তিস্তার পানি বৃদ্ধি হঠাৎ পেয়ে বন্যায় ডুবে গেছে তিস্তা নদীর তীরবর্তি সব বিদ্যালয়। পাঠদান বিঘœ ঘটলেও বন্যার খবর জানেন না জেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিসার(ডিপিইও)।
বুধবার (১৯ জুন) সকালে লালমনিরহাটে তিস্তার ডান তীরের বিদ্যালয় গুলোর চার দিকে অথৈ পানি দেখা যায়।
স্থানীয়রা জানান, উজান থেকে নেমে আসা পাহাড়ি ঢলে মঙ্গলবার(১৮ জুন) হঠাৎ তিস্তার নদীর পানি বৃদ্ধি পেয়ে নদীর তীরবর্তি অঞ্চলগুলো বন্যায় প্লাবিত হয়। পানি বন্দি হয়ে পড়ে গোটা জেলার প্রায় ৮হাজার পরিবার। বন্যার পানিতে তলিয়ে যায় বেশ কিছু শিক্ষা প্রতিষ্ঠান। চার দিকে অথৈ পানিতে রাস্তা ঘাট ডুবে যাওয়ায় এবং শিক্ষার্থীদের বিদ্যালয়ে পাঠানো অনিরাপদ হয়ে পড়ায় উদ্বিঘœ হয়ে পড়েছেন অভিভাবকরা।
জেলার আদিতমারী উপজেলার মহিষখোচা ইউনিয়নে একটি উচ্চ বিদ্যালয়সহ ৫টি প্রাথমিক বিদ্যালয় বন্যার পানিতে নিমজ্জিত হয়ে পড়েছে। বিদ্যালয়গুলো হচ্ছে, গোবর্দ্ধন হায়দারীয়া উচ্চ বিদ্যালয়, গোবর্দ্ধন সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়, আদর্শপাড়া এমএইচ সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়, ইসমাইলপাড়া সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়, বাহাদুর পাড়া সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয় ও গোবর্দ্ধন চর সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়। এছাড়াও জেলার অনেক বিদ্যালয়ে বন্যার পানিতে পাঠদানে বিঘœ ঘটে।
বিদ্যালয় যাওয়ার রাস্তা দিয়ে বন্যার পানি প্রবাহিত হওয়ায় কলাগাছের ভেলায় চরে শিক্ষার্থীরা বিদ্যালয় মুখি হচ্ছে। এমন পরিস্থিতিতে বিদ্যালয়ের পাঠদান স্থগিত রাখার দাবি জানান অভিভাবকরা। তাদের দাবি রাস্তা ঘাট ডুবে যাওয়ায় শিক্ষার্থীদের বিদ্যালয় যাত্রা অনিরাপদ এবং বিদ্যালয়গুলোর মাঠে হাঁটু পানি ও কিছু বিদ্যালয়ে শ্রেণি কক্ষেও বন্যার পানি ঢুকে পড়েছে। তাই অনেক অভিভাবক তাদের ছেলে মেয়েদের বিদ্যালয়ে পাঠাচ্ছে না।
মহিষখোচা ইউনিয়ন পরিষদের সদস্য মতিয়ার রহমান জানান, তার ইউনিয়নের ৬টি বিদ্যালয়ে পাঠদানে অনুপযোগী হয়ে পড়েছে। চার দিকে অথৈ পানিতে কোমলমতি শিশুদের বিদ্যালয়ে পাঠানো অনিরাপদ হয়ে পড়েছে। এ ছাড়াও কয়েকটি বিদ্যালয়ের শ্রেণি কক্ষে বন্যার পানি প্রবেশ করায় পাঠদানে সম্পুর্নরুপে অনুপযোগী হয়ে পড়েছে। এমন প্রাকৃতিক দুর্যোগে বিদ্যালয়ে পাঠদান স্থগিত রাখার দাবি জানান তিনি।
গোবর্দ্ধন সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক শরিফা আক্তার জানান, মঙ্গলবার সারাদিনই ভাল ছিল। বুধবার বিদ্যালয়ে এসে দেখেন বিদ্যালয়ের চার দিকে পানি আর পানি। বিদ্যালয়ে যাওয়ার রাস্তাও নেই। তাই স্থানীয়দের সহায়তায় কলাগাছে ভেলায় শিক্ষার্থীদের বিদ্যালয়ে নিচ্ছেন তিনি। তবে বিষয়টি সকাল ৯টায় উপজেলা শিক্ষা অফিসারকে মোবাইলে অবগত করেছেন। কিন্তু বিদ্যালয় চালিয়ে যেতে বলা হয়েছে। এজন্য অনিরাপদ হলেও ভেলায় করে শিক্ষার্থীদের বিদ্যালয়ে নিচ্ছেন বলে জানান তিনি।
গোবর্দ্ধন চর সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক কাজি শফিকুল ইসলাম জানান, তার বিদ্যালয়ের শ্রেনি কক্ষে হাঁটু পানি হওয়ায় পাঠদানে সম্পুর্নরুপে অনুপযোগি হওয়ায় শিক্ষার্থীরা বিদ্যালয়ে আসেনি। নদীর কোল ঘেসা ও নিচু অঞ্চলে হওয়ায় সামান্য বন্যায় শ্রেনি কক্ষে পানি ঢুকে পড়ে।
শুধু আদিতমারী উপজেলায় নয়। জেলার ৫টি উপজেলায় তিস্তার ডান তীরের অনেক বিদ্যালয়ে এমন চিত্র বিরাজ করছে। তবে তিস্তায় পানি প্রবাহ কমে যাওয়ায় পাটগ্রাম ও হাতীবান্ধা উপজেলায় বন্যা পরিস্থিতি কিছুটা উন্নতি ঘটলেও বাকী তিন উপজেলায় অপরিবর্তিত রয়েছে। পানি উন্নয়ন বোর্ড বলছে, সন্ধ্যার মধ্যে পুরো জেলায় বন্যা পরিস্থিতির উন্নতি ঘটবে।
জেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা জাহাঙ্গীর আলম বলেন, বিদ্যালয়ের শ্রেণি কক্ষে পানি বা জেলায় বন্যা চলছে সেটা আমার জানা নেই। কেউ বিষয়টি বলেনি। তবে উপজেলা শিক্ষা অফিসারদের মাধ্যমে খবর নিয়ে ব্যবস্থা নেয়া হবে। জেলায় কতটি বিদ্যালয় বন্যা কবলিত এলাকায় রয়েছে সেটাও তার জানা নেই বলেও জানান তিনি।
দেশের বৃহত্তম সেচ প্রকল্প তিস্তা ব্যারাজের নির্বাহী প্রকৌশলী রবিউল ইসলাম জানান, মঙ্গলবার তিস্তার পানি প্রবাহ বিপদ সীমার ৩ সেন্টিমিটার উপর দিয়ে প্রবাহিত হওয়ায় বন্যার সৃষ্টি হয়। এ পয়েন্টে স্বাভাবিক পানি প্রবাহ ৫২ দশমিক ৬০ সেন্টিমিটার। তবে মধ্যরাত থেকে পানি প্রবাহ কমতে থাকে। বুধবার(১৯ জুন) সকালে এ পয়েন্টি পানি প্রবাহ রেকর্ড করা হয় ৫২ দশমিক ২৫ সেন্টিমিটার। যা বিপদ সীমার ৩৫ সেন্টিমিটার নিচে। সন্ধ্যার মধ্যে গোটা জেলার বন্যা পরিস্থিতি উন্নতি ঘটবে।