সোনারগাঁয়ে নিখোঁজের ১৭ দিন পর মিনু আক্তার (৩৫) নামে এক নারীর লাশ মাটি খুড়ে উদ্ধার করেছে র্যাব। গতকাল শুক্রবার দুপুরে উপজেলার কাচঁপুরের কুতুবপুর মনজিলখোলা এলাকায় একটি বিলের মধ্যে বালি চাপা দেয়া লাশ উদ্ধার করা হয়। হত্যাকান্ডে জড়িত থাকার অভিযোগে নিহতের সাবেক স্বামী জুনায়েদ আহমেদকে আটক করা হয়েছে। র্যাব অতিরিক্ত পুলিশ সুপার আলেপউদ্দিন এবিষয়টি নিশ্চিত করেছেন। লাশ উদ্ধারের পর ময়না তদন্তের জন্য নারায়ণগঞ্জ জেনারেল হাসপাতাল মর্গে প্রেরণ করা হয়েছে।
নিহত মিনু আক্তারের মা মদিনা বেগম জানান, ব্রাহ্মণবাড়িয়ার বাঞ্ছারামপুর এলাকার জুনায়েদ আহমেদ কাচঁপুরের কুতুবপুরে অলিম্পিক ব্যাটারী ফ্যাক্টরীতে কাজ করার সুবাদে কুতুপুররের আবদুল হাসেমের দ্বিতীয় মেয়ে মিনু আক্তারে পরিচয় হয়। একপর্যায়ে তাদের মধ্যে প্রেমের সম্পর্ক গড়ে উঠে। পরে তারা বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ হন। এটি ছিলো জুনায়েদ আহমেদর দ্বিতীয় এবং মিনু আক্তারে পঞ্চম বিয়ে। মিনুর পুর্বের সংসারে তিন ছেলে রয়েছে। তবে জুনায়েদের সংসারে কোন ছেলে মেয়ে হয়নি। এক বছর আগে জুনায়েদ দ্বিতীয় স্ত্রী মিনুকে তালাক দেয়। কিন্তু স্ত্রীর পাওনা টাকা পরিশোধ না করায় মিনু আক্তারের সাথে জুনায়েদের বিরোধ দেখা দেয়। এ নিয়ে জুনায়েদের সাথে মিনুর কয়েক দফা ঝগড়া হয়।
নিহতের মা আরো জানান, গত ২১মে রাতে মিনুকে মোবাইল ফোনে কে বা কারা বাসা থেকে ডেকে নেয়। এরপর থেকেই মিনু নিখোঁজ হন। তার মোবাইল ফোন বন্ধ পাওয়া যায়। এদিকে মিনুর কোন হদিস না পেয়ে তার মা ও তিন বোন বিভিন্ন স্থানে খোঁজাখুঁজি করেন। একপর্যায়ে জুনায়েদের বাড়ি গিয়ে মিনুর খবর জানতে চাইলে জুনায়েদ তার বর্তমান স্ত্রীকে নিয়ে পালিয়ে যায়। এ ঘটনার পরদিন মিনুর মা বাদি হয়ে সোনারগাঁ থানায় সাধারণ ডায়েরি করেন। পরে পুলিশ জুনায়েদের বাসা থেকে রক্তমাখা লুঙ্গি ও নারীর মাথার লম্বা চুল জব্দ করে। তবে পুলিশ জোনায়েদকে গ্রেফতার করতে পারেনি। গত ২৩ মে জিডির কপি নিয়ে মিনুর মা মদিনা বেগম র্যাব ১১কার্যালয়ে গিয়ে অভিযোগ দায়ের করেন। তিনি মেয়ের হত্যাকারি জোনায়েদের ফাঁসি দাবি করেছেন।
র্যাব ১১ সিও লেঃ কর্নেল কাজী সামসের উদ্দিন চৌধুরি বলেন, র্যাবের কাছে অভিযোগ আসার পর র্যাব বিষয়টি গুরুত্বসহকারে তদন্ত শুরু করে। তথ্য প্রযুক্তি ব্যবহার করে মোবাইল ট্রেকিংয়ের মাধ্যমে মিনু আক্তারের সাবেক স্বামী জুনায়েদ আহমেদকে সিদ্ধিরগঞ্জের শিমরাইল থেকে বৃহস্পতিবার গ্রেফতার করা হয়েছে। র্যাবের জিজ্ঞাসাবাদে জুনায়েদ সাবেক স্ত্রীকে হত্যা ও লাশ গুমের কথা স্বীকার করে। পরে তার দেখানো মতে মনজিলখেলা বিল থেকে বিবশ্র লাশ উদ্ধার করা হয়েছে। জোনায়েদের ভাড়া বাড়ির পাশের পুকুর থেকে জামা কাপড় উদ্ধার করে র্যাব।
র্যাবে সিও আরো জানান, র্যাবের জিজ্ঞাসাবাদে জোনায়েদ জানায় প্রথম স্ত্রীর অনুপস্থিতিতে জোনায়েদ ২১মে রাতে সাবেক স্ত্রী মিনু আক্তারকে বাসায় ডেকে নিয়ে তার সাথে বিবাহবর্হিভুত সম্পর্ক করে। পরবর্তীতে মিনু আক্তার ঈদের মধ্যে কাপড়ের ব্যবসা করার জন্য জুনায়েদের কাছে ২লাখ টাকা দাবি করলে জুনায়েদ মিনু আক্তারকে চড়-থাপ্পড় দেয়। একপর্যায়ে জুনায়েদ ঘরের মধ্যে থাকা একটি বাশের লাঠি দিয়ে মিনু আক্তারকে মাথায় আঘাত করে। মিনু আক্তার ঘরের মেঝেতে লুটিয়ে পড়লে সে মিনু আক্তারের বুকের উপরে বসে গলা টিপে শ্বাসরোধে হত্যা করে। হত্যার পর ভোরে মিনু আক্তারের বুকে রশি বেধে বিবস্ত্র অবস্থায় ঘর থেকে টেনে বাড়ির পাশের পুকুরের কচুরিপানার ভিতর লুকিয়ে রেখে ঘরে ফিরে আসে। পরবর্তীতে জুনায়েদ সকালের দিকে তার কর্মস্থলে চলে যায়। ২৩ মে গভীর রাতে পুকুরের কচুিরপানা থেকে মিনু আক্তারের মৃতদেহ উঠিয়ে রশি দিয়ে বেধে পাশের ড্রেজারে বালি ফেলার স্থানে নিয়ে গিয়ে গর্ত করে বালু চাপা দিয়ে লাশ গুম করে। পরবর্তীতে মিনুর খোঁজে তার মা জুনায়েদের ভাড়া বাসায় আসলে জুনায়েদ কৌশলে পালিয়ে যায়।
সোনারগাঁ থানার ওসি মনিরুজ্জামান বলেন, নিখোঁজ মিনু আক্তারের লাশ উদ্ধার করা হয়েছে। ময়না তদন্তের জন্য মর্গে পাঠানো হয়েছে। এ ঘটনায় মামলা দায়েরের প্রস্তুতি চলছে।