৮৫ বছর বয়সের অতিশিপর বৃদ্ধা রশি বেগম। বয়সের ভারে রোগ-শোক ও অযতœ অবহেলায় এখন স্পষ্ট করে কথা বলতে পারছেন না। শুধুই তাকিয়ে থাকেন ফ্যাল ফ্যাল করে। চলার কোন সামর্থ্য নেই। নেই অর্থ সম্পত্তি। শুধু ছিল পৈতৃক সূত্রে পাওয়া বেশ কিছু সম্পত্তি।
স্বামীর মৃত্যুর পর একমাত্র পুত্র সন্তানকে নিয়ে ওই শেষ সম্বলটুকু আকড়ে বাঁচতে চেয়েছিলেন বিধবা রশি বেগম। কিন্তু একমাত্র পুত্র ইউনুস আলী ফকিরের কারণে তা সম্ভব হয়নি। জেলার আগৈলঝাড়া উপজেলার বাগধা ইউনিয়নের খাজুরিয়া গ্রামের কাশেম ফকির ও রশি বেগম দম্পত্তির একমাত্র পুত্র ইউনুস আলী।
স্থানীয় একাধিক সূত্রে জানা গেছে, রশি বেগমের কোন ভাই-বোন না থাকায় বাবার সকল সম্পত্তির মালিক হন রশি নিজেই। কাশেম ফকিরের মৃত্যুর পর একমাত্র পুত্রের সুখের জন্য মা রশি বেগম নিজের বাবার বাড়ির সমস্ত সম্পত্তি বিক্রি করে একমাত্র পুত্রের হাতে টাকা তুলে দিয়েছিলেন। সেই টাকা দিয়েই সম্প্রতি সময়ে ইউনুস আলী নির্মাণ করেন সুরম্য দ্বিতল পাকা ভবন। এরপর ওই বাড়ি থেকে রশি বেগমকে তাড়িয়ে দিয়ে ইউনুস আলী তার স্ত্রী ও সন্তানদের নিয়ে পাকা ভবনে বসবাস করে আসছে। গর্ভধারীনি মা রশি বেগমের ওই দ্বিতল পাকা ভবনে ঠাঁই না হলেও প্রতিবেশিদের সহায়তায় ভবনের পাশে বাবার বাড়ির অন্য ওয়ারিশদের সম্পত্তিতে টিনের একচালা খুপরি ঘরে ঠাঁই মিলেছে অতিশিপর বৃদ্ধা রশি বেগমের।
রশি বেগমের নিকট আত্মীয় (খালু) খাজুরিয়া গ্রামের বাসিন্দা খলিল মিয়া জানান, ছেলের পাকা ভবনে বৃদ্ধা মা থাকলে মান-সম্মান হানীর কারণে রশি বেগমকে বাড়ি থেকে বের করে দেয়া হয়। পরবর্তীতে স্থানীয়রা ইউনুস আলীর ভবনের পাশের একটি পরিত্যক্ত ঝুঁপরি ঘরে বৃদ্ধা রশি বেগমকে আশ্রয় দিলেও গত দশ বছর যাবত ইউনুস তার মায়ের কোন খোঁজখবর কিংবা খরচ বহন করছে না। রোগে-শোকে রশি বেগম অসুস্থ হলেও তার কোন খোঁজ খবর নেয় না একমাত্র সন্তান ইউনুস আলী। নাতিরাও খোঁজ নেয়না তাদের দাদির। প্রতিবেশিদের দেয়া খাবার খেয়ে বেঁচে আছেন রশি বেগম।
বৃহস্পতিবার দুপুরে আগৈলঝাড়া থানার ওসি মোঃ আফজাল হোসেন জানান, গত ৯ জুন রাতে একই বাড়ির মাহাবুবুর রহমানের পাঁচ মাসের অন্তঃসত্ত্বা স্ত্রী হালিমা বেগমকে মারধর করে ইউনুস আলী। ওই ঘটনায় হালিমার ভাই নাসির মিয়া বাদী হয়ে থানায় মামলা দায়ের করেন। এ সময় তিনি গর্ভধারীনি মা অতিশিপর বৃদ্ধা রশি বেগমের সাথে তার একমাত্র পুত্র ইউনুস আলী অমানবিক ঘটনাটি জানতে পেরে গভীরভাবে মর্মাহত হন। পরবর্তীতে অন্তঃসত্ত্বা স্ত্রী হালিমা বেগমের উপর হামলার ঘটনায় তাৎক্ষনিক মামলা গ্রহণ করে অভিযুক্ত ইউনুস আলীকে গ্রেফতারের জন্য থানা পুলিশকে কঠোর নির্দেশ প্রদান করেন। ওই মামলায় অভিযুক্ত আসামি ইউনুস আলীকে গ্রেফতার করে বুধবার আদালতের মাধ্যমে জেলহাজতে প্রেরণ করা হয়েছে।