ঢাক-ঢোলপিটিয়ে প্রায় নয় মাস আগে রাজশাহী মহানগরীতে ডিজিটাল ট্রাফিকিং ব্যবস্থার উদ্বোধন করলেও এখনো সনাতন পদ্ধতিতেই চলছে কার্যক্রম। অব্যবস্থাপনার কারণে মুখ থুবড়ে পড়েছে এখানকার ই-ট্রাফিকিং ব্যবস্থা। যে কারণেই ভোগান্তি থেকে রেহাই পাচ্ছেনা রাজশাহী মহানগরীতে চলাচলরত গাড়ির মালিক বা চালকরা। তবে আরএমপির দাবি ই-ট্রাফিকিং ব্যবস্থা চালু না হলেও মামলা দায়েরের ক্ষেত্রে বেশীর ভাগই ইপ্রসেসিংয়ের মাধ্যমে হচ্ছে।
এর আগে গত বছরের ২৪ সেপ্টেম্বর আরএমপির ডিজিটাল ট্রাফিকিং ব্যবস্থার উদ্বোধনকালে তৎকালীন রাজশাহী মেট্রোপলিটন পুলিশ (আরএমপি) কমিশনার একেএম হাফিজ আক্তার বলেছিলেন, ই-ট্রাফিকিং প্রসেস চালুর কারণে ভোগান্তি থেকে রেহাই পাবে গাড়ির মালিক ও চালকরা। কিন্তু উদ্বোধনের প্রায় নয় মাস অতিবাহিত হতে চললেও পরিস্থিতি এখনো আগের মতোই রয়েছে বলে অভিযোগ যানবাহন সংশ্লিষ্টদের।
জানা গেছে, এখনো আরএমপির ট্রাফিক বিভাগের সব সার্জেন্টের হাতে পৌঁছেনি ই-ট্রাফিকিং প্রসিকিউশন প্রসেসের যন্ত্র। ফলে আগের মতোই সনাতন পদ্ধতিতে এখনো ট্রাফিক আইনের মামলা হচ্ছে। আর উদ্বোধনের পর এ যন্ত্রে ক্রুটি দেখা দেয়ায় এখনো হাতে গোনা কয়েকয়টি দিয়ে ই-ট্রাফিকিং-এ মামলা করা হচ্ছে। তবে এ পর্যন্ত ব্যাটারি চালিত অটোরিকশার ক্ষেত্রে ই-ট্রাফিকিং চালু হয়নি। অথচ রাজশাহী মহানগরীতে প্রায় ৩০ হাজার অটোরিকশার চলাচল। ট্রাফিক আইনও সবচেয়ে বেশি লঙ্ঘন করে তিন চাকার এই পরিবহনটি।
আরএমপির ট্রাফিক বিভাগ সূত্রে জানা গেছে, ট্রাফিক বিভাগের দায়ের করা মামলার জরিমানা আধুনিক পদ্ধতিতে সহজে আদায় করতে গত বছরের ৯ মে আরএমপির সাথে ইউনাইটেড কর্মাশিয়াল ব্যাংক (ইউসিবি) ও গ্রামীণফোনের চুক্তিপত্র সই হয়। আরএমপির তৎকালীন পুলিশ কমিশনার মাহবুবর রহমান ওই চুক্তিপত্রে স্বাক্ষর করেন। এরপর তিনি বদলি হয়ে গেলে ওই বছরের ২৪ সেপ্টেম্বর আরএমপির তৎকালীন কমিশনার একেএম হাফিজ আক্তার আনুষ্ঠানিকভাবে ই-ট্রাফিকিং প্রসিকিউশন প্রসেসের উদ্বোধন করেন। কিন্তু সম্প্রতি আরএমপি তে যোগদানকৃত পুলিশ কমিশনার হুমায়ুন কবীরও এই আধুনিক ট্রাফিক ব্যবস্থায় প্রবেশ করতে পারেনি।
