বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়া গণতন্ত্রের প্রতীক মন্তব্য করে দলের মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেছেন, বেগম জিয়া এদেশের গণতন্ত্রের প্রতীক। তিনি কারাগার থেকে বেরিয়ে আসলে জনগণের উত্তাল তরঙ্গে ছেয়ে যাবে। জনগণই গণতন্ত্রের মাথাকে বের করে আনবে। শুক্রবার দুপুর সোয়া ১২টায় রাজধানীর জাতীয় প্রেসক্লাবে ন্যাশনাল রিসার্চ সেন্টারের উদ্যােগে 'বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়ার রাজনীতিতে আগমন ও চেয়ারপারসন হিসেবে তিন যুগ পুর্তি উপলক্ষে ত্যাগ শীর্ষক আলোকচিত্র প্রদর্শনী ও আলোচনা সভায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে একথা বলেন।
বিএনপি মহাসচিব নেতাকর্মীদের উদ্দেশ্য বলেন, আপনারা হতাশ হবেন না। লক্ষ্যে অবিচল থাকুন, গণতন্ত্রের জয় হবেই। সামনের দিকে এগিয়ে বেগম জিয়াই আমাদের অনুপ্রেরণা। তাঁর ত্যাগ তরুণ প্রজন্মের কাছে ছড়িয়ে দিতে হবে।সময়ের সঙ্গে বাস্তবতার প্রেক্ষিতে সিদ্ধান্ত নিয়ে এগিয়ে যেতে হবে। পৃথিবী বদলেছে, সেই বাস্তবতা মাথায় রেখে সমস্যা চিহ্নিত করে এগুতে হবে।
মির্জা ফখরুল বলেন, বাবুল তালুকদারকে আন্তরিক ধন্যবাদ, তিনি এমন একটি দিনের কথা স্মরণ করে দিয়েছেন, যেদিন একজন গৃহবধূ মানুষের অধিকার আদায় করতে জাতীয়তাবাদী শক্তির হাল ধরেন। একটি পাল ছাড়া নৌকাকে টেনে তোলা চ্যালেঞ্জিং কাজ। তখন ক্ষমতায় স্বৈরাচার এরশাদ, অনেক চ্যালেঞ্জ মোকাবেলা করেই তাঁকে এগুতে হয়েছে।
শহীদ প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমানকে হত্যা ও স্বৈরাচার এরশাদের রাজনীতিতে আগমন একই সূত্রে গাঁথা মন্তব্য করে দলটির মহাসচিব বলেন, বেগম জিয়ার মতো সংগ্রামী নেতা এশিয়ায় বিরল। তিনি সত্যিকার অর্থে বাংলাদেশকে গণতান্ত্রিক রাষ্ট্রে পরিণত করেছিলেন। সংসদীয় গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠা, ৯১ সালে মুক্তবাজার অর্থনীতি ও নারী শিক্ষায় বেগম জিয়ার যুগান্তকারী পদক্ষেপ ইতিহাস হয়ে থাকবে।
মির্জা ফখরুল বলেন, দেশনেত্রী একজন অনন্য মহিলা। সকল সুখ বিসর্জন দিয়ে জনগণের অধিকার আদায়ে রাজনীততে আসেন। অন্যায়ের কাছে কখনো মাথানত করেননি।
দলের নেতাকর্মীদের বিভ্রান্ত না হওয়ার আহবান জানিয়ে বলেন, আপনারা মোটেও বিভ্রান্ত হবেন না। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে নানা ভাবে দলের বিরুদ্ধে গুজব ছড়ানো হচ্ছে। এ ব্যাপারে সতর্ক থাকতে হবে। আমাদের নেত্রী বেগম খালেদা জিয়া ও ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের দিক নির্দেশনায়ই দল পরিচালিত হচ্ছে। তাদের নির্দেশ মোতাবেক আমরা কাজ করছি।
মির্জা ফখরুল বলেন, আমাদের বয়স হয়েছে, আমরা প্রতিনিয়ত মৃত্যুর দিকে ধাবিত হচ্ছি, তাই এদেশকে রক্ষায় তরুণদের এগিয়ে আসতে হবে। এদেশের নির্বাচন ব্যবস্থা ধ্বংস করা হয়েছে। বিচার ব্যবস্থাও একই, এখন আর কেউ ন্যায় বিচার পায় না। আইনশৃংখলা বাহিনী একটি দলের কাছে নির্দেশ মোতাবেক কাজ করে। তাই এ অবস্থা থেকে দেশকে উত্তরণ করতে তরুণদের এগিয়ে আসতে হবে।
