ঝিনাইদহ কালীগঞ্জে নেতৃত্ব সংকটে বিএনপির সকল সাংগঠনিক কার্যক্রম প্রায় বন্ধের পথে। দ্বিধাবিভক্ত নেতৃত্বের যাতাকলে পৃষ্ট তৃণমূল নেতা-কর্মীরা ঝিমিয়ে পড়েছে। বর্তমান সময়ে কেন্দ্র ঘোষিত সরকার বিরোধী আন্দোলন না থাকায় উপজেলায় বিএনপির উভয় গ্রুপের সাংগাঠনিক তৎপরতা চোখে পড়ছেনা। উপজেলা নেতৃবৃন্দ দলের মান উন্নয়নে নিয়মিত সাংগাঠনিক কার্যক্রম চালিয়ে যাওয়া থেকেও বিরত রয়েছেন। ফলে সরকার দলীয় নেতাকর্মীরা বেশ খোশ মেজাজে তাদের সংাগাঠনিক কার্যক্রম নিরাপদে চালিয়ে যাচ্ছে। এ সুযোগে আওয়ামীলীগ বিএনপির অঙ্গ সংগঠনের কর্মী-সমর্থকদের দলে ভিড়াচ্ছে। এতে দিন দিন আওয়ামীলীগের রাজনৈতিক অবস্থা ক্রমান্বয়ে সূদৃঢ় হচ্ছে এবং এক সময়কার বিএনপির ঘাটি হিসেবে পরিচিত কালীগঞ্জে বিএনপির সাংগাঠনিক ভীত ক্রমান্বয়ে দূর্বল হয়ে পড়ছে।
১৯৭৮ সালে বাহাউল ইসলামের নেতৃত্বে ঝিনাইদহ কালীগঞ্জে বিএনপির কমিটি গঠন করা হয়। বিএনপির প্রতিষ্ঠাতা সভাপতি হিসেবে বাহাউল ইসলাম ও সাধারণ সম্পাদক রেজাউল করিম শরুতেই এক ঝাঁক তুখোড় ছাত্র নেতা পেয়ে যান। সেসময় উপজেলার বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে ছাত্রদল একক আধিপত্য বিস্তার লাভ করায় দলের সাংগাঠনিক কার্যক্রম খুব দ্রুত বিস্তার লাভ করে। ছাত্রদলের প্রতিষ্ঠাতা সভাপতি আয়নাল হাসানের তুখোড় নেতৃত্বে শহর থেকে গ্রামাঞ্চলের প্রতিষ্ঠান গুলোতে ছাত্রদলের একছত্র আধিপত্য প্রতিষ্ঠিত হয়। বিএনপির সেই সোনালী যুগের ছাত্র নেতাদের মধ্যে ছিলেন, ফরিদ উদ্দিন, মোস্তফা জলিল, আশরাফুজ্জামান লাল, লুৎফর রহমান লেন্টু, ওয়াসিকুল ইসলাম আজাদ, শাহজাহান আলী সাজু, আব্দুল খালেক, আব্দুল হাই মিন্টু প্রমূখ।
১৯৭৯ সালের জাতীয় সংসদ নির্বাচনে এ আসনে বিএনপির প্রথম এমপি নির্বাচিত হন ইবাদৎ হোসেন মন্ডল। তার নেতৃত্বে উপজেলায় বিএনপির সাংগাঠনিক কার্যক্রম ব্যপক ভাবে বিস্তার লাভ করে। এরপর ১৯৭৯ সালে ইবাদৎ হোসেন মন্ডল জাতীয় পার্টিতে যোগদানের পরে বিএনপির হাল ধরেন, সাবেক ছাত্র নেতা আয়নাল হাসান। তাকে সর্বত্মক সহযোগিতা করেন বিএনপি নেতা আব্দুস ছামাদ, তবিবর রহমান মিনি, আব্দুল গাফ্ফার, মরহুম বিষু মিয়া, নজরুল ইসলাম প্রমূখ । নতুন নেতৃত্বে বিএনপির মধ্যে আরো বেশি প্রাণ সঞ্চার হয়। এরপর ১৯৯১ সালে শহীদুজ্জামান বেল্টু বিএনপি থেকে এ আসনে এমপি নির্বাচিত হন। এরপর তিনি চার বার এমপি নির্বাচিত হন। দীর্ঘ সময় তিনি এ আসনে এমপি থাকায় বিভিন্ন কারণে অনেক ত্যাগী নেতারা তার উপর ক্ষুব্ধ হন। এরই জের হিসেবে ২০০৯ সালে এ আসন বিএনপি হারায়। তবে খুব অল্প ভোটের ব্যবধানে আওয়ালীগ জয়ী হয়। এ পরাজয়ের পেছনে আভ্যন্তরীন কোন্দলই ছিল মূখ্য। কালীগঞ্জে এখন বিএনপি দুইভাগে বিভক্ত। একটি গ্রুপের নেতৃত্ব দিচ্ছেন সাবেক এমপি শহীদুজ্জামান বেল্টু, অন্যগ্রুপের নেতৃত্বে আছেন সাইফুল ইসলাম ফিরোজ। আভ্যন্তরীন কোন্দলের কারণে দিন দিনকে দিন দলের সাংগাঠনিক শক্তি দূর্বল হয়ে পড়ছে। এছাড়া দীর্ঘ সময় বিএনপি ক্ষমতার বাইরে থাকায় ক্রমান্বয়ে সাংগাঠনিক কার্যক্রমে ভাটা পড়ছে। দলের মধ্যে আভ্যন্তরীণ কোন্দল থাকায় বিএনপির অনেক নেতা-কর্মী আওয়ামীলীগের দিকে ঝুঁকে পড়ছে।
এদিকে বিএনপির মধ্যে দীর্ঘ সময় ধরে চলমান কোন্দলের সুযোগকে কাজে লাগিয়ে আওয়ামীলীগ তাদের সাংগাঠনিক কার্যক্রমের বিস্তৃতি ঘটাতে শুরু করে। আওয়ামীলীগের বর্তমান সাংসদ আনোয়ারুল আজীম আনার এমপি নির্বাচিত হওয়ার পর থেকে তার প্রতি আস্থা রেখে বিএনপির বিভিন্ন অঙ্গ সংগঠনের নেতা-কর্মীরা স্বতঃফূর্তভাবে আওয়ামীলীগে যোগদান করছে। বিশেষ করে বেল্টু গ্রুপের কর্মীরা একে বাইরেই শুন্য কোঠায় এস দাড়িয়েছে। হাতে গোনা কয়েকজন পুরাতন লোকজন বেল্টুর পক্ষে রয়েছে। বর্তমানে কেন্দ্রীয় ছাত্রনেতা ফিরোজের পক্ষে কালীগঞ্জের বিএনপি এখন নির্ভরশীল হয়ে দাড়িয়েছে। পুরাতন নেতা কর্মীরা এখন ফিরোজের সাথে রয়েছে। বর্তমানে কিছু জাতীয় দিবস গুলি ফিরোজ তার পক্ষীয় লোকজন নিয়ে পালন করে থাকে। গত ২৬ মার্চ দিবসটি পালন করেছে। কিন্তু বেল্টু পক্ষের কার ও কোন খোজ নেই।
এ ব্যাপারে থানা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক আয়নাল হাসান জানান, কেন্দ্র ঘোষিত সকল প্রকার কার্যক্রম অব্যহত ভাবে পালন করা হচ্ছে। তিনি দলের মধ্যে গ্রুপিং এর কথা অস্বীকার করেন।