প্রখ্যাত নাট্যকার, নির্দেশক ও অভিনেতা বিশিষ্ট শিক্ষাবিদ অধ্যাপক মমতাজউদদীন আহমদ আর নেই (ইন্নাল্লিাহিরাজিউন)। তাঁর নিজ জেলা চাঁপাইনবাবগঞ্জের ভোলাহাট উপজেলার বজরাটেক সবজা পাইল্ট উচ্চ বিদ্যালয়ে শেষ জানাজা সোমবার রাত সাড়ে ১০ টায় অনুষ্ঠিত হয়। তাঁর জানাজায় দেশের বিভিন্ন শ্রেণী পেশার হাজার হাজার মানুষ অংশগ্রহণ করেন। পরে তাঁর কানারহাট গ্রামে বাবার কবরের পাশে দাফন সম্পন্ন হয়। মৃত্যুকালে তাঁর বয়স হয়েছিল ৮৪ বছর। তিনি রোববার (২ জুন) বিকেল ৩টা ৪৮ মিনিটে রাজধানীর অ্যাপোলো হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন। বিষয়টি জানিয়েছেন মমতাজউদদীন আহমদের দীর্ঘদিনের সহচর অধ্যাপক রতন সিদ্দিকী ও তাঁর পরিবার।
তাঁর পরিবার জানান, বেশ কিছুদিন ধরে শারীরিক অসুস্থতায় ভুগছিলেন মমতাজউদদীন। এজন্য ১৫ দিন ধরে হাসপাতালে ছিলেন তিনি। অবস্থার অবনতি হওয়ায় তাকে নিবিড় পর্যবেক্ষণ কেন্দ্রে (আইসিইউ) রাখা হয়। তবে সেখান থেকে আর ফেরা হলো না এই কিংবদন্তির। অধ্যাপক রতন সিদ্দিকী বলেন, সোমবার (৩ মে) সকাল ৯টায় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কেন্দ্রীয় মসজিদে মমতাজউদদীন আহমদের নামাজে জানাজা সম্পন্ন হয়। এরপর রাজধানীর মিরপুরে রূপনগরে তার বাসার পাশের মসজিদে দ্বিতীয় জানাজা সম্পন্ন হয়। এ ছাড়া ঢাকা বিশ^বিদ্যালয়সহ বেশ কয়েক স্থানে জানাজা অনুষ্ঠিত হয়। সেখান থেকে কিংবদন্তি এই নাট্যকারের শেষ ইচ্ছে অনুযায়ী তাঁকে চাঁপাইনবাবগঞ্জের ভোলাহাটে বাবার কবরের পাশে চিরশায়িত করা হয়।
মমতাজউদদীন আহমদের অসুস্থার খবরে তার ছেলে সেজান মাহমুদ তিতাস আগেই যুক্তরাষ্ট্র থেকে দেশে ফিরেছেন। মমতাজউদদীন আহমদ ১৯৩৫ সালের ১৮ জানুয়ারি চাঁপাইনবাবগঞ্জের ভোলাহাট উপজেলার পাশে ভারতের মালদায় জেলার হাবিবপুর থানার আইহো গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন। কলেজে পড়ার সময়ই ভাষা আন্দোলনে যোগ দেন তিনি। ১৯৫২ সালের ২১ ফেব্রুয়ারি রাতে রাজশাহী সরকারি কলেজের মুসলিম হোস্টেলের ইট ও কাদামাটি দিয়ে যে শহীদ মিনার গড়ে উঠেছিল, তাতে ভূমিকা ছিল মমতাজউদদীনের।
কর্মজীবনে তিনি চট্টগ্রাম সরকারি কলেজ এবং পরে ঢাকা ও জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের নাট্যকলা ও সংগীত বিভাগে অধ্যাপনা করেন। এই কিংবদন্তির লেখা নাটক ‘কী চাহ শঙ্খচিল’ ও ‘রাজার অনুস্বারের পালা’ পশ্চিমবঙ্গের রবীন্দ্রভারতী বিশ্ববিদ্যালয়ের পাঠ্য তালিকাভুক্ত হয়। নাট্যকলায় অনন্য অবদানের জন্য তিনি ১৯৯৭ সালে একুশে পদকে ভূষিত হন। লাভ করেন বাংলা একাডেমি পুরস্কার, শিশু একাডেমি পুরস্কার, আলাউল সাহিত্য পুরস্কারসহ অসংখ্য সম্মাননা।