গৃহ কর আদায়ে এবার ভিন্ন কৌশল গ্রহণ করেছে বরিশাল সিটি করপোরেশন কর্তৃপক্ষ। তারা খেলাপি ব্যক্তিদের এলাকায় গিয়ে মাইকিং করে প্রকাশ্যেই তাদের মাল ক্রকের হুশিয়ারী দিচ্ছেন। এতে করে নিজ এলাকায় ইমেজ সংকটে পরেছেন গৃহ কর খেলাপি ভিআইপি এবং ভি-ভিআইপি ব্যক্তিরা। তাই ইমেজ রক্ষায় বাধ্য হয়েই বকেয়া কর পরিশোধে আগ্রহী হচ্ছেন খেলাপিরা।
সিটি কর্পোরেশনের কর ধার্য শাখা সূত্রে জানা গেছে, নগরীতে এক হাজার ৫২ জন ব্যক্তি রয়েছেন যারা নিয়মিত গৃহ কর পরিশোধ করছেন না। ফলে তাদের কাছে কয়েক বছরের গৃহকর বকেয়া পরেছে। যার মধ্যে ১৭৯জন রয়েছেন যাদের খেলাপির পরিমান অনেক বেশি। এদের কাছে মোট এক কোটি ৮৩ লাখ ১৫ হাজার ৪৬৮ টাকা বকেয়া রয়েছে। তারা কেউ কেউ রয়েছেন ১৯৯৩ সাল থেকে গৃহ কর পরিশোধ করছেন না। এদেরমধ্যে অনেক ভিআইপি এবং ভি-ভিআইপিও রয়েছেন।
সিটি কর্পোরেশনের কর কর্মকর্তা মোহাম্মদ আলী বাবলু জানান, এসব ব্যক্তিদের গৃহ কর পরিশোধের জন্য একাধিকবার চিঠি দেয়া হয়েছে। কিন্তু কিছুতেই তারা বকেয়া কর পরিশোধ করেননি। তাই বকেয়া আদায়ের কৌশল হিসেবে মাইকিং কার্যক্রম শুরু করা হয়েছে। যা রবিবার থেকে শুরু হয়েছে। কার্যক্রমের অংশ হিসেবে যাদের গৃহ কর বকেয়া রয়েছে তাদের এলাকায় গিয়ে মাইকিং করা হচ্ছে। গৃহ কর খেলাপি ব্যক্তি যেই হোক সরাসরি তার নাম ধরে বকেয়া পরিশোধের জন্য আহ্বান জানানো হচ্ছে। অন্যথায় তাদের মাল ক্রকের হুশিয়ারী দেয়া হচ্ছে মাইকিংয়ের মাধ্যমে।
সিটি কর্পোরেশনের জনসংযোগ কর্মকর্তা বেলায়েত হোসেন বাবলু বলেন, কর ধার্য্য শাখার তথ্য অনুযায়ী গৃহ কর খেলাপী ১৭৯জনের মধ্যে ভিআইপি এবং রাজনৈতিক ব্যক্তিবর্গ রয়েছেন। যারমধ্যে বিশিষ্ট ব্যবসায়ী শফিকুল আলম গুলজারের কাছে ২০১৬ সাল থেকে হোটেল এরিনার গৃহ কর বকেয়া রয়েছে। তার কাছে বকেয়ার পরিমান দুই লাখ ১০ হাজার ছয়শ’ টাকা। মাইকিং এর পরে এরইমধ্যে তিনি কর পরিশোধের জন্য সিটি কর্পোরেশনে এসে খোঁজ খবর নিয়ে গেছেন।
এছাড়া মহানগর যুবলীগের আহ্বায়ক ও সাবেক ভিপি মেজবাহ উদ্দিন জুয়েলের কাছে ২০১৭ সাল থেকে ৭৯ হাজার ৩৮০ টাকা, সাবেক কমিশনার মোফাজ্জেল আলী খান মিন্টুর দুটি হোল্ডিং এর বিপরীতে ১৯৯৩ সাল থেকে এ পর্যন্ত ৮৪ হাজার ২৪০টাকা, জামায়াত নেতা জহির উদ্দিন মোঃ বাবরের কাছে ২০১৫ সাল থেকে ৮৪ হাজার ছয়শ’ টাকা বকেয়া রয়েছে।
নগরীর বটতলা চৌমাথা এলাকার এ্যাপেক্স হোমিওপ্যাথিক কলেজের অধ্যক্ষ কাছে ২০১৬ সাল থেকে এক লাখ ছয় হাজার পাঁচশ’ টাকা, মহানগর স্বেচ্ছাসেবক লীগের আহ্বায়ক আজিজুর রহমান শাহিনের কাছে ২০০৯ সাল থেকে এ পর্যন্ত এক লাখ ১২ হাজার, ১৪নং ওয়ার্ডের সাবেক কাউন্সিলর শহিদুল আলম নাসিরের কাছে ৬৫ হাজার, জেলা মৎস্য আড়ৎদার অ্যাসোসিয়েশনের কাছে ২০১৫ সাল থেকে ৮৮ হাজার চারশ’ টাকা, বরিশাল চেম্বার অব কমার্স এ- ইন্ডাস্ট্রিজের সভাপতির কাছে ২০১৩ সাল থেকে ৮৭ হাজার পাঁচশ’ টাকা, হাটখোলা এলাকার বিশিষ্ট ব্যবসায়ী হুমায়ুন হাওলাদার গংদের কাছে ২০১২ সাল থেকে দুই লাখ ৫৬ হাজার ২৩০ টাকা গৃহ কর বকেয়া রয়েছে।
কর কর্মকর্তা মোহাম্মদ আলী বাবলু জানান, মাইকিং কার্যক্রম শুরুর পরে বেশ সফলতা আসতে শুরু করেছে। মাইকিং শুরুর পর থেকে অনেকেই বকেয়া কর পরিশোধের জন্য এগিয়ে আসতে শুরু করেছেন। তিনি বলেন, একটি নির্ধারিত সময় পর্যন্ত মাইকিং কার্যক্রম চলবে। এরমধ্যে যারা তাদের বকেয়া গৃহ কর পরিশোধ না করবে তাদের বাড়ি বাড়ি গিয়ে মাল ক্রকের অভিযান চালানো হবে। এতে করে কারোর মানহানি ঘটলে সে জন্য নগর কর্তৃপক্ষ দায়ি থাকবে না।