অথচ, ই-ট্রাফিকিং প্রসিকিউশন প্রসেসের উদ্বোধনের সময় আরএমপির পক্ষ থেকে বলা হয়েছিল, জরিমানার টাকা পরিশোধ করতে চালক বা গাড়ির মালিকদের আর হয়রানিতে পড়তে হবে না। তাদের নির্দিষ্ট সময়ে ট্রাফিক অফিসে গিয়েও জরিমানার টাকা পরিশোধ করতে হবে না। ই-ট্রাফিকিং প্রসিকিউশন ব্যবস্থার মাধ্যমে সাথে সাথেই জরিমানা পরিশোধ করে তারা রশিদ নিতে পারবেন। এর মাধ্যমে ট্রাফিক সেবার মান বৃদ্ধি পাবে। কিন্তু এখনো ট্রাফিক বিভাগের বেশিরভাগ মামলা হয় আগের মতো সনাতন পদ্ধতিতেই। চালক ও মালিকদের এখনো মামলার জরিমানার টাকা পরিশোধ করতে যেতে হচ্ছে ট্রাফিক অফিসে। দীর্ঘ লাইনে দাঁড়িয়ে সেখান থেকে সংগ্রহ করতে হয় মামলা কাগজপত্র। ফলে উদ্বোধনের নয় মাসেও ঘোষিত সেবা না পেয়ে ক্ষুব্ধ হয়ে এই বিভাগ সম্পর্কে নীতিবাচক কথা বলছেন যানবাহন সংশ্লিষ্টরা।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, রাজশাহী মহানগরীর উপকণ্ঠ আমচত্বর, বালিয়া ও কাটাখালি এলাকায় সবচেয়ে বেশি সক্রিয় থাকে ট্রাফিক পুলিশ। যে কারণে এসব এলাকাতেই সবচেয়ে বেশি মামলা হয়। কিন্তু এসব এলাকায় ইউসিবি ব্যাংকের ইউ ক্যাশ এজেন্ট নেই। ফলে সেখানে ডিজিটাল পদ্ধতিতে মামলা দেয়া হলেও চালকরা ঘটনাস্থলেই জরিমানার অর্থ পরিশোধ করতে পারেন না। যে কারণে ঘটনাস্থলেই মামলা শেষ হয় না। ট্রাফিক বিভাগের এমন অব্যবস্থাপনার কারণে ই-ট্রাফিকিং প্রসিকিউশন প্রসেস মুখ থুবড়ে পড়েছে বলেও অভিমত যানবাহন সংশ্লিষ্টদের।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে আরএমপির একজন ট্রাফিক সার্জেন্ট বলেন, ইসিবি ব্যাংকের সঙ্গে চুক্তি অনুযায়ী, মহানগর এলাকার ২৫টি স্থানে ব্যাংকটির ইউ ক্যাশ এজেন্ট পয়েন্ট স্থাপন করার কথা ছিল। কিন্তু বেশিরভাগ এলাকাতেই এখনো ইউ ক্যাশ পয়েন্ট স্থাপন হয়নি।
এ বিষয়ে আরএমপির মুখপাত্র অতিরিক্ত উপ-পুলিশ কমিশনার (সদর) মো. গোলাম রুহুল কুদ্দুস বলেন, ‘পূর্ণাঙ্গভাবে ই-ট্রাফিকিং ব্যবস্থা চালু না হলেও ই-প্রসিকিউশন কার্যক্রম চলমান রয়েছে। নগরীর সকল সার্জেন্টের কাছেই এখন ই-প্রসিকিউশন যন্ত্র দেওয়া হয়েছে। এক কথায় বলতে গেলে ছয় ভাগের এক ভাগ ই-প্রসিকিউশনের মাধ্যমে মামলা হচ্ছে। এ ব্যবস্থায় গতকাল পর্যন্ত (৩০ জুন) ৬৮৯৮টি মামলা দায়ের করা হয়েছে। এ মামলাগুলোর মধ্যে ৫৭০৬টি নিস্পত্তি হয়েছে। নিস্পত্তিকৃত এসব মামলায় ইউ ক্যাশ পয়েন্টের মাধ্যমে আদায় হয়েছে ২০ লাখ ১২ হাজার টাকা। তবে নগরীতে সবচেয়ে বেশি চলাচলরত ব্যটারীচালিত রিকশাগুলো এ কার্যক্রমের মধ্যে ঢুকাতে পারলে এ প্রতিষ্ঠানের সেবার সুফল দ্রুত ছড়িয়ে পড়ত: মন্তব্য করেন তিনি।’