২৪ ঘন্টা পর লালমনিরহাটের পাটগ্রাস উপজেলার বুড়িমারী স্থলবন্দরে অতিরিক্ত ফি দেওয়া কেন্দ্র করে বন্দরের উপ-পরিচালক (ডিডি) মনিরুল ইসলামের অপসারণ ও সড়ক অবরোধ প্রত্যাহার করে নিয়েছে পরিবহন শ্রমিকরা। এ ব্যাপারে পাটগ্রাম সহকারী কমিশনার (ভূমি) দীপক কুমার দেব শর্মাকে প্রধান করে একটি তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে।
মঙ্গলবার( ১১ জুন) দুপুরের দিকে বুড়িমারী স্থলবন্দর আমদানি-রপ্তানিকারক অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি ও পাটগ্রাম উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান রুহুল আমীন বাবুলের আশ^াসে অবরোধ তুলে নেয় শ্রমিকরা।
স্থানীয় ও স্থলবন্দর সুত্রে জানা গেছে, ভারত, নেপাল ও ভুটানের যাত্রীরা প্রতিদিন লালমনিরহাটের পাটগ্রাম উপজেলার বুড়িমারী স্থলবন্দর হয়ে পারাপার হন। পাসপোর্টধারী যাত্রী পারাপারে বন্দর ব্যবহারের জন্য সরকার নির্ধারিত ৪২ টাকা ৭৫ পয়সা ফি বন্দর কর্তৃপক্ষকে পরিশোধ করতে হয়। পাসপোর্টধারী যাত্রীরা দীর্ঘদিন ধরে ওই ফি পরিশোধ করে এলেও সোমবার (১০ জুন) দুপুরে স্থলবন্দরের ডিডি মনিরুল ইসলাম যাত্রী প্রতি ৪২ টাকা ৭৫ পয়সার স্থলে একশ টাকা দিতে হবে বলে বন্দরের যাত্রী পরিবহনে নিযুক্ত পরিবহন শ্রমিকদের জানান। অতিরিক্ত এ টাকা দিতে অস্বীকার করায় পরিবহন শ্রমিকদের অকথ্য ভাষায় গালমন্দ করাসহ শ্রমিকদের লাঞ্ছিত করা হয়। এ ঘটনায় বন্দরের ডিডি মনিরুল ইসলামের অপসারণ দাবি করে বুড়িমারী স্থলবন্দর নৈশবাস কোচ-মাইক্রোবাস শ্রমিক ইউনিয়ন তাৎক্ষণিক সড়ক অবরোধ করে। ফলে বুড়িমারী স্থলবন্দরের ওপারে ভারতের চ্যাংরাবান্ধা স্থলবন্দরে পণ্যবাহী কয়েকশ গাড়ি আটকা পড়ে যায়। খবর পেয়ে লালমনিরহাট সহকারী পুলিশ সুপার (বি সার্কেল) তাপস সরকার, পাটগ্রাম সহকারী কমিশনার (ভুমি) দীপক কুমার দেব শর্মা, পাটগ্রাম থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মনসুর আলী সরকার বুড়িমারী স্থলবন্দর নৈশবাস কোচ-মাইক্রোবাস শ্রমিক ইউনিয়নের সঙ্গে কথা বলে যথাযথ পদক্ষেপের আশ্বাস দিলেও পরিবহন শ্রমিকরা অবরোধ তুলে না নিয়ে বিক্ষোভ করতে থাকে।
পরে তারা রাত সাড়ে ১১টার দিকে বন্দরের উপপরিচালক (ডিডি) মনিরুল ইসলামের সাথে বৈঠক করে। এতেও কোন সমাধান হয়নি। মঙ্গলবার (১১ জুন) সকাল সাড়ে ১২টার দিকে আবারও বৈঠকের সিদ্ধান্ত নেয় বুড়িমারী স্থলবন্দর আমদানি-রপ্তানিকারক অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি ও পাটগ্রাম উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান রুহুল আমীন বাবুল। এই বৈঠকে পাটগ্রাম সহকারী কমিশনার (ভূমি) দীপক কুমার দেব শর্মাকে প্রধান করে একটি তদন্তটিম গঠন করে পরিবহন শ্রমিকদের কাছে ৭দিনের সময় নিয়ে পরিবহন শ্রমিকদের আশ্বাস দিলে অবরোধ প্রত্যাহার করে নেন।
বুড়িমারী স্থলবন্দর নৈশবাস কোচ-মাইক্রোবাস শ্রমিক ইউনিয়নের সাধারণ সম্পাদক তৌফিক ইমাম আজম জানান, স্থলবন্দরের ডিডি সম্পূর্ণ অন্যায়ভাবে পার্সপোর্টধারী যাত্রীদের হয়রানির করে অতিরিক্ত একশ টাকা সার্ভিসচার্জ আরোপ করেছেন। এছাড়াও তিনি অকথ্য ভাষায় শ্রমিকদের গালি- গালাজ করেন। তিনি দ্রুত এর সমাধান ও তার আপসারণের দাবী জানান।
বুড়িমারী স্থলবন্দর আমদানি-রপ্তানিকারক অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি ও পাটগ্রাম উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান রুহুল আমীন বাবুল জানান, পরিবহন শ্রমিকদের নিয়ে রাতভর বৈঠক করেও সমাধান হয় নি। পরে দুপুরে বন্দরের উপ-পরিচালক (ডিডি) মনিরুল ইসলামের সাথে বৈঠকে শেষে তাদের আশ্বাস দিলে তারা অবরোধ তুলে নেয় এবং সেই সাথে পাটগ্রাম সহকারী কমিশনার (ভুমি) দীপক কুমার দেব শর্মাকে প্রধান করে তদন্তটিম করা হয়েছে।
বাংলাদেশ স্থলবন্দর কর্তৃপক্ষের সদস্য (অর্থ ও প্রশাসন) ও অতিরিক্ত সচিব মোঃ আলাউদ্দিন ফকির বলেন, ‘বুড়িমারী স্থলবন্দরের ইমিগ্রেশন কর্মকর্তার যোগসাজসে কতিপয় দালাল পাসপোর্টধারী যাত্রীদের পাসপোর্ট হাতিয়ে নিয়ে সরকার নির্ধারিত ফি পরিশোধ না করেই অবৈধ সুবিধা লুফে নিত। এটা বন্ধ করতেই বন্দরের উপ-পরিচালক মনিরুল ইসলাম ব্যবস্থা নেওয়ায় ঘটনা ভিন্ন খাতে প্রবাহিত করতে সড়ক অবরোধের ঘটনা সাজিয়েছেন তারা। বিষয়টি সরকারের ঊর্দ্ধতন কর্তৃপক্ষকে অবহিত করা হয়েছে।’