নদী দখল করে অবৈধ স্থাপনা নির্মাণ করায় হিসনা নদী এখন সরু নালায় পরিনত হয়েছে। কুষ্টিয়ার ভেড়ামারা শহরের হিসনা ব্রীজের নিকট ভূমিদস্যুাদের দখলের কারণে হিসনা নদী তার গতি প্রকৃতি হারিয়ে ফেলেছে। হিসনা নদী রক্ষার জন্য এলাকাবাসী একাধিকবার মানব বন্ধন, স্বারক লিপিসহ নদীর মধ্যে অবস্থান করেন। দখলদারদের বিরুদ্ধে কোনো ব্যবস্থা গ্রহণ করেনি জেলা প্রশাসক। বরং অনেকেই স্থানীয় ভূমি অফিস থেকে বন্দোবস্ত নিয়ে বসতবাড়ি থেকে শুরু করে বিভিন্ন স্থাপনা নির্মাণ করেছে। ফলে হারিয়ে যেতে বসেছে হিসনা নদী। নদীর বুকে বসতঘর, বেড়িবাঁধ দিয়ে মৎস্য চাষের কারণে হিসনা নদী এরইমধ্যে মরে গেছে।
স্বাধীনতা-পরবর্তীকালে প্রথম দুই দশক পর্যন্ত নদীগুলো প্রবহমান থাকলেও নব্বই দশক থেকে এর মরণদশা শুরু হয়। স্বেচ্ছাচারীভাবে নদীর তীরে, এমনকি নদীর মধ্যেও গড়ে তোলা হয়েছে বসতবাড়ি, দোকানপাট ও কৃষিখামার। পানিপ্রবাহ হারিয়ে মুমূর্ষু দশায় পতিত নদীগুলোর এ দখলদারিত্ব অস্তিত্বকে আরেক দফা হারিয়ে দিয়েছে।
এসব নদীতে একসময় বড় বড় লঞ্চ, স্টিমার, গয়নার নৌকা চলত। সে সময় নদীগুলোতে প্রবল জোয়ার ও স্রোত থাকলেও এখন তা মরা খালের মতো নিশ্চল হয়ে পড়ে আছে। দখলের ফলে মৃত্যু ঘটেছে হিসনা নদীর। জমি দখল করে স্থানীয় ভূমি অফিস থেকে কাগজপত্র তৈরি করে ব্যক্তিমালিকানার নামে গড়ে তোলা হয়েছে স্থাপনা।
নদীর প্রবাহ ঠিক রাখার জন্য বারবার জনগণের পক্ষ থেকে দাবি তোলা হলেও তা খুব বেশি কাজে আসছে না। নদী মৃত্যুর ফলে কৃষিখাত আজ ধ্বংসের দ্বারপ্রান্তে।
প্রভাবশালীরা অবৈধ নদী দখলের বিরুদ্ধে এলাকাবাসী কেউ মুখ খোলার সাহস পাচ্ছেন না। ওই সব অবৈধ দখলকারীদের বিরুদ্ধে বিভিন্ন সময় নানাভাবে স্থানীয় জনপ্রতিনিধি, উপজেলা ও জেলা প্রশাসনকে অভিযোগ করেও কোনো লাভ হয়নি। ক্ষমতাসীন দলের প্রভাব খাটিয়ে অজ্ঞাত খুঁটির জোরে তারা অবৈধভাবে নদ থেকে নদী দখল অব্যাহত রেখেছেন। দখলকারীদের বিরুদ্ধে কথা বললে মামলাসহ বিভিন্ন ভাবে হুমকি দিয়ে আসছে।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক কৃষক বলেন, হিসনা ব্রীজের নিকট নদী দখলকারীদের বিরুদ্ধে মানব বন্ধন করলে উল্টো আমাদের বিরুদ্ধে মামলা দায়ের করেন। এই ভয়ে আর কেউ দখলকারীদের বিরুদ্ধে মুখ খুলতে সাহস পায়না। প্রশাসন সহযোগিতায় আমরা হিসনা নদী দখলকারীদের কাছ থেকে উদ্ধার করা সম্ভব হবে।
কৃষক আনছার বলেন, হিসনা নদী দখলের কারণে আজ নদীটি সরু নালায় পরিনত হয়েছে। নদীর বুকে বসতঘর, বেড়িবাঁধ দিয়ে মৎস্য চাষের কারণে হিসনা নদী এরইমধ্যে মরে গেছে।
ভেড়ামারা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা সোহেল মারুফ বলেন, হিসনা নদী দখল ও খননের বিষয়টি ইতোমধ্যে জেলা প্রশাসক মহোদয়ের মাধ্যমে নদী রক্ষা কমিশনকে জানানো হয়েছে। আশা করি দ্রুতই কাজ শুরু হবে।