এবারের ঈদ-উল ফিতরে বরিশালসহ গোটা দক্ষিণাঞ্চলের ২১টি নির্বাচনী এলাকায় বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের নেতাকর্মীরা দলীয় হেভিওয়েট নেতাদের দেখা পাননি। বিএনপির অধিকাংশ নেতাও এলাকায় আসেননি। শুধু সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুক কিংবা মোবাইল ফোনে ম্যাসেজের মাধ্যমে কেউ কেউ ঈদের শুভেচ্ছা জানিয়েছেন নেতাকর্মীদের।
সূত্রমতে, বিএনপির অধিকাংশ নেতা এবং আওয়ামী লীগের বেশ কয়েকজন হেভিওয়েট নেতা নিজ নির্বাচনী এলাকার বাহিরে এবার ঈদ উদ্যাপন করেছেন। এ ছাড়া জাতীয় সংসদের সদস্য হিসেবে আছেন এমন কয়েকটি রাজনৈতিক দলের নেতাও ঈদে তাদের ক্ষমতার শিকড় ভোটারদের কাছে ছিলেন না। গত ৩০ ডিসেম্বরের জাতীয় সংসদ নির্বাচনে দক্ষিণাঞ্চলের ২১টি নির্বাচনী এলাকায় বিএনপির মনোনয়ন পাওয়া ২১জন শুধু নয়, মনোনয়নের জন্য লবিং ও তদবির করা বিএনপির কয়েকশ’ নেতার মধ্যে অধিকাংশরাই ঈদের সময় এলাকায় ছিলেন না। এমনকি এলাকায় আসা তো দূরের কথা, ঈদে তৃণমূল পর্যায়ের নেতাকর্মীদের ফোনও ধরেননি অনেকে। অপরদিকে আওয়ামী লীগের অধিকাংশ সংসদ সদস্য নির্বাচনী এলাকায় ছিলেন। তবে অনুপস্থিত ছিলেন দলের বেশ কয়েকজন হেভিওয়েট নেতা। তাদের মধ্যে ২/৪ জন রয়েছেন তারা কখনোই কোনো ঈদেই এলাকায় থাকেন না।
সর্বশেষ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে পরাজয়ের পর এলাকা ছাড়া বিএনপির অধিকাংশ সংসদ সদস্য প্রার্থী ছয় মাসে একবারও এলাকায় আসেননি। একই ধারাবাহিকতায় ঈদের দিনেও তারা নির্বাচনী এলাকায় ছিলেন না। বরিশাল-১ (গৌরনদী-আগৈলঝাড়া) আসনের বিএনপির মনোনয়ন পাওয়া জহির উদ্দিন স্বপন শুধু ঈদেই নয়; ছয় মাসে একবারও নির্বাচনী এলাকায় আসেননি। একইভাবে এলাকায় ছিলেন না দলের প্রার্থী হয়ে মনোনয়ন বঞ্চিত হওয়া কেন্দ্রীয় নেতা ইঞ্জিনিয়ার আবদুস সোবাহান, আকন কুদ্দুসুর রহমান ও অ্যাডভোকেট গাজী কামরুল ইসলাম স্বজল। এ আসনে আওয়ামী লীগ দলীয় এমপি আবুল হাসানাত আব্দুল্লাহ প্রতিবছর ঈদে এলাকায় থাকলেও এবার চিকিৎসার কারণে তিনি বিদেশে ছিলেন।
বরিশাল-২ (উজিরপুর-বাবুগঞ্জ) আসনে বিএনপির মনোনয়ন পাওয়া সরফুদ্দিন আহমেদ সান্টু এবং শহিদুল হক জামাল ছয় মাস ধরে এলাকায় অনুপস্থিত। তারা ঈদেও নিজ এলাকায় ছিলেন না। আওয়ামী লীগের সংসদ সদস্য শাহে আলম, সংরক্ষিত আসনের রুবীনা মীরা ও সাবেক সাংসদ অ্যাডভোকেট তালুকদার মোঃ ইউনুস নির্বাচনী এলাকার নেতাকর্মীদের সাথে ঈদ উদ্যাপন করেছেন।
বরিশাল-৩ (বাবুগঞ্জ-মুলাদী) আসনের মানুষ এবার সংসদ সদস্য, এমপি পদে প্রতিদ্বন্ধীতাকারী কিংবা মনোনয়ন প্রত্যাশী কাউকেই ঈদে কাছে পাননি। ৩০ ডিসেম্বরের নির্বাচনে বিজয়ী জাতীয় পার্টির এমপি গোলাম কিবরিয়া টিপু, বিএনপির প্রার্থী অ্যাডভোকেট জয়নাল আবেদীন, বিএনপির প্রভাবশালী নেত্রী বেগম সেলিমা রহমান কিংবা বাবুগঞ্জের সন্তান ওয়ার্কার্স পার্টির চেয়ারম্যান সংসদ সদস্য রাশেদ খান মেনন নিজ এলাকায় ছিলেন না। ঈদের দিন এলাকায় ছিলেন শুধু সাবেক এমপি শেখ টিপু সুলতান এবং স্বতন্ত্র প্রার্থী আতিকুর রহমান।
