পাবনার চাটমোহর উপজেলার আনকুটিয়া গ্রামের নঈম উদ্দিন সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়টি এখন ‘পারিবারিক স্কুল’ নামে পরিচিত। এই স্কুলে প্রধান শিক্ষক,তার স্ত্রী-শ্যালিকা এবং স্কুল পরিচালনা কমিটির সভাপতি ও সদস্যসহ রয়েছেন একই পরিবারের পাঁচজন। এতে নানা অনিয়মের আখড়ায় পরিণত হয়েছে স্কুলটি। প্রধান শিক্ষকের অনিয়মের বিরুদ্ধে ওই স্কুলের এক সহকারী শিক্ষক মুখ খুলে সেই পাঁচ জনের রোষানলে পড়েন। উল্টো তাকেই বদলী নিতে অন্য স্কুলে চলে যেতে হয়। অতিসম্প্রতি সেই স্কুল থেকে প্রধান শিক্ষক বদলি হলেও এক সপ্তাহের মাথায় অজ্ঞাত কারণে সেই আদেশ বাতিল হয়। বদলী ঠেকিয়ে বহাল তবিয়তে আছেন প্রধান শিক্ষক। এতে অভিভাবকসহ এলাকাবাসীর মধ্যে ক্ষোভ বিরাজ করছে। খোদ উপজেলা শিক্ষা কর্মকর্তাও আশ্চর্য হয়েছেন।
জানা গেছে,উপজেলার মথুরাপুর ইউনিয়নের আনকুটিয়া গ্রামে ১৯৯১ সালে প্রতিষ্ঠিত নঈম উদ্দিন বেসরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়টি ২০১৩ সালে সরকারীকরণ হয়। স্কুলের শুরু থেকেই প্রধান শিক্ষক হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন ওই গ্রামের বাসিন্দা মো. মোজাম্মেল হক। একই স্কুলে সহকারী শিক্ষক হিসেবে কর্মরত রয়েছেন প্রধান শিক্ষকের স্ত্রী নাদিরা পারভীন ও শ্যালিকা নাজমুন্নাহার। এছাড়া স্কুল পরিচালনা কমিটির সভাপতি প্রধান শিক্ষকের সমন্ধি বজলুল হক সুশান এবং সমন্ধি বৌ সুলতানা জাহান ওই কমিটির সদস্য। অভিযোগ রয়েছে,একই পরিবারের পাঁচজন ওই স্কুলে থাকায় ইচ্ছে মতো স্কুলে আসেন প্রধান শিক্ষকের স্ত্রী ও শ্যালিকা। মাঝে মধ্যেই স্কুল ফাঁকি দেন তারা। তবে স্কুলে না এলেও হাজিরা খাতায় স্বাক্ষর করিয়ে নেন এবং বাড়িতে বসেই নানা বিষয়ে রেজুলেশন তৈরি করেন তারা।
এরআগে প্রধান শিক্ষক মোজাম্মেল হকের বিরুদ্ধে স্লিপ ফান্ডের টাকা তছরুপ,বিনামূল্যে বই বিতরণে অর্থ আদায়,বিদ্যালয়ের ফল-ফলাদী বিক্রির টাকা নিজে ভোগ করা,স্কুলের পুরাতন টিন এনজিওকে ভাড়া দেয়াসহ নানা অভিযোগ এনে তৎকালীন সহকারী শিক্ষক রাশেদুল ইসলাম অভিযোগ দিলে প্রধান শিক্ষকসহ অন্যদের রোষানলে পড়েন তিনি। পরে চাপে পড়ে স্বেচ্ছায় অনত্র বদলি নিতে বাধ্য হন রাশেদুল ইসলাম।
সম্প্রতি উপজেলা শিক্ষা অফিসার আশরাফুল ইসলাম স্কুল পরিদর্শনে গিয়ে নির্ধারিত সময়ের আগেই স্কুল ছুটি দেয়া,স্কুলে চেয়ারে বসে প্রধান শিক্ষককে ঘুমাতে দেখেন। এছাড়া তার স্ত্রী নাদিরা পারভীনকে অনুপস্থিত পান। পরে তিনি মোজাম্মেল হককে কারণ দর্শানোর নোটিশ দেন এবং ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের কাছে তার বদলীর সুপারিশ করেন। এরপর চলতি মাসের ৭ মার্চ প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তরের রাজশাহী বিভাগীয় উপ-পরিচালক আবুল কালাম আজাদ প্রধান শিক্ষক মোজম্মেল হককে একই উপজেলার চিনাভাতকুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে বদলীর আদেশ দেন। যার স্মারক নং- ডিডি/প্রাই/রাবিরা/শিক্ষক বদলী/এফ/১২৩৮/৭। কিন্তু এক সপ্তাহের মাথায় গত ১৫ মার্চ অজ্ঞাত কারণে সেই বদলী আদেশ বাতিল করা হয়। যার স্মারক নং-ডিডি/প্রাই/রাবিরা/এফ-বদলী-পাবনা/১৯/১২৭৩/৪। আর বদলীর আদেশ বাতিল হওয়ায় খোদ উপজেলা শিক্ষা কর্মকর্তাও আশ্চর্য হন।
এ ব্যাপারে জানতে চাইলে প্রধান শিক্ষক মো.মোজাম্মেল হক জানান,‘আমি শুনেছিলাম আমার বদলী হয়েছে। পরে আবার শুনলাম বাতিলও হয়েছে। কিন্তু কোন আদেশ পত্রই আমি হাতে পাইনি।’
বিষয়টি নিয়ে জানতে চেয়ে উপজেলা শিক্ষা অফিসার আশরাফুল ইসলাম বলেন,‘প্রধান শিক্ষক মোজাম্মেল হককে বারবার বদলীর আদেশের কাগজ দিতে চেয়েছি কিন্তু উনি তা গ্রহণ করেননি। এরআগে তার বিরুদ্ধে নানা অনিয়মের অভিযোগ তদন্ত হয়েছে। সেই তদন্তে বেশ কিছু বিষয়ে তিনি অভিযুক্ত হয়েছেন। এছাড়া স্কুল পরিদর্শনে গিয়ে নানা অনিয়ম পেয়েছি। সম্প্রতি তার বদলীর আদেশ হওয়ার পরেও তিনি (প্রধান শিক্ষক) তদবির করে তা বাতিল করিয়েছেন।’
এ ব্যাপারে পাবনা জেলা শিক্ষা অফিসার খন্দকার মনসুর রহমান সাংবাদিকদের বলেন,‘আমি জেলায় নতুন এসেছি। তিনি (প্রধান শিক্ষক) অসুস্থ বলে বদলী না করতে আবেদন করেন। পরে তার বদলী আদেশ বাতিল হয়েছে। এছাড়া স্কুল পরিচালনা কমিটিতে কে মনোনয়ন নিচ্ছে এই ব্যাপারটা এরআগে লক্ষ্য করলে স্কুলটি পরিবারতান্ত্রিক স্কুলে পরিণত হতো না। তবে যেহেতু কথা উঠেছে সেহেতু নতুন করে তার বদলীর ব্যাপারে চিন্তা ভাবনা করা হবে।’