দীর্ঘ দুই বছর পর লালমনিরহাট জেলা বিএনপির নবগঠিত পূর্ণাঙ্গ কমিটির তালিকা প্রকাশ করা হয়েছে। এতে অনেকে কাঙ্খিত এবং সম্মসানিত পদ না পাওয়ায় ৮জন নেতা পদত্যাগ করেছেন। তাদের অভিযোগ- কমিটিতে যোগ্য নেতাদের মূল্যায়ন না করে সুবিধাবাদীদের পদায়ন করা হয়েছে। এতে নেতাদের আত্মসম্মানে আঘাত হানা হয়েছে, যার কারণে তারা পদত্যাগ করেছেন। ইতিমধ্যে তাদের পদত্যাগপত্র সভাপতি বরাবরে পেশ করা হয়েছে।
জানা গেছে, কয়েকদিন আগে লালমনিরহাট জেলার মিশন মোড়ে নবজীবন সেন্টারে নবগঠিত জেলা বিএনপি কমিটির এক পরিচিতি সভার আয়োজন করা হয়। সভায় কমিটিতে কে কোন পদ পেয়েছেন, বিষয়টি জানাজানি হলে অনেকে কাঙ্খিত পদ না পেয়ে ওই পরিচিতি সভাতেই পদত্যাগ করেন।
এছাড়া, লালমনিরহাট জেলা বিএনপির প্রতিষ্ঠাতা সদস্য ও সাবেক সাধারণ সম্পাদক বর্তমান নবগঠিত কমিটিতে উপদেষ্টামন্ডলীর অন্যতম সদস্য সালেহ উদ্দিন আহমেদ হেলালসহ অনেকেই পরিচিতি সভা বয়কট করেন। তবে হেলাল নবগঠিত কমিটির বিষয়ে ক্ষুব্ধ প্রতিক্রিয়া দেখালেও প্রকাশ্যে তা কোন গণমাধ্যমে কোনও মন্তব্য করতে রাজি হননি।
জেলা বিএনপির সভাপতি আসাদুল হাবিব দুলুর বিরুদ্ধে স্বজনপ্রীতি ও দুর্নীতির অভিযোগ তুলে প্রতিবাদ হিসেবে নবগঠিত কমিটির সহ-যুব বিষয়ক সম্পাদক পদ থেকে পদত্যাগ করেছেন জেলা ছাত্রদলের সাবেক সভাপতি মফিজুর রহমান জিএস বাবু, শ্রম বিষয়ক সম্পাদকের পদ থেকে পদত্যাগ করেছেন জেলা শ্রমিক দলের বর্তমান কমিটির সভাপতি ওমর ফারুক বাবলু, সহ-শ্রম বিষয়ক সম্পাদক পদ থেকে পদত্যাগ করেছেন একই সংগঠনের যুগ্ম সম্পাদক জালাল উদ্দিন, নির্বাহী সদস্যের পদ থেকে পদত্যাগ করেছেন লালমনিরহাট পৌর যুবদলের সাবেক সাধারণ সম্পাদক সাইদুল ইসলাম, নির্বাহী সদস্যের পদ থেকে পদত্যাগ করেছেন জেলা বিএনপিন সদস্য (নরসিংদি) আবুল কাশেম।
এছাড়া, কমিটির তথ্য ও প্রযুক্তি বিষয়ক সম্পাদক পদ ও বিএনপির সব কর্মকান্ড থেকে অব্যাহতি নেন জেলা ছাত্রদলের সাবেক সহ-সভাপতি আবুল বাশার সুমন, নির্বাহী সদস্য পদ ও বিএনপির সব কর্মকান্ড থেকে অব্যাহতি নেন জেলা ছাত্রদলের সাবেক সিনিয়র সহ-সভাপতি মোয়াজ্জেম রেজা রুবেল এবং নির্বাহী সদস্য পদ ও জেলা ছাত্রদলের সাবেক সহ-সভাপতি মমিনুল ইসলাম।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে অনেক নেতাকর্মী জানিয়েছেন, নবগঠিত কমিটি থেকে আরও কিছু নেতা পদত্যাগ ও নিষ্ক্রিয় হতে পারেন। এই তালিকা দীর্ঘ হতে পারে। বিএনপি দলীয় সূত্রের দাবি, কমিটিতে যোগ্য নেতাদের মূল্যায়ন না করে বরং জাতীয় পার্টি থেকে বিএনপিতে আসা অনেককে পদ দেওয়া হয়েছে।
অন্যদিকে, সিনিয়র ও ত্যাগী নেতাদের ডিঙিয়ে জেলা সভাপতি তার নিজের স্ত্রী লায়লা হাবিবকে সিনিয়র সহ-সভাপতি করায় নেতাকর্মীদের মধ্যে চরম ক্ষোভ বিরাজ করছে। যেকোনও মুহূর্তে নতুন কমিটিকে কেন্দ্র করে বড় ধরনের সংঘাত হতে পারে।
