লোকবলের অভাবে শেরপুর পিডিবি’র বিনা মূল্যের গ্রাহক সেবা নিতে হচ্ছে দুই শত টাকা খরচ করে। অর্থাৎ কোন বিদ্যুৎ গ্রাহকের সার্ভিস তার মেইন তার থেকে বিচ্ছিন্ন হলে বা কার্বন পড়ে বিদ্যুৎ সংযোগ বন্ধ হয়ে গেলে বিদ্যুৎ বিভাগের জরুরী বিভাগে অভিযোগ জানালেই বিদ্যুৎ কর্মী বা লাইনম্যান ও সহকারী লাইনম্যান এসে সংযোগ দিয়ে থাকেন।
কিন্তু শেরপুর সদর উপজেলার গ্রাহকরা পিডিবি’র জরুরী বিভাগের ল্যান্ডফোন ও মোবাইল নাম্বারে ফোনের পর ফোন করেও কোন উত্তর না পেয়ে বাধ্য হয়ে সরাসরি লাইনম্যানদের দ্বারস্থ হয়। কিন্তু তারাও বিভিন্ন স্থানে কাজে ব্যস্ত থাকার কথা জানালে গ্রাহকে তখন ছুটতে হয় শহরের বিভিন্ন মহল্লায় অবৈধ বা স্বঘোষিত বিদ্যুৎ বিভাগের লাইনম্যানদের কাছে। তারা পিডিবি’র কোন কর্মী না হলেও দুই শত টাকার বিনিময়ে গ্রাহকসেবা দিয়ে থাকে তড়িৎ গতিতে। এসব স্বঘোষিত লাইনম্যানদের অস্থিত্বের কথা বিদ্যুৎ বিভাগ স্বীকার না করলেও পুরো শহরে দাপিয়ে বেড়াচ্ছে এসব স্বঘোষিত লাইনম্যানরা।
শহরের নয়আনী বাজার, খরমপুর, মুন্সীবাজার, মাধবপুর, চকবাজার, গোয়ালপট্টি, শহীদ বুলবুল সড়ক, রঘুনাথ বাজার, সজবর খিলা, বটতলা, নারায়নপুর, খোয়ারার পাড়সহ শহরের বিভিন্ন এলাকার ভুক্তভোগী একাধিক বিদ্যুৎ গ্রাহক অভিযোগ করে জানায়, বাসা-বাড়ি ও বিভিন্ন ব্যবসা প্রতিষ্ঠানের বিদ্যুৎ সংযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়লে প্রথমেই স্মরনাপন্ন হতে হয় বিদ্যুৎ বিভাগের জরুরী বিভাগের ল্যান্ডফোনের ৬১২০৮ নাম্বারে অথবা ০১৭২৭-১১৭৬১৭ নাম্বার মোবাইলে। কিন্তু বেশীর ভাগ সময় উল্লিখিত নাম্বারে কাউকে পাওয়া যায় না বা ফোন রিসিভ করে না অথবা ফোন লাইন বিকল থাকে। ফলে গ্রাহক তার অভিযোগ জানাতে না পেয়ে বাধ্য হয় ওইসব স্বঘোষিত লাইনম্যানদের স্মরনাপন্ন হতে। সূত্রমতে, শহরের বিভিন্ন এলাকায় এ ধরনের স্বঘোষিত লাইনম্যানের সংখ্যা রয়েছে প্রায় ১০ থেকে ১৫ জন।
ভোক্তভোগীরা জানায়, কেউ যদি অভিযোগ কেন্দ্রের ফোনে কাউকে পেয়ে অভিযোগ লেখাতে পারে তবে তার সংযোগটি কখন ঠিক হবে তা বলতে পারে না অভিযোগ কেন্দ্রের কর্মচারী। কারণ প্রায় ৪০ হাজার গ্রাহকের জন্য তিন সিপ্টে কাজ করা মাত্র ২০ জন বিদ্যুৎকর্মী গ্রাহক সেবার জন্য খুবই অপ্রতুল। তাই কোন গ্রাহক যদি সকালে অভিযোগ দেয় তবে অনেক সময় তার সংযোগ ঠিক করতে রাতও হয়ে যায়। ফলে তারা বাধ্য হয়েই বিশেষ করে গ্রীষ্মকালের গরমের হাত থেকে দ্রুত রক্ষা পেতে বিদ্যুৎ বিভাগের বিনামূল্যের সেবা’র অপেক্ষা না করে বাধ্য হয়ে ২ শত টাকা দিয়ে দ্রুত সময়ের মধ্যে গ্রাহকরা তাদের সংযোগ ঠিক করে নেয়।
