ফরিদপুর সদরের আটটি ইউনিয়ন স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ কেন্দ্রে স্বাভাবিক প্রসবের হার হতাশাজনক। ফরিদপুরে অনুষ্ঠিত এক অবহিতকরণ সভায় এ তথ্য প্রকাশ করা হয়।
সোমবার সকাল সাড়ে ১০টার দিকে সদর উপজেলা পরিষদ মিলনায়তনে ‘ইউনিয়ন স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ কেন্দ্র ২৪/৭ (সার্বক্ষণিক) স্বাভাবিক সেবা জোরদারকরণ বিষয়ক’ এ অবহিতকরণ সভা অনুষ্ঠিত হয়।
এতে প্রধান অতিথির বক্তব্য দেন ঢাকা বিভাগের পরিবার পলিকল্পনা অধিদপ্তরের পরিচালক ব্রজ গোপাল ভৌমিক।
অবহিতকরণ সভায় ফরিদপুর সদর ও দেশের স্বাভাবিক প্রসব, প্রসূতি মৃত্যুর হার, নবজাতক মৃত্যুর হার, শিশু মৃত্যুর হার প্রভৃতি বিষয়ে আলোকপাত করে বক্তব্য দেন ঢাকা বিভাগীয় পরিবার পরিকল্পনা অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক তৃপ্তি বালা।
ওই অবহিত করণ সভায় জানানো হয় ফরিদপুর সদর উপজেলায় মোট আটটি ইউনিয়ন স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ কেন্দ্র রয়েছে। প্রতিটি কেন্দ্রে প্রতিমাসে গড়ে ১০টি স্বাভাবিক প্রসবের নির্দেশনা থাকলেও ফরিদপুর সদরের এই কেন্দ্রগুলির অবস্থা অত্যন্ত হতাশাজনক।
ওই অবহিতকরণ সভায় গতবছর জুলাই থেকে চলতি বছরের এপ্রিল পর্যন্ত ১০ মাসের পরিসংখ্যান উল্লেখ করে বলা হয়, এই ১০ মাসে যেখানে কেন্দ্রগুলিতে মোট ৮০০ টি প্রসব হওয়ার কথা থাকলেও ওই সময়কালে ওই ১০টি কেন্দ্রে মাত্র ১১৩টি শিশুর প্রসব করানো হয়েছে। যা অত্যন্ত হতাশাজনক।
প্রধান অতিথির বক্তব্যে ঢাকা বিভাগের পরিবার পলিকল্পনা অধিদপ্তরের পরিচালক ব্রজ গোপাল ভৌমিক হুঁসিয়ারী উচ্চারণ করে বলেন, কোন ইউনিয়ন স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ কেন্দ্রে এ জাতীয় কর্মকা- আগামেিত মেনে নেওয়া হবে না। এখন থেকে প্রতি তিন মাস অন্তর প্রতিটি কেন্দ্রর কাজের মূল্যায়ন করা হবে, অবস্থার উন্নতি না হলে ওইসব কেন্দ্রের কর্মকর্তাদের ভয়াবহ পরিস্থিতির সম্মুখিন হতে হবে।
সভায় আরও জানানো হয়, বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার প্রতিবেদন অনুযায়ী ১২ থেকে ১৩ ভাগ মায়ের সন্তানের জন্ম দেওয়ার ক্ষেত্রে অস্ত্রোপচার করার প্রয়োজন হতে পারে। সেখানে দেশে বিভিন্ন ক্লিনিকে ৭৯ ভাগা শিশুর জন্ম হচ্ছে অস্ত্রোপচারের মাধ্যমে। অ¯ো¿পচার কোন স্বাবাবিক পন্থা নয় এটি একটি অস্বাভাবিক পন্থা। অবহিতকরণ সভায় আরও বলা হয়ে, দেশে এখন পর্যন্ত ৬০ ভাগ বিয়ে হয় বাল্য বিবাহ এবং ৫০ ভাগ কিশোরী প্রাপ্তবয়স্ক হওয়ার আগেই গর্ভে সন্তান ধারণ করে। এসব মায়েদের বেশির ভাগ ক্ষেত্রেই সন্তার জন্ম দেওয়ার সময় অস্ত্রোপচার করা হয়। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার মতে, ‘সিজারের নামে অপরিণত বয়সী মেয়েদের পেট কাঁটা এক ধরণের সহিংসতা’।
এ অস্বাভাবিক পন্থা দূর করতে এবং হার কমিয়ে আনার জন্য ইউনিয়ন স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ কেন্দ্রে স্বাভাবিক প্রসবের উপর গুরুত্বর দিতে হবে।
এজন্য প্রতিটি স্বাস্থ্য কর্মকর্তা ও কর্মচারি, চিকিৎসকের পাশাপাশি জনপ্রতিনিধি ও সংবাদকর্মীদের গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করতে হবে। সকলের সম্মিলিক প্রয়াস এবং জনমনে আস্থা অর্জন ছাড়া এ লক্ষ্য পূরণ হওয়া সম্ভব নয়।
সভায় সভাপতিত্ব করেন ফরিদপুরের অতিরিক্ত জেরা প্রশাসক (শিক্ষা ও আইটিসি) মোহাম্মদ মোবাশ্বের হাসান। আলোচনায় অংশ নেন বিএমএর সভাপতি আসম জাহাঙ্গীর চৌধুরী, সদর উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান আবদুর রাজ্জাক মোল্লা, ফরিদপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের সহযোগী অধ্যাপক (গাইনী ও অবস) দিলরুবা জেবা, ফরিদপুর পৌরসভার প্যানেল মেয়র আনিসুর রহমান চৌধুরী, ইউপি চেয়ারম্যান ওমর ফারুক, শহীদুল ইসলাম, মির্জা আজম প্রমুখ।
স্বাগত বক্তব্য দেন জেলা পরিবার পরিকল্পনা অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক মোহাম্মদ আলী সিদ্দিকী। এ ছাড়া সদরের প্রতিটি ইউনিয়ন স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কেন্দ্রে কর্মকর্তাগণ তাদের স্ব স্ব কেন্দ্রে সার্বিক পরিস্থিতি তুলে ধরেন।