সি উপাদান শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়িয়ে তোলে। ভিটামিন সি রক্তে হোয়াইট বস্নাড সেল তৈরি করার মাধ্যমে রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা উন্নত করে বাইরের রোগ জীবাণু শরীরে প্রবেশ করতে বাধা সৃষ্টি করে শরীরকে সুস্থ রাখে।
ঢ্যাঁড়সের উপকারিতার মধ্যে অন্যতম হলো এটি লিভার পরিষ্কার রাখে এবং লিভারের রোগ প্রতিরোধ করতে সাহায্য করে। এতে এমন উপাদান রয়েছে, যা লিভারে এসিডও কোলেস্টেরল ডিটক্সিফাই করতে সাহায্য করে ও লিভারে ফ্যাটের সংক্রমণ প্রতিরোধ করে। তাই লিভারের সুস্বাস্থ্য বজায় রাখতে খাবারের তালিকায় ঢ্যাঁড়স রাখুন।
ঢ্যাঁড়স অ্যাজমা প্রতিরোধ করে। অ্যাজমা আক্রান্ত রোগীদের জন্য ঢ্যাঁড়স খাবার পরামর্শ দিয়ে থাকেন চিকিৎসকরা। ঢ্যাঁড়সের ভিটামিন সি-তে অ্যান্টি-অক্সিডেন্ট ও অ্যান্টি-ইনফ্লামেটোরি এজেন্ট রয়েছে, যা অ্যাজমা আক্রান্ত রোগীদের অ্যাজমা নিয়ন্ত্রণে সাহায্য করে।
ঢ্যাঁড়স ইনসুলিনের মতো উপাদান বহন করে, যা শরীরের শর্করার মাত্রা কমায়। ঢ্যাঁড়সে আরও রয়েছে লো গস্নাইসিমিক ইনডেক্স, যা ডায়াবেটিসে আক্রান্ত রোগীদের জন্য গুরুত্বপূর্ণ। গবেষণায় পাওয়া যায়, ঢ্যাঁড়স শরীরের অতিরিক্ত গস্নুকোজের শোষণ হ্রাস করতে সাহায্য করে, যার ফলে রক্তে শর্করার মাত্রা কমে যায়।
চুলের সৌন্দর্য ধরে রাখতে ঢ্যাঁড়স টুকরো টুকরো করে কেটে পানিসহ সিদ্ধ করে সেই পানি দিয়ে চুল ধুয়ে ফেলুন। আপনার চুলের হারানো উজ্জ্বলতা ফিরে পাওয়ার সঙ্গে সঙ্গে চুল আরও বাউন্সি এবং স্বাস্থ্যবান হবে এতে। শুধু তা-ই নয়, ঢ্যাঁড়স পানির এই মিশ্রণ খুশকি সমস্যার সমাধান করতেও ওস্তাদ। এটি মাথার ত্বককে প্রাকৃতিকভাবে মশ্চারাইজ করে চুল খুশকি মুক্ত রাখে।
ঢ্যাঁড়সের পানীয়
ঢ্যাঁড়সের পানীয় অনেকগুলো রোগ প্রতিরোধ করে। চলুন জেনে নেয়া যাক কিভাবে তৈরি করবেন ঢ্যাঁড়সের পানীয়-
প্রথমে ২টি পরিষ্কার ঢ্যাঁড়স ও ১ গস্নাস পানি নিন। এবার ঢ্যাঁড়সগুলোর ওপর এবং নিচের অংশ কেটে নিন। এক গস্নাস পানির মধ্যে কাঁটা ঢ্যাঁড়স দিয়ে দিন। এভাবে সারা রাত রাখুন। সকালে খালি পেটে পানিটুকু পান করুন।
ঢ্যাঁড়সের পানীয় পানের উপকারিতা :
* রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি করে
* বস্নাড সুগার কমিয়ে দেয়, যা ডায়াবেটিস প্রতিরোধ করে।
* কোলেস্টেরল মাত্রা নিয়ন্ত্রণ রাখে।
* কিডনি রোগ প্রতিরোধ করে।
* অ্যাজমা প্রতিরোধে সাহায্য করে।
ভালো ফল পেতে প্রতিদিন নাস্তার আগে খালি পেটে এটি পান করুন। এটি ডায়াবেটিস কমাতে সাহায্য করে, কোলেস্টেরল মাত্রা নিয়ন্ত্রণ করে কিডনি সুস্থ রাখে।