বরিশাল-৪ (হিজলা-মেহেন্দীগঞ্জ) আসনে আওয়ামী লীগ দলীয় এমপি পঙ্কজ দেবনাথ ঈদ করেছেন নিজ নির্বাচনী এলাকায়। ছিলেন না বিএনপির মনোনয়ন পাওয়া নুরুর রহমান জাহাঙ্গীর এবং সাবেক এমপি মেজবাহ উদ্দিন ফরহাদ।
বরিশাল-৫ (সদর) আসনের এমপি প্রতিমন্ত্রী কর্নেল (অব.) জাহিদ ফারুক শামিম, সিটি মেয়র সেরনিয়াবাত সাদিক আব্দুল্লাহ এবং সাবেক এমপি বিএনপির যুগ্ম মহাসচিব অ্যাডভোকেট মজিবর রহমান সরোয়ার নিজ নির্বাচনী এলাকার নেতাকর্মীদের সাথে ঈদ উদ্যাপন করেছেন। তবে এলাকায় ছিলেন না সদ্য সাবেক মেয়র আহসান হাবিব কামাল। বরিশাল-৬ (বাকেরগঞ্জ) আসনে জাতীয় পার্টির এমপি নাসরিন জাহান রতনা আমিন এলাকায় থাকলেও ছিলেন না বিএনপির মনোনয়নে এমপি নির্বাচন করা সাবেক এমপি আবুল হোসেন।
বরাবরের মতো এবারও নির্বাচিত জনপ্রতিনিধি এবং প্রভাবশালী নেতাদের ছাড়াই ঈদের দিনটি কাটিয়েছেন ঝালকাঠী জেলার দুইটি নির্বাচনী এলাকায় সাধারণ মানুষ। এ দুটি আসনে সংসদ সদস্য নির্বাচিত হওয়া আওয়ামী লীগের প্রভাবশালী নেতা আমির হোসেন আমু এবং ঝালকাঠী-১ (রাজাপুর-কাঁঠালিয়া) আসনের বিএইচ হারুন প্রায় কখনোই ঈদের দিন নির্বাচনী এলাকায় থাকেন না। তাদের মধ্যে কেন্দ্রীয় পর্যায়ের প্রভাবশালী নেতা হিসেবে রাজধানীর নানা আয়োজনে আমির হোসেন আমুর উপস্থিত থাকা জরুরি হলেও বিএইচ হারুন কেন ঈদে এলাকায় থাকেন না তা নিয়ে সাধারণ মানুষের মধ্যে নানা প্রশ্নের সৃষ্টি হয়েছে। এ ছাড়া ৩০ ডিসেম্বরের নির্বাচনে দলীয় মনোনয়ন পাওয়া বিএনপির প্রভাবশালী দুই নেতা শাহজাহান ওমর ও জেবা খান এবং এ দুই আসনে দলীয় মনোনয়নের লড়াইয়ে থাকা বিএনপির সাবেক এমপি ইশরাত জাহান ইলেন ভুট্টো, মাহবুবুল আলম নান্নু, মিঞা আহম্মেদ কিবরিয়া, রফিকুল ইসলাম জামাল ও আওয়ামী লীগের মনিরুজ্জামান মনির ঈদে আসেননি নিজ নিজ এলাকায়।
পিরোজপুর-৩ (মঠবাড়িয়া) আসনে জাতীয় পার্টির এমপি রুস্তুম আলী ফরাজী নিজ এলাকায় ঈদ করেছেন। মঠবাড়িয়ায় ঈদের নামাজ আদায় করেছেন আওয়ামী লীগের দুই নেতা পিরোজপুর জেলা পরিষদের চেয়ারম্যান মহিউদ্দিন মহারাজ এবং পৌর মেয়র রাফিউদ্দিন ফেরদৌস। তবে এলাকায় ছিলেন না বিএনপি নেতা রুহুল আমিন দুলাল। পিরোজপুর-১ (পিরোজপুর সদর-নাজিরপুর-স্বরূপকাঠী) আসনের এমপি ও পূর্তমন্ত্রী অ্যাডভোকেট শ.ম রেজাউল করিম নিজ নির্বাচনী এলাকার নেতাকর্মীদের নিয়ে ঈদ উদ্যাপন করেছেন। তবে এলাকায় ছিলেন না ধানের শীষ প্রতীকে নির্বাচন করা জামায়াত নেতা মাসুদ সাঈদী, বিএনপির মনোনয়ন প্রত্যাশী শিল্পপতি ফখরুল ইসলাম, সাবেক এমপি একেএমএ আউয়াল। সংরক্ষিত আসনের এমপি শেখ এ্যানি রহমান নিজ এলাকায় ঈদ করেছেন।
