লালমনিরহাটে আবহাওয়ার পরিবর্তন জনিত কারণে বেড়েছে ভাইরাস জ¦রের প্রাদুর্ভাব। ঘরে ঘরে দেখা দিয়েছে ভাইরাস জ¦রের রোগী। আক্রান্তের শীর্ষে রয়েছে শিশু ও বৃদ্ধরা।
জানা গেছে, গত ১৫ দিন ভ্যাপ্সা গরম শেষে গত সপ্তাহ থেকে গুড়ি গুড়ি বৃষ্টি, দমকা বাতাসে ঠান্ডা অনুভুত হওয়ায় অনেকেই জ¦রে আক্রান্ত হয়ে পড়েছেন। এতে বেশি আক্রান্ত হচ্ছে শিশু ও বৃদ্ধরা। এ বৈরী আবহাওয়া প্রানি দেহে অসহনীয় হয়ে পড়ায় নানান রোগে আক্রান্ত হচ্ছে মানুষ। এ ভাইরাস জ¦রে আক্রান্ত হলে ওষুধ সেবন করেও তিন দিনের আগে আরগ্য লাভের সুযোগ নেই। আক্রান্তদের নুন্যতম ৩-৫ দিন ভুগতে হচ্ছে জ¦রে। কোন কোন পরিবারে সকল সদস্য এক সঙ্গে জ¦রে আক্রান্ত হওয়ায় সেবা করার লোকও পাচ্ছেন না তারা।
লালমনিরহাট সদর উপজেলার কুলাঘাট ইউনিয়নের টিকটিকি বাজার এলাকার স্কুল শিক্ষিকা মোছাঃ আনোয়ারা বেগম জানান, তাদের পরিবারে ৫ সদস্যের সকলেই গোটা দুই দিন ধরে জ¦র ও পাতলা পায়খানায় ভুগছেন। ওষুধ সেবন করেও কোন সুফল পাচ্ছেন না তারা। চিকিৎসকরা জানান ভাইরাস জ¦র নুন্যতম ৪/৫ দিন লাগবে সেরে উঠতে।
লালমনিরহাট পৌরসভার বাসিন্দা সরকারী গাড়ি চালক আজিজুল ইসলাম জানান, টানা তিন দিন ধরে তিনিসহ তার পরিবারে তিনজন জ¦রে ভুগছেন। মাথাসহ পুরো শরীর ব্যাথা করে এবং শরীরের তাপমাত্রা বেড়ে যায়। সাথে থাকে সর্দ্দি ও কাশি। শুধু তার পরিবারই নয়, তাদের পাড়ার অনেক বাসায় এই জ¦রের প্রাদুর্ভাব বেড়েছে। সব মিলে রমজানের শেষ দশকে রোজা ও নামাজে তাদের পাড়ার অনেকের সমস্যা হয়ে পড়েছে জ¦রে।
কালীগঞ্জ উপজেলার তুষভান্ডার এলাকার নিয়াজ আহমেদ সিপন জানান, গত তিন দিন আগে রাতে নামাজ শেষে বাড়ি ফিরে শরীরের ব্যাথা অনুভব করেন। পরদিন শুরু হয় সর্দি জ¦র। প্যারাসিটামলে কাজ না হওয়ায় পল্লী চিকিৎসকের স্মরনাপন্ন হলে দেখতে পান ১০৭ ডিগ্রী জ¦রে আক্রান্ত হয়েছেন তিনি। এর তিন দিন পরে কিছুটা সুস্থতা অনুভব করলে বাড়ির আরো দুইজন সদস্য জ¦রে আক্রান্ত হয়ে পড়েছেন। ওষুধ সেবনেও কোন কাজ হচ্ছে না বলেও জানান তিনি।
ঘরে ঘরে এ ভাইরাস জ¦রে আক্রান্তরা প্রায় সবাই স্থানীয় পল্লী চিকিৎসকদের কাছে চিকিৎসা নিচ্ছেন। এ ক্ষেত্রে এন্টিবায়োটিক সেবনও বেড়েছে। যারা ৭-১০ দিনের আক্রান্ত তারা ছুটছেন জেলার হাসপাতাল বা ক্লিনিকে। তবে রেজিস্টার্ড চিকিৎসকদের মতে এটি আবহাওয়া পরিবর্তন জনিত একটি ভাইরাস জ¦র। আতঙ্কিত না হয়ে আক্রান্তদের আলাদা বিছানায় রেখে সেবা করতে হবে। এ ভাইরাসটি তাপমাত্র বেড়ে যাওয়া এবং হঠাৎ তা নেমে যাওয়ার কারণে হয়ে থাকে। যা হাঁচি, কাশি বা লালার মাধ্যমে অন্যদেহে ছড়িয়ে পড়ে। তাই মাক্স ব্যবহারের পরামর্শ দেন চিকিৎসকগণ। ওষুধ সেবন না করেও ৩/৪ দিন পরেই শরীরের তাপমাত্রা কমে গিয়ে স্বাভাবিক হবে। আক্রান্তের ৩/৪ দিন আগে এন্টিবায়োটিক সেবন না করাই উত্তম বলেও মন্তব্য করেন তারা।
নাম প্রকাশের অনিচ্ছুক একজন পল্লী চিকিৎসক ও ফার্মেসী মালিক জানান, সারা দিন যত রোগী দেখেছেন তার ৭০ ভাগই ভাইরাস জ¦র ও পাতলা পায়খানায় আক্রান্ত। আবহাওয়ার পরিবর্তনের কারণে ভাইরাস জ¦রে আক্রান্ত রোগীর সংখ্যা বেড়েছে। অনেকেই চিকিৎসকের পরামর্শ ছাড়াই প্যারাসিটামল গ্রুপের ওষুধ নিচ্ছেন। কয়েক দিন যাবত এই গ্রুপের ওষুধ বিক্রিও বেড়েছে বলেও মন্তব্য করেন তিনি।
লালমনিরহাট সিভিল সার্জন ডা. কাসেম আলী জানান, তাপমাত্র বেড়ে যাওয়ায় এবং হঠাৎ বৃৃষ্টির কারণে জেলায় ভাইরাস জ¦রের রোগীর সংখ্যা বৃদ্ধি পেয়েছে। এটি ছোঁয়াছে রোগ। রোগীকে সেবাদানকারী ব্যাক্তি অবশ্যই মাক্স ব্যবহার করে পরিস্কার পরিচ্ছন্ন থাকতে হবে। অন্যথায় ছড়িয়ে পড়বে। তিনি নিজেও মাক্স ব্যবহার করে রোগী দেখছেন। আক্রান্তের ৩/৪দিন এন্টিবায়টিক সেবন না করে পরিচ্ছন্ন থাকতে হবে। তবে আক্রান্তের ৫দিন অতিবাহিত হলে নিকটস্থ কমিউনিটি ক্লিনিক বা উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে যাওয়ার পরামর্শ দেন তিনি।