জেলার আগৈলঝাড়া উপজেলা সদরের একমাত্র সরকারী শহীদ আব্দুর রব সেরনিয়াবাত ডিগ্রী কলেজে অধ্যক্ষ, উপাধ্যক্ষ, বাংলা বিভাগসহ আটজন শিক্ষকের পদ শূন্য থাকায় দীর্ঘদিন থেকে শিক্ষার্থীদের পাঠদান ব্যহত হচ্ছে। অধ্যক্ষসহ শূণ্যপদে শিক্ষক প্রদানের মাধ্যমে শিক্ষার্থীদের স্বাভাবিক শিক্ষা জীবন ফিরিয়ে দিতে উচ্চ মাধ্যমিক শিক্ষা ডিজির আশু হস্তক্ষেপ কামনা করেছেন শিক্ষার্থী, শিক্ষক ও অভিভাবকরা।
সংশ্লিষ্ট কলেজ সূত্রে জানা গেছে, কলেজ জাতীয় করণ ঘোষণার কারনে শিক্ষকদের শূন্য পদের বিপরীতে কলেজ কর্তৃপক্ষ আইনী বাধ্যবাধকতার কারণে শিক্ষক নিয়োগ করতে না পারায় নতুন শিক্ষাবর্ষে একাদশ শ্রেণিতে শিক্ষার্থী ভর্তিতে অভিভাবকদের দেখা দিয়েছে চরম অনীহা। তারা সহ¯্রাধিক শিক্ষার্থীর শিক্ষা জীবন নিয়ে চরম হতাশার মধ্যে রয়েছেন।
কলেজের ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ মোঃ মোবারক হোসেন জানান, প্রয়াত অধ্যক্ষ রমেশ চন্দ্র সাহা ২০০৯ সালের ১৪ জুলাই অবসরে যাওয়ার পর থেকে গত ১০ বছর যাবত কলেজে অধ্যক্ষর পদ শূন্য রয়েছে। উপাধ্যক্ষ এসএম হেমায়েত উদ্দিন ওইবছরের ১৫ জুলাই ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষর দায়িত্ব পালন শেষে আট বছর পর ২০১৬ সালের ১৯জুন অবসরগ্রহন করেন। সেই থেকে অধ্যক্ষ ও উপাধ্যক্ষর পদ শূন্য রয়েছে।
হেমায়েত উদ্দিনের অবসরের পর বিকাশ চন্দ্র বিশ্বাস ওইবছরের ২০ জুন ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষর দ্বায়িত্ব গ্রহন করেন। তিনি ২০১৭ সালের ১ জানুয়ারি অবসরগ্রহন করেন। ওইবছরের ২ জানুয়ারি বাংলা বিভাগের সিনিয়র শিক্ষক কমলা রানী মন্ডল ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষর দায়িত্ব পালন শেষে চলতি বছরের ২৭ এপ্রিল তিনিও অবসরগ্রহন করেছেন। কমলা রানী মন্ডলের পর গত ২৮এপ্রিল ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষর দায়িত্ব পান রাষ্ট্র বিজ্ঞানের সিনিয়র শিক্ষক মোবারক হোসেন। তিনিও আগামী ১৪ জুন অবসরগ্রহন করবেন।
কলেজ সূত্রে জানা গেছে, বর্তমানে প্রায় ১৩শ’ ৬৫জন শিক্ষার্থী কলেজে অধ্যয়নরত রয়েছে। কলেজের জেনারেল শাখায় ২৬জন শিক্ষক, অফিস সহায়কসহ নয়জন নিয়মিত কর্মচারী ও মাষ্টার রোলে নয়জন কর্মচারী থাকলেও পাঠদানের প্রধান শাখাগুলো রয়েছে শিক্ষক শূন্য। এরমধ্যে অধ্যক্ষ, উপাধ্যক্ষ, বাংলা, পদার্থ বিদ্যা, জীব বিদ্যা, সমাজ বিজ্ঞান, দর্শণ ও ইতিহাস বিভাগসহ মোট আটটি গুরুত্বপূর্ণ পদ শূন্য রয়েছে।
সূত্রে আরও জানা গেছে, কলেজটিতে একসময়ে শিক্ষার্থীদের ভর্তির চাঁপের কারণে বোর্ড থেকে মানবিক শাখায় বাড়তি কোটা অনুমোদন করে। বর্তমানে দেড়শ’ শিক্ষার্থীর বিপরীতে আড়াইশ’ কোটা রয়েছে। বিজ্ঞান ও বানিজ্য বিভাগে দেড়শ’ শিক্ষার্থীর কোটা থাকলেও শিক্ষক স্বল্পতার কারনে এবছর ভর্তিচ্ছুক শিক্ষার্থী দিয়ে কোটা পুরণ করা যাবে না বলে আশংকা প্রকাশ করছেন কলেজ কর্তৃপক্ষ।
