বরিশাল জেলা পরিষদ নিয়ন্ত্রাধীন মুলাদী-মীরগঞ্জ খেয়াঘাট থেকে কাঙ্খিত ঈদ বোনাস না পেয়ে বাবুগঞ্জ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা সুজিত হালদার জেলা পরিষদের কর্মচারীসহ দুইজনকে কারাদ- দিয়েছেন বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে। ঈদকে সামনে রেখে প্রশাসনিক ক্ষমতার অপব্যবহার করে নিজের অধিক্ষেত্র আওতার বাইরে গিয়ে তিনি গতকাল শনিবার বেলা ১১টার দিকে মীরগঞ্জ খেয়াঘাটে টোল আদায়কারী বরিশাল জেলা পরিষদের কেয়ারটেকার ওয়াহিদুল ইসলাম ১৫ দিন এবং মীরগঞ্জ গ্রামের রিয়াজুল ইসলামকে ১০ দিন কারাদ- দেন। এনিয়ে জেলা পরিষদ কর্মকর্তা ও সাধারণ মানুষের মাঝে চরম ক্ষোভের সৃষ্টি হয়েছে। মীরগঞ্জ খেয়াঘাটে জনদুর্ভোগ নিরসনের দ্বিতীয় দিনে ভ্রাম্যমান অভিযান চালিয়ে কথিত অভিযোগ এনে দুইজনকে কারাদ- দেওয়ায় জনমনে সন্দেহ দেখা দিয়েছে এবং বাবুগঞ্জ উপজেলা নির্বাহী অফিসারের নৈতিকতা নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে। বরিশাল জেলা পষিদের সদস্য জিল্লুর রহমান জানান হিজলা-মুলাদী-মেহেন্দিগঞ্জ উপজেলার সাথে বরিশাল জেলা সদরের যোগাযোগের একমাত্র সড়কে মীরগঞ্জ খেয়াঘাটে দীর্ঘ দিন ধরে জুলুম-নির্যাতন চলে আসছিলো। বাবুগঞ্জের ইজারাদার বিভিন্ন অজুহাতে যাত্রীদের জিম্মি করে অতিরিক্ত ভাড়া আদায়, রিজার্ভের নামে টাকা আদায়, হাতে বহনযোগ্য ব্যাগ বহনে টাকা আদায়সহ বিভিন্নভাবে হয়রানি করতো। এসব হয়রানি নিরসনে বরিশাল জেলা পরিষদ উদ্যোগ নিয়ে জেলা পরিষদের কর্মচারীদের মাধ্যমে খাস কালেকশন শুরু করে এবং গত শুক্রবার মীরগঞ্জ খেয়াঘাটের পূর্বপাড়ে টোল আদায় শুরু করে। অতিরিক্ত ভাড়া ও রিজার্ভ ট্রলারের বাণিজ্য বন্ধ হওয়ায় সাধারণ যাত্রীদের মাঝে স্বস্তি ফিরে আসে। প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান শনিবার বেলা ১১টার দিকে বাবুগঞ্জ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা সুজিত হালদার স্পিডবোড নিয়ে মীরগঞ্জ পূর্ব পাড়ে উপস্থিত হয় এবং টোল আদায়কারীদের কাছে ঈদ বোনাস দাবী করেন। ২দিন ধরে টোল আদায়কারীরা উপজেলা নির্বাহী অফিসারকে ঈদ বোনাস দিতে অস্বীকার করলে তিনি ক্ষিপ্ত হন এবং অতিরিক্ত ভাড়া আদায়ের অভিযোগ এনে জেলা পরিষদের কেয়ারটেকার ওয়াহিদুল ইসলামকে ১৫ দিন ও রিয়াজুল ইসলামকে ১০দিনের কারাদ- দেন। ওয়াহিদুল ইসলামের আতœীয়-স্বজনরা জানান মীরগঞ্জ খেয়াঘাট থেকে আদায়কৃত টোল জেলা পরিষদের জমা দিতে হয়, সেখানে বাবুগঞ্জের উপজেলার নির্বাহী অফিসারকে ‘ঈদ বোনাস’ দেওয়ার ক্ষমতা কোনো কর্মচারীর নাই। এ ছাড়া বিগত দিতে মীরগঞ্জ খেয়াঘাটে ১৫/২০টাকা ভাড়া আদায়কালীন ওই ইউএনও কোনো ভ্রুক্ষেপ না করে ঈদ-উল-ফিতরের আগমূহুর্তে গতকাল ভ্রাম্যমান অভিযান চালিয়ে কেন ২জনকে কারাদ- দিয়েছেন? তা কারও বোধগম্য নয়। এ ব্যাপারে বাবুগঞ্জ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা সুজিত হালদার জানান যাত্রীদের অভিযোগের ভিত্তিতে মীরগঞ্জ খেয়াঘাটে ভ্রাম্যমান আদালতের অভিযান চালিয়ে অতিরিক্ত ভাড়া আদায় করার জন্য দুই জনকে কারাদ- দেওয়া হয়েছে। তবে কোন যাত্রীরা অভিযোগ করেছে তা তিনি জানাতে পারেননি। বরিশাল জেলা পরিষদের প্রধান নির্বাহী মানিকহার রহমান জানান মীরগঞ্জ খেয়াঘাটে দীর্ঘ দিন ধরে যখন ইজারাদার অনিয়ম ও যাত্রীদের নির্যাতন চালাচ্ছিলো তখন বাবুগঞ্জ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা কোনো অভিযান না চালিয়ে জেলা পরিষদের তত্ত্বাবধানে টোল আদায়ের সময় তিনি ‘ঈদ বোনাস’ না পেয়ে জেলা পরিষদের কর্মচারীসহ দুইজনকে কারাদ- দিয়ে অনৈতিক কাজ করেছেন। এ ছাড়া মীরগঞ্জ খেয়াঘাটের পূর্ব পাড় অর্থ্যাৎ মুলাদী পাড়ে অভিযান চালানোর এখতিয়ার বাবুগঞ্জ উপজেলা নির্বাহী অফিসারের নেই বলে দাবী করেন প্রধান নির্বাহ কর্মকর্তা। ইউএনও সুজিত হালদার জেলা পরিষদের কাজে বাধা সৃষ্টি ও বিব্রত করার লক্ষে ভ্রাম্যমান অভিযানের নামে এধরণের ঘটনা ঘটিয়েছে। এ বিষয়ে জেলা পরিষদ যথাযথ আইনি ব্যবস্থা গ্রহণ করবে বলে জানান তিনি।