অভিযোগে আরো জানাযায়, অনেক সময় পিডিবি’র লাইনম্যানরাও দ্রুত কাজ করে দেয়ার কথা বলে গ্রাহকদের কাছে থেকে বকশিসের নামে ৫০ থেকে ১০০ টাকা করে নিয়ে থাকে। যদি কোন গ্রাহক এ বকশিস নামের টাকা কম বা না দিতে চায় তবে পরবর্তিতে তার সংযোগের পুনরাই সমস্যা দেখা দিলে ওই গ্রাহকের সংযোগ সহজেই ঠিক করে দেয় না সরকারী লাইনম্যানরা।
ভুক্তভোগীরা নিজেদের কাজ উদ্ধারের স্বার্থে এ বিষয়ে বিদ্যুৎ বিভাগের ঊর্ধ্বতন বিভাগকে অবগত না করলেও সম্প্রতি স্বঘোষিত ওইসব লাইনম্যানদের দৌড়াত্ব বৃদ্ধি পাওয়ায় বিষয়টি পিবিডি’র বিভিন্ন স্তরের কর্মকর্তাদের জানালেও কোন কাজ হয়নি।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক পিডিবি’র কয়েকজন কর্মচারী এবং লাইনম্যান জানায়, আমরা যে কয়জন লাইনম্যান আছি তাদের পক্ষে পুরো পৌরসভাসহ উপজেলার ১৪ ইউনিয়নের লাইনের সমস্যা সমাধান করা সম্ভব নয়। তাই গ্রাহকদের সুবিধার্থে অফিসের অনুমতি না নিয়ে বা কাউকে না জানিয়েই জীবনের ঝুকি নিয়ে তারা এ কাজ করছে। কিন্তু বিদ্যুৎ বিভাগের লোকবল বাড়ালে গ্রাহকের সংযোগ ঠিক করে দেওয়ার ঝামেলা থাকবে না বা ওইসব স্বঘোষিত লাইনম্যানরা থাকবে না।
এ বিষয়ে পিডিবি’র নির্বাহী প্রকৌশলী সুব্রত রায় স্বঘোষিত লাইনম্যানের অস্তিত্বে কথা অস্বীকার করে বলেন, দিন দিন বিদ্যুৎ গ্রাহক বাড়ছে, কিন্তু সেইসাথে আমাদের লোকবল বাড়েনি। তবে আমাদের যা লোকবল রয়েছে তা দিয়ে পৌরসভাসহ পুরো উপজেলার গ্রাহকসেবা দেওয়া সম্ভব। সেক্ষেত্রে গ্রাহকদেরও একটু ধৈয্য ধরতে হবে এবং সচেতন হতে হবে। আমাদের অভিযোগ কেন্দ্রে সার্বক্ষনিক লোক থাকে অভিযোগ পেলে সিরিয়াল অনুযায়ী আমাদের সেবা কর্মীরা গ্রাহক সেবা দিয়ে থাকেন।
তিনি আরো জানায়, বর্তমানে পৌরসভাসহ সদর উপজেলায় বানিজ্যিক, আবাসিক ও মিল-কারখানার গ্রাহকের সংখ্যা রয়েছে ৩৮ হাজার ৪৫২ জন। লাইনম্যানের সংখ্যা ৭ জন এবং সহকারী লাইনম্যান এবং অভিযোগ কেন্দ্রের জন্য রয়েছে ৩ জন। এ ছাড়া সার্বক্ষনিক সংযোগ সংরক্ষনের জন্য ৫ টি জীপ গাড়ি চালু রয়েছে।