উদ্বোধকের বক্তব্যে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক উপাচার্য অধ্যাপক এমাজউদ্দীন আহমদ বলেন, একজন গৃহবধূ থেকে হাল ধরলেন জাতীয়তাবাদী রাজনীতির। তিনি মহীয়সী নারী বেগম খালেদা জিয়া। বাংলাদেশের বর্তমান অবস্থায় বেগম জিয়া স্বাধীনতা সার্বভৌমত্বের প্রতীক।
তিনি বলেন, অত্যন্ত দূর্ভাগ্য তিনি আজ অন্ধকার কারাগারে। রাজনৈতিক প্রতিহিংসার কারণে বিশেষ করে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা একদলীয় শাসন প্রতিষ্ঠার খায়েশ পূরণ করতেই তাকে কারাগারে রাখা হয়েছে।
রাষ্ট্র বিজ্ঞানী এমাজউদ্দীন আহমদ বলেন, এত দু:সময়েও বিএনপি ঐক্যবদ্ধ, এটা বেগম খালেদা জিয়ার নেতৃত্বের কারণে সম্ভব হয়েছে। তিনি বলেন, বিএনপির গতিশীলতা বৃদ্ধির প্রয়োজন, নিজেদের মধ্যে যোগাযোগ বাড়ানো দরকার। এছাড়াও ২০ দলের সাথেও মাসে একবার হলেও বসা উচিত।
ঢাবির সাবেক উপাচার্য বলেন, সারা পৃথিবীতে এখন গণতন্ত্র ধাক্কা খাচ্ছে। দেশে এখন গণতন্ত্র উঠে গেছে। প্রধানমন্ত্রীর মুখেও বাকশাল। আমি যেহেতু একজন শিক্ষক, আমার যদি শিক্ষকতার বয়স থাকতো, তাহলে প্রধানমন্ত্রীকে গণতন্ত্রের বিষয়ে পড়াতাম।
বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য নজরুল ইসলাম খান বলেন, বেগম খালেদা জিয়ার দুর্লভ ছবি প্রমাণ করে, তিনি ছিলেন আপোষহীন। আমরা এখন লড়াইয়ের ময়দানে পেছনে, আমাদের বয়স হয়েছে, আমরা লড়াইয়ে সৈনিকদের সঙ্গে আছি। বেগম জিয়া তাঁর স্বামীর প্রতিষ্ঠিত দল সামলিয়েছেন। আপোষহীন নেতৃত্ব দিয়ে দলকে মানুষের কাছে নিয়ে গেছেন। ৯১ সালে বেগম জিয়ার নেতৃত্বে বিএনপি পুনরায় খুব দ্রুত ক্ষমতায় আসে।
তিনি বলেন, এত নির্যাতনের পরও বিএনপি বড় দল হিসেবে ঠিকে আছে, এটা শুধু সম্ভব হয়েছে বেগম জিয়ার নেতৃত্বের কারণে। কিন্তু একটা ফরমায়েশি রায়ে আজ অন্ধকার কারাগারে তিনি। কিন্তু আমরা তাকে মুক্ত করতে পারছি না। সাহসী যুবকেরা আন্দোলনে নামলে গণতন্ত্র পুনরুদ্ধার হবে। বেগম জিয়া মুক্তি পাবেন।
ন্যাশনাল রিসার্চ সেন্টারের সভাপতি ফটো সাংবাদিক বাবুল তালুকদারের সভাপতিত্বে অন্যান্যের মধ্যে বক্তব্য রাখেন বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান বরকত উল্লাহ বুলু, যুগ্ম মহাসচিব সৈয়দ মোয়াজ্জেম হোসেন আলাল, সাংগঠনিক সম্পাদক এমরান সালেহ প্রিন্স, সহ সাংগঠনিক সম্পাদক শহিদুল ইসলাম বাবুল ও নির্বাহী কমিটির সদস্য ইঞ্জিনিয়ার টিএইচ আইয়ুব প্রমুখ।
আলোকচিত্র প্রদর্শনীর আয়োজন করে ন্যাশনালিস্ট রিসার্চ সেন্টার। প্রদর্শনীতে বিএনপি চেয়ারপারসনের দীর্ঘ আন্দোলন সংগ্রামের নানা দূর্লভ ছবি স্থান পেয়েছে।
এতে স্বাগত বক্তব্য রাখেন সংগঠনের সদস্য আনোয়ার বারী পিন্টু।