বরাবরের মতো এবারও ঈদে এলাকায় ছিলেন না পিরোজপুর-২ (ভান্ডারিয়া-কাউখালী) আসনের এমপি জেপি (মঞ্জু) চেয়ারম্যান আনোয়ার হোসেন মঞ্জু। একই সাথে এলাকায় ছিলেন না এ আসনে ধানের শীষের মনোনয়ন পাওয়া লেবার পার্টির চেয়ারম্যান মোস্তাফিজুর রহমান ইরান এবং বিএনপির মনোনয়ন চাওয়া আহম্মেদ সোহেল মঞ্জুর।
পটুয়াখালী-১ (পটুয়াখালী-দুমকি-মির্জাগঞ্জ) আসনের আওয়ামী লীগ দলীয় এমপি অ্যাডভোকেট শাহজাহান মিঞা নিজ নির্বাচনী এলাকায় ঈদ করেছেন। বরাবরের মতো এবারও নির্বাচনী এলাকায় ছিলেন না বিএনপির মনোনয়নে নির্বাচন করা সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আলতাফ হোসেন চৌধুরী। পটুয়াখালী-২ (বাউফল) আসনে ঈদে একমাত্র এলাকায় ছিলেন আওয়ামী লীগের মনোনয়ন প্রত্যাশী পৌর মেয়র জিয়াউল হক জুয়েল। এলাকায় ছিলেন না সেখানকার সংসদ সদস্য আওয়ামী লীগ নেতা আ.স.ম ফিরোজ, বিএনপির মনোনয়নে নির্বাচন করা সাবেক এমপি শহিদুল আলম তালুকদার এবং তার স্ত্রী সালমা আলম লিলি। এছাড়াও এখানকার আরেক বিএনপি নেতা ইঞ্জিনিয়ার ফারুক তালুকদারও ঈদে নিজ এলাকায় আসেননি।
পটুয়াখালী-৩ (দশমিনা-গলাচিপা) আসনের আওয়ামী লীগ দলীয় এমপি এমএম শাহজাদা সাজু নিজ নির্বাচনী এলাকায় ঈদ উদ্যাপন করলেও ছিলেন না বিএনপির মনোনয়ন পাওয়া সাবেক এমপি গোলাম মাওলা রনি ও আওয়ামী লীগের আরেক সাবেক এমপি আ.খ.ম জাহাঙ্গীর। পটুয়াখালী-৪ (কলাপাড়া-রাঙ্গাবালী) আসনের এমপি মহিবাবুর রহমান মুহিব নির্বাচনী এলাকায় ঈদ উদ্যাপন করেছেন। তবে এলাকায় ছিলেন না একই দলের সদ্য সাবেক এমপি মাহবুবুর রহমান তালুকদার এবং বিএনপির মনোনয়ন পাওয়া কেন্দ্রীয় নেতা এবিএম মোশাররফ হোসেন।
আইসিসি বিশ্বকাপের জন্য ঈদের দিন লন্ডনে ছিলেন ভোলা-৪ (চরফ্যাশন-মনপুরা) আসনের এমপি যুব ও ক্রীড়া মন্ত্রণালয় সংক্রান্ত সংসদীয় কমিটির চেয়ারম্যান আব্দুল্লাহ আল ইসলাম জ্যাকব। অতীতের মতো এবারও এলাকায় ছিলেন না এ আসনে বিএনপির মনোনয়ন পাওয়া দলের কেন্দ্রীয় নেতা নাজিম উদ্দিন আলম। ভোলা-১ (সদর) আসনের এমপি আওয়ামী লীগের প্রভাবশালী নেতা তোফায়েল আহম্মেদ। ভোলা-২ (বোরহানউদ্দিন-দৌলতখান) আসনের এমপি আলী আজম মুকুল এবং ভোলা-৩ (লালমোহন-তজুমদ্দিন) আসনের এমপি নুরুন্নবী চৌধুরী শাওন নিজ নির্বাচনী এলাকার নেতাকর্মীদের সাথে ঈদ উদ্যাপন করেছেন। তবে এলাকায় ছিলেন না এসব আসনে বিএনপির মনোনয়ন পাওয়া মেজর (অব.) হাফিজ ও হাফিজ ইব্রাহিম।
এছাড়া বরগুনার দুটি আসনের দুইজন এমপির মধ্যে ধীরেন্দ্র দেবনাথ শম্ভু এলাকায় থাকলেও বরাবরের মতো এবারও ছিলেন না বরগুনা-২ আসনের সাংসদ শওকত হাচানুর রহমান রিমন। এ দুই আসনে বিএনপির মনোনয়নে নির্বাচন করা নেতাদের কেউই ঈদে এলাকায় ছিলেন না।