সূত্রমতে, ১৯৯৮ সালের ১০ মে শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের অনুমতিক্রমে কলেজের নামকরণ করা হয় “শহীদ আব্দুর রব সেরনিয়াবাত ডিগ্রী কলেজ।” ২০১৮ সালের ৮আগস্ট প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা তার ফুফা ১৫ আগস্ট ভয়াল কাল রাতে ঘাতকের নির্মম বুলেটে নিহত শহীদ আব্দুর রব সেরনিয়াবাতের নামের কলেজটিকে জাতীয় করণের অনুমতি প্রদান করেন। ফলশ্রুতিতে আগৈলঝাড়া উপজেলাবাসীর দীর্ঘদিনের স্বপ্ন পুরণ হলেও এরইমধ্যে অবসরে যাওয়া শিক্ষকদের শূন্যপদে আইনী জটিলতার কারণে শিক্ষক নিয়োগ দিতে না পারায় শিক্ষার্থীদের প্রতিনিয়ত পাঠদান চরমভাবে ব্যহত হয়ে আসছে।
সংশ্লিষ্ট কলেজ ও স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, এক সময়ের বিলাঞ্চল বলেখ্যাত আগৈলঝাড়া উপজেলাবাসীকে সু-শিক্ষায় শিক্ষিত করতে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের বোনজামাতা সাবেক মন্ত্রী ও বর্তমান মন্ত্রী পদ মর্যাদায় পার্বত্য শান্তি চুক্তি বাস্তবায়ন কমিটির আহবায়ক আবুল হাসানাত আব্দুল্লাহ এমপি’র বাবা আব্দুর রব সেরনিয়াবাতের ঐক্লান্তিক প্রচেষ্টায় ১৯৭২ সালে “বাংলাদেশ মহাবিদ্যালয়” নামে বর্তমান শহীদ আব্দুর রব সেরনিয়াবাত ডিগ্রী কলেজটি প্রতিষ্ঠা করা হয়। প্রতিষ্ঠার দুইবছর পর ১৯৭৪ সালে কলেজটি সরকারী মঞ্জুরী প্রাপ্ত হয়।
১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট দেশে ঘাতকদের ক্যুর মাধ্যমে রাজনৈতিক পট পরিবর্তনের সাথে সাথে কলেজটির নাম পরিবর্তন করে রাখা হয় “আগৈলঝাড়া মহাবিদ্যালয়।” ১৯৮২ সালে সরকার পরিবর্তনের পর পুনরায় কলেজটি সরকারীকরণের আশায় নাম পরিবর্তন করে রাখা হয় “পল্লীবন্ধু এরশাদ কলেজ”। এরশাদের পতনের রাতে পূর্বের নাম মুছে দিয়ে কলেজের নামকরণ হয় “আগৈলঝাড়া ডিগ্রী কলেজ”। ৮৪-৮৫ সালে জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের অনুমতিক্রমে কলেজটিতে ডিগ্রী কোর্স চালু করা হয়।
কলেজ পরিচালনা কমিটির সভাপতির দায়িত্বে থাকা জেলা প্রশাসকের প্রতিনিধি উপজেলা নির্বাহী অফিসার বিপুল চন্দ্র দাস শিক্ষক শূন্যতার কারনে লেখাপড়া ব্যহত হওয়ার সত্যতা স্বীকার করে বলেন, জরুরীভাবে অধ্যক্ষ নিয়োগের জন্য তিনি প্রায় দুই মাস আগে ডিজিকে (মাধ্যমিক উচ্চ শিক্ষা) পত্র প্রেরণ করেছেন।
স্থানীয় সংসদ সদস্য মন্ত্রী পদ মর্যাদায় পার্বত্য শান্তি চুক্তি বাস্তবায়ন কমিটির আহবায়ক আবুল হাসানাত আব্দুল্লাহর বরাত দিয়ে তার একান্ত সচিব মোঃ খায়রুল বাশার জানান, খুব শীঘ্রই ডিজি’র মাধ্যমে শিক্ষক নিয়োগ প্রদানের ব্যবস্থা গ্রহন করা হবে।