লালমনিরহাটে খাদ্য বিভাগের কর্মকর্তা-কর্মচারীদের চলছে দুনীতির মহোউৎসব। কৃষকের নামে সরকারী গোডাউনে ধান দিচ্ছে ধনী ব্যাক্তিরা। ধানের ন্যায্য মুল্য না পেয়ে চোখের জল পড়ছে কৃষকের। কিন্তু পকেটে টাকা ভরছে খাদ্য বিভাগের কর্মকর্তাদের। এদিকে ঋনের দায়ে পালিয়ে বেডাচ্ছের অনেক কৃষক।
লালমনিরহাটে সরকারী ভাবে ধান ক্রয় শুরুর নামে চলছে নানান নাটকীয়তা। কৃষকরা জানেনই না যে সরকার কৃষকের ধান ক্রয় করছে। এই সুযোগকে কাজে লাগিয়ে টাকা দিয়ে ভাড়াটি কৃষক বানিয়ে তাদের মাধ্যমে ধান ক্রয় করছে খাদ্য বিভাগের কর্মকর্তারা। এভাবে অভৈধভাবে ভাড়াটে কৃষক দিয়ে ধান করায় ক্ষুদ্ধ প্রান্তিক কৃষকরা।
জানাগেছে, লালমনিরহাট জেলায় সরকারী ভাবে সরকার চলতি বছর ২৬ টাকা কেজি দরে ১ হাজার ৪৯৩ মে. টন ধান, ৩৬ টাকা কেজি দরে ১০ হাজার ৭৩১ মে. টন সিদ্ধ চাল এবং ৩৫ টাকা কেজি দরে ৩৪৫ মে. টন আতপ চাল সংগ্রহের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে। আগামি ৩১ আগস্ট পর্যন্ত ধান ও চাল সংগ্রহ কার্যক্রম চলবে। কিন্তু কৃষকের ধাম ঝড়ানো এই ধান ক্রয়ের নামে চলছে খাদ্য বিভাগের সীমাহীন দুনীতি। কৃষি কার্ডের মাধ্যমে ধান ক্রয় করার কথা থাকলেও লালমনিরহাট জেলায় এর ভিন্ন চিত্র দেখা যায়।
সদর উপজেলার মহেন্দ্রনগর ইউনিয়নের কৃষক আবু জাফর বলেন, সরকার সরাসরি কৃষকের নিকট থেকে ধান ক্রয় করার কথা বললেও এই দুর্নীতির সাথে খাদ্য বিভাগের উপজেলা কর্মকর্তা আইয়ুব আলী, অফিস সহকারী নুর আলম সিদ্দিকসহ আরো কয়েকজন কর্মকর্তা কর্মচারী জড়িত রয়েছে বলে অভিযোগ করেন। এ ছাড়াও জেলা নিয়ন্ত্রন অফিসের প্রধান অফিস সহকারী ফকরুলের বিরুদ্ধেও এই দুর্নীতির সাথে জড়িত থাকার কথা আরো কয়েকজন জানান। তবে প্রধান অফিস সহকারী ফকরুল তার বিরুদ্ধে আনীত অভিযোগ অস্বিকার করেন।
অভিযোগ উঠেছে জেলা খাদ্য অফিসের কর্মকতারা গোপনে টাকার বিনিময়ে কিছু কিছু প্রভাবশালীর ধান ক্রয় এর সুবিধার জন্য কৃষকের নাম মাত্র কাগজ ব্যাবহার করছে। এর সাথে সদর ওসিএলএসডি তরিকুল ইসলামও জড়িত রয়েছে।
সদর উপজেলার কুলাঘাট এলাকার কৃষক তমিজ উদ্দিন জানান, সরকার ধান ক্রয় করবে কৃষকের কাছ থেকে অথচ কৃষকরাই সে কথা তা জানে না। খাদ্য বিভাগের লোকজন ধনীদের কাছ থেকে টাকা নিয়ে গোপনে ধান দেওয়ার পায়তারা চালাচ্ছে।
মহেন্দ্রনগর ইউনিয়নের কৃষক সালামত জানান, সরকার সরাসরি কৃষকের নিকট থেকে টাকায় ধান কিনবে তা না করে বাস্তবে ধান দেওয়ার সময় ধনীরা কৃষক হয়ে যায়। ওদিকে ১৬জন মিলার কে লাইসেন্স দেওয়ার ঘটনায় লালমনিরহাটের মিল মালিকরাও আন্দোলন করে। এ কারণে ওই মিলাররা খাদ্য অফিস ঘেরাও করে। পরে মঙ্গলবার (২১ মে) দুপুরে জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ে জেলা প্রশাসকের আহবানে বৈঠক করে পরে সমঝোতা হওয়ায় জেলা প্রশাসক তাদের আশ্বাস দেওয়ায় মিল মালিকরা তাদের অবস্থান থেকে সরে গিয়ে তারা বুধবার থেকে গোড়াউনে চাল দেওয়ার শুরু করেছে।
নাম প্রকাশের অনিচ্ছুক একজন মিল মালিক জানান, কিছু কিছু মিলার এর সাথে খাদ্য বিভাগের গোপন সু-সর্ম্পক থাকায় দুর্নীতিবাজ কর্মকর্তাদের টাকার বিনিময়ে অবৈধ সুযোগ নিচ্ছে। ওদিকে অভিযোগ উঠেছে খাদ্য বিভাগের কর্মকর্তাদের অবৈধ মোটা অংকে টাকার বিনিময়ে এক ব্যাক্তি ২ এর অধিক মিল এর নাম ব্যবহার করে চাল বিক্রয়ে সুযোগ সুবিধা নিচ্ছে।
তবে এ বিষয়ে জেলা মিল মালিক সমিতির সভাপতি শেখ আবদুল হামিদ বাবু জানান, এ অভিযোগ সত্য নয়, তবে কেউ অনিয়ম করলে মিল সমিতি ব্যাবস্থা নিবে।
লালমনিরহাট জেলা খাদ্য কর্মকর্তা মোঃ সাইফুদ্দিন জানান, কোন অনিয়মের অভিযোগ পেলে সাথে সাখে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
লালমনিরহাট জেলা প্রশাসক মোঃ শফিউল আরিফ জানান, কৃষক এর নামে ধান ক্রয়ে অনিয়ম বা দুনীতি হলে তাদের বিরুদ্ধে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে।