বাগেরহাটে ট্রেইনি রিক্রুট কনস্টেবল (টিআরসি) পদে ঘুষ ও সুপারিশ ছাড়া এতিম, জেলে, দিনমজুর ও ক্ষুদ্র ব্যবসায়ী পরিবারের ৩১ জনের চাকুরী হয়েছে। কোন প্রকার ঝুট ঝামেলা ও আর্থিক লেনদেন ছাড়া চাকুরী পেয়ে খুশি হয়েছেন নিয়োগপ্রাপ্তরা। এ ছাড়া এই নিয়োগে সরকার ও পুলিশ বিভাগের প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেছেন জেলার সচেতন মহল।
৩১ জন ট্রেইনি রিক্রুট কনস্টেবল (টিআরসি) নিয়োগের জন্য সহ¯্রাধিক চাকুরী প্রত্যাশীদের মধ্য থেকে শারীরীক পরীক্ষা শেষে ৩৮৬ জনকে লিখিত পরীক্ষার জন্য মনোনীত করা হয়। লিখিত পরীক্ষার উত্তরপত্র মূল্যায়ন করে মনস্তাত্তিক ও মৌখিক পরীক্ষার জন্য ১১৩ জনকে নির্বাচন করা হয়। এদের মধ্য থেকে চুড়ান্ত বাছাই শেষে পুরুষ ট্রেইনি রিক্রুট কনস্টেবল পদে সাধারণ কোটায় ১৪ জন, মুক্তিযোদ্ধা কোটায় ৬ জন, পুলিশ পোষ্য কোটায় ২ জন এবং নারী ট্রেইনি রিক্রুট কনস্টেবল পদে ৯জন মোট ৩১ জনকে নিয়োগ প্রদান করা হয়েছে।
পিতামাতা হারা রামপাল উপজেলার মৃত আবদুল কাদেরের মেয়ে লাকসিমা খাতুন বলেন, পিতা-মাতাকে হারিয়ে অনেক কষ্টে লেখা পড়া শিখেছি। খালার বাসায় থেকে পড়াশুনা করতাম। পুলিশে চাকুরীর বিজ্ঞাপন দেখে ১০৩ টাকা ফি দিয়ে আবেদন করি। যাচাই-বাছাই শেষে কোন সুপারিশ ছাড়াই আমার চাকুরী হয়। এতে আমি খুব খুশি হয়েছি। ভাবতেই পারিনি টাকা ও ঘুষ ছাড়া চাকুরী হবে। সবার কাছে আমি দোয়া চাই, পুলিশে চাকুরী করে মানুষের সেবা করতে চাই।
জেলে আলী আকবরের ছেলে মোঃ আকরাম হোসেন বলেন, বাবা নদীতে মাছ ধরে আমাদের সংসার চালাতেন। কিছুদিন ধরে অসুস্থ্যতার কারণে বাবা নদীতে যেতে পারেনা। খুব কষ্টে খেয়ে না খেয়ে পড়াশুনা করছি। এর মধ্যেই পুলিশে চাকুরী হওয়ায় আল্লাহর কাছে শুকরিয়া। একজন সৎ পুলিশ সদস্য হিসেবে মানুষের সেবা করে জীবন কাটাতে চাই।
বাগেরহাট ফাউন্ডেশনের সাধারণ সম্পাদক আহাদ উদ্দিন হায়দার বলেন, সরকারি নিয়োগের ক্ষেত্রে নানা রকমের সমালোচনা থাকে। কিন্তু এবার বাগেরহাটে পুলিশের নিয়োগের ক্ষেত্রে ভিন্নমাত্রা ছিল। এ নিয়োগে স্বচ্ছতা থাকায় পুলিশ ও সরকারের ভাবমুর্তি বৃদ্ধি পেয়েছে। ভবিষ্যতে সরকারি নিয়োগের ক্ষেত্রে এ ধরণের স্বচ্ছতা থাকলে যোগ্যতার ভিত্তিতে দরিদ্র ও অসহায় পরিবারের ছেলে মেয়েরা সরকারি চাকুরী পাবেন।
পুলিশ সুপার পঙ্কজ চন্দ্র রায় বলেন, পুলিশে নিয়োগের ক্ষেত্রে আমরা শতভাগ স্বচ্ছতা নিশ্চিত করেছি। নিয়ম অনুযায়ী শারীরিক, লিখিত, মৌখিক ও মনস্তাত্ত্বিক পরীক্ষা শেষে মেধা ও যোগ্যতার ভিত্তিতে ৩১জনকে ট্রেইনি রিক্রুট কনস্টেবল পদে নিয়োগ প্রদান করা হয়েছে।