ব্যাটারি চালিত ইজিবাইকের নগরীতে পরিনত হয়েছে বরিশাল। ৫৮ বর্গ কিলোমিটার নগরীর সিংহভাগ সড়ক দখল করে আছে তিন চাকার ইজিবাইক। এসব যানের চালকদের নেই লাইসেন্স কিংবা ইজিবাইক পরিচালনার কোন অভিজ্ঞতা। ফলে আইন লঙ্ঘন করে অনভিজ্ঞ চালকরা ব্যস্ততম সড়কের মাঝখানে গাড়ি রেখেই যত্রতত্রভাবে যাত্রী ওঠানামা করানোর কারণে জনগুরুত্বপূর্ণ সড়কে যানজটের পাশাপাশি ছোট-বড় দুর্ঘটনা লেগেই রয়েছে।
সূত্রমতে, আইন লঙ্ঘন করে স্থানীয়ভাবেই তৈরী হচ্ছে এসব অটোরিকসা। যা বিক্রি করা হচ্ছে চড়ামূল্যে। দিনে দিনে অটোরিকসা শৃঙ্খলার বাইরে চলে যাওয়ায় তা নিয়ন্ত্রনে ব্যর্থ হচ্ছে ট্রাফিক বিভাগ। বরিশাল সিটি করপোরেশন সূত্রে জানা গেছে, সিটি কর্পোরেশনের দ্বিতীয় পরিষদের তৎকালিন মেয়র শওকত হোসেন হিরনের আমলে নগরীতে প্রথম চালু হয় ব্যাটারি চালিত অটোরিকসা। তৎকালীন মেয়র সিটি করপোরেশন থেকে দেড় হাজারের মতো অটোরিকসার লাইসেন্স প্রদান করেছিলেন। পরবর্তীতে সাবেক ওই মেয়রের সময়েই দেশব্যাপী অটোরিকসা নিষিদ্ধ করা হয়। কিন্তু রাজনৈতিক স্বার্থে সাবেক মেয়র নগরীতে অটোরিকসা চলাচল অব্যাহত রাখেন।
পরবর্তীতে তৃতীয় পরিষদের সাবেক মেয়র আহসান হাবিব কামাল দায়িত্ব গ্রহন করার পর তার সময়ে মন্ত্রণালয়ের নির্দেশে অটোরিকসার লাইসেন্স নবায়ন এবং নতুন লাইসেন্স প্রদান কার্যক্রম নিষিদ্ধ ছিলো। কিন্তু তারমধ্যেও গোপনে অটোরিকসার লাইসেন্স প্রদান করেন তৎকালীন সিটি মেয়র আহসান হাবিব কামাল। যেকারণে বর্তমানে সিটি কর্পোরেশনে তালিকাভূক্ত অটোরিকসার সংখ্যা দুই হাজার ৬১০টি। তবে বাস্তবে চলাচলকারী অটোরিকসার পরিসংখ্যান জানা নেই নগর ভবন কিংবা নগর পুলিশের। তাদের ধারনা বৈধ-অবৈধ মিলিয়ে নগরীতে চলাচলকারী অটোরিকসার সংখ্যা পাঁচ হাজারেরও অধিক হবে। যা দিন-রাত দাঁপিয়ে বেড়াচ্ছে গোটা নগরী।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে ব্যাটারি চালিত অটোরিকসা শ্রমিক ইউনিয়নের নির্ভরযোগ্য একটি সূত্রে জানা গেছে, সিটি করপোরেশন থেকে দেয়া দুই হাজার ৬১০টি অটোরিকসার টোকেন ব্যবহার করে নগরীতে দ্বিগুন অটোরিকসা চলাচল করছে। কোনটিতে অবৈধভাবে ভুয়া টোকেন ব্যবহার করা হচ্ছে। আবার কিছু অটোরিকসার চালক কৌশলে টোকেট হারানোর ভুয়া তথ্য দিয়ে থানায় সাধারণ ডায়েরী করে সেই কপি গাড়িতে লাগিয়ে প্রকাশ্যেই চলাচল করছে।
সূত্রে আরও জানা গেছে, নগরীর রূপাতলী থেকে কালিজিরা, সাগরদী বাজার থেকে টিয়াখালী সড়ক, নবগ্রাম রোড, বারৈজ্যার হাট, কাউনিয়া মরকখোলার পোল থেকে কাগাশুরা এবং হাটখোলা সড়কে চলাচল করছে এসব অবৈধ অটোরিকসাগুলো।
ট্রাফিক বিভাগের দায়িত্বশীল সূত্রে জানা গেছে, উচ্চ আদালতের দায়ের হওয়া একটি রীট এবং মন্ত্রণালয়ের নির্দেশে ব্যাটারি চালিত অটোরিকসা চলাচল বন্ধ করে দেয়া হয়েছিলো। বিশেষ করে নগরীর সদর রোড এলাকায় হলুদ অটোরিকসা প্রবেশ করতে দেয়া হয়নি। বর্তমানে রাজনৈতিক প্রভাবে ওইসব হলুদ অটোরিকসাগুলো পুনরায় সদররোডে অবাধে চলাচল করায় নগরীর প্রানকেন্দ্রে (সদর রোড, ফজলুল হক এভিনিউসহ গুরুত্বপূর্ণ সড়কে) যানজট লেগেই রয়েছে।
সরেজমিনে দেখা গেছে, নগরীতে যেসব অটোরিকসা চলাচল করছে তার সিংহভাগ চালকের নেই লাইসেন্স বা কোন প্রকার অভিজ্ঞতা। সিটি করপোরেশন এবং ট্রাফিক আইন অনুযায়ী কোন শিশু, কিশোর অটোরিকসার চালক হতে পারবে না। লাইসেন্সধারী চালককে অবশ্যই প্যান্ট পরে নিতে হবে। চালকের দুই পাশে কোন যাত্রী বহন করতে পারবে না। আইনে এমনটি থাকলে বাস্তবে তার কোন অস্থিত্ব পাওয়া যায়নি।
এছাড়াও ব্যস্ততম সড়কের পাশে যত্রতত্রভাবে অটোরিকসা থামিয়ে যাত্রী ওঠা-নামা এবং সড়ক আটকে স্ট্যান্ড বানিয়ে মানুষের প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি করা হচ্ছে। একারণে যানজট ও দূর্ঘটনা লেগেই রয়েছে। সুশীল সমাজের মতে, শুধুমাত্র চলাচলেই সীমাবদ্ধ নয়। সুনির্দিষ্ট নিতিমালার অভাবে থামানো যাচ্ছেনা অটোরিকসা নির্মানের কাজ। নগরীর ভাটারখাল, কেডিসি, বান্দ রোড এবং শিশু পার্ক কলোনীসহ বিভিন্নস্থানের ওয়ার্কশপে তৈরী হচ্ছে অটোরিকসা। যা চড়ামূল্যে বিক্রি করা হচ্ছে। ফলে এক শ্রেণির ব্যবসায়ীরা লাখ লাখ টাকা আয় করলেও সরকার হারাচ্ছে রাজস্ব। প্রকাশ্যে এমন আইন লঙ্ঘন করা হলেও রহস্যজনক কারণে সংশ্লিষ্ট প্রশাসন তাদের বিরুদ্ধে প্রয়োজনীয় কোন ব্যবস্থা নিচ্ছেনা।