বিদেশ মাইক্রোবাস আমদানিতে যে পরিমাণ শুল্ক দিতে হয়, অ্যাম্বুলেন্সের ক্ষেত্রে তার পাঁচ ভাগের এক ভাগ শুল্ক পরিশোধ করতে হয়। আর এ সুযোগকে কাজে লাগিয়ে এক শ্রেণীর অসাধু আমদানিকারক শুল্ক ফাঁকি দিতে অ্যাম্বুলেন্স হিসেবে দেশে গাড়ি আনছে। পরবর্তীতে বিআরটিএর অসাধু কর্মকর্তাদের যোগসাজশে ওসব গাড়ি মাইক্রোবাস হিসেবে বেচাকেনা করা হচ্ছে। তাতে সরকার মোটা অংকের রাজস্ব হারালেও লাভবান হচ্ছে অসাধু আমদানিকারক ও বিআরটিএর এক শ্রেণীর কর্মকর্তা-কর্মচারী। এনবিআর সংশ্লিষ্ট সূত্রে এসব তথ্য জানা যায়।
সংশ্লিষ্ট সূত্র মতে, বিদেশ থেকে বাণিজ্যিকভাবে আমদানিকৃত মাইক্রোবাস সিসি ভেদে প্রযোজ্য শুল্ক্ক হার গড়ে সর্বনিম্ন ১৩০ থেকে সর্বোচ্চ ১৫৪ শতাংশ। কিন্তু অ্যাম্বুলেন্স আমদানিতে শুল্কের পরিমাণ মাত্র ৩২ শতাংশের মতো। বর্তমানে আমদানিকৃত ১৮০০ থেকে ২০০০ সিসি মাইক্রোবাসের ওপর উল্লিখিত হারে শুল্ক আরোপের ফলে মোট মূল্য দাঁড়ায় ২২ থেকে ২৫ লাখ টাকা। আর একই সিসির অ্যাম্বুলেন্সে প্রযোজ্য হারে শুল্ক আদায় করলে এর মোট মূল্য দাঁড়ায় ১২ লাখ থেকে ১৫ লাখ টাকা। অর্থাৎ মাইক্রোবাস অপেক্ষা অ্যাম্বুলেন্সের দাম প্রায় অর্ধেক। অ্যাম্বুলেন্স যেহেতু মানবসেবায় ব্যবহৃত হয়, তাই সরকার তাতে রেয়াতি সুবিধা দিয়ে শুল্ক হ্রাস করেছে। আর এই সুযোগে অসাধু ব্যবসায়ীরা অ্যাম্বুলেন্স হিসেবে গাড়ি আমদানি করে মাইক্রোবাস হিসেবে বিক্রি করছে।
সূত্র জানায়, অ্যাম্বুলেন্স হিসেবে আমদানির পর মাইক্রোবাস হিসেবে ব্যবহার করার বিষয়টি সম্প্রতি চট্টগ্রাম কাস্টম হাউসের নজরে পড়েছে। ওই প্রেক্ষিতে কাস্টমস থেকে আমদানিকৃত অর্ধশতাধিক অ্যাম্বুলেন্সের চেসিস নম্বরসহ বিআরটিএ চেয়ারম্যানের কাছে চিঠি দেয়া হয়। যাতে মাইক্রোবাস হিসেবে গাড়িগুলো নিবন্ধন দেয়া না হয়। চিঠিতে বলা হয়, সম্প্রতি কিছু অসাধু গাড়ি আমদানিকারক কর্তৃক অ্যাম্বুলেন্স হিসেবে আমদানি করা গাড়ি মাইক্রোবাস হিসেবে নিবন্ধন করে ব্যবহার করা হচ্ছে। অ্যাম্বুলেন্স হিসেবে নিবন্ধন না করে মাইক্রোবাস হিসেবে নিবন্ধন করা হলে সরকারের বিপুল পরিমাণ রাজস্ব হারানোর আশঙ্কা রয়েছে। চট্টগ্রামের এসআই অটোমোবাইলস, টারবো অটো, এফবিটি অটোমোবাইলস, জে আর অটোমোবাইলস ও ঢাকার মোহাম্মদপুরের লামিয়া এন্টারপ্রাইজসহ বিভিন্ন আমদানিকারক প্রতিষ্ঠান অ্যাম্বুলেন্স হিসেবে যানবাহনগুলো এদেশে আমদানি করেছে।
সূত্র আরো জানায়, কাস্টমস থেকে চিঠি পাওয়ার পর বিআরটিএর সদর কার্যালয় থেকে বিআরটিএর বিভিন্ন বিভাগীয় কার্যালয়ে ওই গাড়িগুলো মাইক্রোবাস হিসেবে নিবন্ধন না দেয়ার নির্দেশনা দিয়ে চিঠি পাঠানো হয়। ওই চিঠিতে ৫৫টি গাড়ির চেসিস নম্বর উল্লেখ করে বলা হয়েছে, মোটরযানগুলো কাস্টম হাউস চট্টগ্রাম থেকে অ্যাম্বুলেন্স হিসেবে ছাড় করা হয়েছে। সেগুলো অ্যাম্বুলেন্স ছাড়া অন্য কোনো যান হিসেবে যাতে নিবন্ধন দেয়া না হয়।'
এদিকে এ বিষয়ে বাংলাদেশ রিকন্ডিশন্ড ভেহিক্যালস ইম্পোর্টার্স অ্যান্ড ডিলার্স অ্যাসোসিয়েশনের (বারভিডা) সভাপতি হাবিব উল্লাহ ডন জানান, 'অ্যাম্বুলেন্স হিসেবে আমদানি করা গাড়ি মাইক্রোবাস হিসেবে ব্যবহার করার কোনো নিয়ম নেই। যে গাড়িগুলো অ্যাম্বুলেন্স হিসেবে আমদানি এবং অ্যাম্বুলেন্স হিসেবেই শুল্ক দেয়া হয়েছে, সেসব গাড়ি মাইক্রোবাস হিসেবে বেচাকেনা করা অনৈতিক। এ ধরনের অসাধু আমদানিকারকের বিরুদ্ধে বারভিডা থেকে ব্যবস্থা নেয়া হবে। তাছাড়া নিবন্ধন দেয়ার ক্ষেত্রে বিআরটিএকেও লক্ষ্য রাখা উচিত। বিআরটিএ থেকে নিবন্ধন না দিলে অসাধু ব্যবসায়ীরাও এ ধরনের সুযোগ নিতে পারবে না।
অন্যদিকে এ প্রসঙ্গে বিআরটিএর সদর কার্যালয়ের পরিচালক (ইঞ্জি.) লোকমান হোসেন মোল্লা জানান, অ্যাম্বুলেন্স হিসেবে আমদানি গাড়ি মাইক্রোবাস হিসেবে নিবন্ধন দিয়েছে কিনা তা জানা নেই। যদি এ ধরনের ঘটনা ঘটে থাকে তাহলে নিবন্ধন বাতিল হবে এবং সংশ্নিষ্ট অফিসের কর্মকর্তার বিরুদ্ধে অবশ্যই বিভাগীয় ব্যবস্থা নেয়া হবে।