জেলা ছাত্রদলের সাবেক সভাপতি মফিজুর রহমান (জিএস বাবু) বলেন, বিএনপিকে ধ্বংস করতে সংস্কারপন্থীদের যোগসাজশে একটি গোষ্ঠী নবগঠিত জেলা বিএনপির কমিটিতে ত্যাগী, মামলা-হামলা, জেল-জুলুমের শিকার হওয়া নেতাদের মূল্যায়ন না করে সুবিধাবাদীদের পদায়ন করা হয়েছে। বিষয়টি ত্যাগী নেতাদের আত্মসম্মানে আঘাত করায় আমিসহ অনেকে নবগঠিত কমিটির পদ থেকে পদত্যাগ করেছি এবং পদত্যাগপত্র সম্পাদক বরাবরে জমা দিয়েছি। তার মতো আরো অনেকে এই কমিটি থেকে পদত্যাগ করবেন বলেও জানান তিনি।
জেলা শ্রমিক দলের যুগ্ম সম্পাদক জালাল উদ্দিন বলেন, গত ২ মে নবজীবন সেন্টারে জেলা বিএনপির নবগঠিত কমিটির পরিচিতি সভার একটি চিঠি পাই। সেখানেই তখন জানতে পারি, তাকে জেলা বিএনপির সহ-শ্রম বিষয়ক সম্পাদক পদে মনোনীত করা হয়েছে, যা আমার রাজনৈতিক জীবনের দীর্ঘ পরিক্রমায় একটি কলঙ্কময় অধ্যায় রচিত হয়েছে। এজন্য আমি স্বেচ্ছায় এবং সুস্থ মস্তিষ্কে ওই পদ থেকে পদত্যাগ করেছি।
জেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক হাফিজুর রহমান পদত্যাগপত্র পাওয়ার সত্যতা স্বীকার কওে বলেন, অনেকের পদত্যাগের কথা জানতে বা শুনতে পারলেও তিনি মাত্র ৫জনের পদত্যাগপত্র পেয়েছে। কিন্তু তিনি লায়লা হাবিবকে ‘সিনিয়র সহ-সভাপতি’ করার ব্যাপারে কোনও মন্তব্য করেননি। তিনি বলেছেন, যেভাবে পুর্নাঙ্গ কমিটি হয়েছে তাতে তার হাত নেই। তিনি শুধু স্বাক্ষর করেছেন মাত্র।
লালমনিরহাট জেলা বিএনপির সভাপতি ও কেন্দ্রীয় কার্যনির্বাহী কমিটির সাংগঠনিক সম্পাদক আসাদুল হাবিব দুলু বলেন, কমিটি প্রকাশ পাওয়ার পর পরই অনেকে পদত্যাগ করেছে এ রকম ঘটনা শুনেছি আমি। এখনও আমার হাতে কোন কাগজ পাইনি। আমি ঢাকায় এসেছি মিটিংয়ের পরের দিনে। অনেকের ধারণা, হয়তো তারা তাদের কাঙ্খিত পদ পাননি। একেক জনের ধারণা একেক রকম। আমি এই পদের উপযুক্ত। অন্য কেউ কতটুকু সেই পদের জন্য উপযুক্ত, সেটা তো অনেক কিছু বিচার-বিশ্লেষণের বিষয় আছে। সুতরাং গণতান্ত্রিক রীতিতে তার অধিকার আছে প্রত্যাখান করার।
‘এক নেতার এক পদ’ ও স্ত্রী লায়লা হাবিবকে জেলা বিএনপির ‘সিনিয়র সহ-সভাপতি’ করা প্রসঙ্গে জানতে চাইলে তিনি আরও বলেন, আমাদের গঠনতন্ত্রে এক নেতা এক পদের কথা কি কোথাও উল্লেখ আছে? সেটার কথা তো আপনারাই লেখেন না। তবে স্ত্রী লায়লা হাবিব কিভাবে সিনিয়র সহ সভাপতির পদ পেলো এ প্রসঙ্গে তিনি কোনও মন্তব্য করতে রাজি হননি।
উল্লেখ্য, ২০১৭ সালের ২৫ মে লালমনিরহাট জেলা পরিষদ মিলনায়তনে জেলা বিএনপির ত্রিবার্ষিক কাউন্সিলে প্রধান অথিতির বক্তব্য শেষে বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর সাবেক উপমন্ত্রী অধ্যক্ষ আসাদুল হাবিব দুলুকে সভাপতি ও হাফিজুর রহমান বাবলাকে সাধারণ সম্পাদক পদে পুনরায় নাম ঘোষণা করেন। এরপর দীর্ঘ দুবছর পর গত ১৮ মার্চ পূর্ণাঙ্গ কমিটি অনুমোদন পেলেও গত ১৪ মে আনুষ্ঠানিকভাবে তা প্রকাশ করা হয়।