খুলনা-৬ সংসদ সদস্য আক্তারুজ্জামান বাবু শনিবার আকস্মিক পাইকগাছা উপজেলার কপিলমুনি ১০ শয্যা সরকারি হাসপাতাল পরিদর্শন করেন। তিনি সেবার মান ও পরিস্কার-পরিচ্ছন্নতা নিয়ে চরম ক্ষোভ প্রকাশ করেন। এ সময় হাসপাতালে উপস্থিত ছিলেন না কোনো চিকিৎসক বা বেডে ভর্তি কোনো রোগী। হাসপাতালে রোগী না থাকার পিছনে রয়েছে অসংখ্য অভিযোগ। একপ্রকার সব শূন্য অবস্থায় আউট ডোরে কোনো রকমে রোগী দেখে চলছে হাসপাতালটি।
জানা গেছে, প্রতিষ্ঠার পর ৯৩ বছর পার করে ৯৪-তে পা রেখেছে কপিলমুনি সরকারি হাসপাতালটি, বর্তমানে প্রতিষ্ঠানটি নিজেই রুগ্ন। জনবল সংকট আর অবকাঠামো ভেঙ্গে পড়লেও কেউ খোঁজ নেয়নি চির অবহেলিত এ হাসপাতালটি। পাইকগাছা, কয়রা ও তালা থানার লাখ লাখ মানুষ সে সময় ছিল সুচিকিৎসা থেকে বঞ্চিত। তাই বৃহৎ এই কয়’টি থানার অসংখ্য মানুষের সুচিকিৎসার কথা ভেবে কপিলমুনির প্রয়াত দানবীর রায় সাহেব বিনোদ বিহারী সাধু ১৯২৫ সালের ৭এপ্রিল ৩একর জমিতে প্রতিষ্ঠা করেন ২০ শয্যা ভরত চন্দ্র হাসপাতাল। হাসপাতালটি তৈরির সময় অনেকাংশে মার্বেল পাথর স্থাপন করা হয়। ভবনটি দেখতে যেন সুরম্য অট্টালিকা। স্থাপন করা হয় ডিসপেনসারী কক্ষ, কলেরা ওয়ার্ড, কর্মচারী কোয়ার্টার, ডাক্তারদের আবাসিক ভবন, লাশ রাখার ঘর, শৌচাগার, অপারেশন থিয়েটার, ডেলিভারী কক্ষসহ লোহার তৈরি ঘোরানো পেঁচানো সিঁড়ি, বৃহৎ একটি পুকুর, সীমানা প্রাচীরসহ কোলকাতা থেকে আনা আধুনিক যন্ত্রপাতি। যার অনেক কিছুই এখন নষ্ট হয়ে গেছে, আধুনিক সেই সব যন্ত্রপাতি হাসপাতালটিতে এখন আর চোখে পড়েনা। হাসপাতালের সীমানা প্রাচীরের একটা অংশ ভেঙ্গে গেছে। পার্শ্ববর্তী এলাকার কতিপয় মানুষ হাসপাতাল চত্ত্বরটি যেন গোচারণ ভূমিতে পরিণত করেছে।
দানবীর রায় সাহেব বিনোদ বিহারী সাধু কর্তৃক প্রতিষ্ঠিত ২০শয্যার হাসপাতালটি ১৯৭১ সালে সরকারি করণের সময় প্রতিষ্ঠাতার দেয়া নাম পরিবর্তন করে নামকরণ করা হয় কপিলমুনি ১০ শয্যা সরকারি হাসপাতাল। প্রতিষ্ঠার পর থেকে কয়েক বার সরকার ও স্থানীয় নেতৃত্বের পরিবর্তন আসলেও কপিলমুনি হাসপাতালটির উন্নয়ন হয়নি। বিভিন্ন সময় মন্ত্রী-এমপিরা উন্নয়নের প্রতিশ্রুতি দিলেও তা এখনো বাস্তবায়নের অপেক্ষায়। সর্বশেষ পাইকগাছা-কয়রা এমপি আক্তারুজ্জামান বাবু শনিবার সকাল ৮টায় নির্বাচনী এলাকার প্রবেশদারে কপিলমুনি ১০ শয্যা সরকারি হাসপাতালটি আকস্মিক পরিদর্শন করেন। সরকারি সেবা প্রদানকারী প্রতিষ্ঠান এলাকার মানুষকে কতটা সেবা দিচ্ছেন তা নিজের চোখে ঘুরে ঘুরে দেখেন। পরিদর্শন শেষে তিনি সেবার মান ও পরিস্কার-পরিচ্ছন্নতা নিয়ে চরম ক্ষোভ প্রকাশ করেন।
সংসদ সদস্য আক্তারুজ্জামান বাবু এফএনএসকে বলেন, আকস্মিক হাসপাতাল পরিদর্শনে গিয়ে কোনো মেডিকেল অফিসারকে কর্মস্থলে পাইনি। সবচেয়ে পরিতাপের বিষয় ১০ শয্যা হাসপাতালে কোনো আসন শূন্য থাকার কথা নয়। অথচ সেবার মান এতটাই নিন্মগামী যে হাসপাতালের সব আসন গুলোই রোগী ছাড়াই ফাঁকা পড়ে রয়েছে। এ ছাড়া পরিস্কার পরিচ্ছন্নতার ক্ষেত্রেও উদাসীন রয়েছে হাসপাতালে কর্মরতরা। এভাবে একটি সরকারি প্রতিষ্ঠানের সেবা কার্যক্রম চলতে পারে না। পরিদর্শন শেষে তিনি হাসপাতালে কর্মরত সহ ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে কর্মক্ষেত্রে আরো বেশি দায়িত্বশীল হওয়ার কথা বলেন।
এ প্রসঙ্গে উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডা. এএসএম মারুফ হাসান এফএনএসকে জানান, এমপি মহোদয় সকালে ফোন করে বিষয়গুলো আমাকে বলেছে, মূলত কপিলমুনি ১০ শয্যা হাসপাতালে ২টি পদের বিপরীতে ১জন ডাক্তার কর্মরত রয়েছে। জরুরী বিভাগের জন্য আলাদা কোনো ডাক্তার নাই। যার ফলে নিয়মনুযায়ী সকাল ৯টার সময় ডাক্তারের উপস্থিতি থাকার কথা। কিন্তু এমপি মহোদয় সকাল ৮টার দিকে যখন গিয়েছিলেন তখন ডাক্তারকে পাননি।