নিয়ম আনুযায়ী মাত্র ১০৩ টাকা দিয়ে পুলিশের চাকুরি পাওয়ার কথা রীতিমত অবিশ্বাস্য। এই অবিশ^াস্য কথাটাই বাস্তবায়ন করে প্রমান করে দিল লালমনিরহাট জেলা পুলিশ। একসময় পুলিশের চাকুরির কথা শুনলেই লাখ লাখ টাকার খেলা হতো। প্রতারকদের খপ্পরে পড়ে চাকুরি প্রার্থীদের নিঃস্ব হবার উদহারনও কম নেই এই জেলাতে। সম্প্রতি কয়েকদিন আগে পুলিশ ট্রেইনি পদে নিয়োগ প্রক্রিয়ার প্রতিটি ধাপে প্রত্যক্ষভাবে তদারকি করে মাত্র ১০৩ টাকায় ২৭ জন যোগ্য প্রার্থীর চাকুরী হওয়ায় প্রমান হলো লালমনিরহাটে দালাল চক্রের দিন শেষ।
মঙ্গলবার (৯ জুলাই) দুপুরে পুলিশ সুপার হল রুমে সাংবাদিকদের সাথে এক মতবিনিময় অনুষ্ঠানে এভাবেই কথা গুলো বললেন লালমনিরহাট পুলিশ সুপার এসএম রশিদুল হক পিপিএম।
পুলিশ সুপার আরো বলেন, মেধা ও যোগ্যতার ভিত্তিতে পুলিশ কনস্টেবলের চাকুরিতে নিয়োগ প্রক্রিয়া সম্পন্ন করার জন্য তার কাছে ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের একটি নির্দেশনা বা চিঠি আসে। সেই নির্দেশনা অনুযায়ী লালমনিরহাটে পুলিশ কনস্টেবল ট্রেইনি পদে নিয়োগ প্রক্রিয়া সম্পন্ন করার জন্য গোটা জেলায় নানাভাবে প্রচারণা চালায় লালমনিরহাট জেলা পুলিশ। কনস্টেবল ট্রেইনি নিয়োগ পরীক্ষায় কোনো প্রতারক চক্রের সাথে লেনদেন না করার জন্য অনুরোধও জানানো হয়। এর অংশ হিসেবে নিয়োগ পরীক্ষার আগে থেকে পুলিশের পক্ষ থেকে গোটা জেলায় টানা কয়েকদিন থেকে লিপলেট বিতরন, পোস্টারিং ও মাইকিং করা হয়। এ ছাড়া জেলা পুলিশের অফিসিয়াল ফেসবুক পেজেও প্রতিদিনই দেয়া হয় নানা সচেতসতামূলক পোস্ট।
তিনি আরো বলেন, ঘুষ ছাড়াই চাকুরী জীবনে সততার সাথে দায়িত্ব পালন করে দেশ ও জনগণের কল্যাণ করার জন্য চেষ্টা করে এসেছি। সততার দৃষ্টান্ত রেখে লালমনিরহাটে পুলিশ কনস্টবল ট্রেইনি নিয়োগ প্রক্রিয়া সম্পন্ন করার চেষ্টা করেছি মাত্র। জানিনা কতোটা সফল হতে পেরেছি, তা আপনারাই বিচার বিবেচনা করবেন। নিয়োগ পক্রিয়া সফল ভাবে সম্পন্ন করার জন্য তিনি লালমনিরহাট জেলা পুলিশের সকল সদস্যকে ধন্যবাদ ও কৃতজ্ঞতা জানিয়েছেন। সেই সাথে লালমনিরহাটে কর্মরত প্রিন্ট ও ইলেক্ট্রিক মিডিয়ার সকল সাংবাদিকদের পুলিশ কনস্টবল ট্্েরইনি পদে স্বচ্ছভাবে নিয়োগ পক্রিয়া সম্পন্ন হওয়ার সংবাদ প্রকাশ করার জন্য কৃতজ্ঞতা জানান। যে ২৭ জন যোগ্য প্রার্থী পুলিশের চাকুরী পেয়েছেন তাদের অধিকাংশই অতি দরিদ্র ও হতো দরিদ্র পরিবারের ছেলে মেয়ে। যেখানে কোন তদবিরের আশ্রয় ছিল না। এভাবে স্বচ্ছ ও দুর্নীতিমুক্ত নিয়োগ প্রক্রিয়ার মাধ্যমে কনস্টেবল হতে পেরে যারপরনাই খুশি চাকুরি প্রাপ্তরা। এখন ঘটনাটি অভিভাবকদের কাছে ধাঁধার মতো মনে হচ্ছে। পরিবারের স্বচ্ছলতার জন্য একটি অবলম্বন খুঁজে পেয়ে আনন্দে আত্মহারা অনেকে। এবার কোনো প্রকার ঘুষ বা তদ্বির ছাড়াই লালমনিরহাটে পুলিশ কনস্টেবল পদে নিয়োগ পয়েছেন যোগ্য ২৭ নারী-পুরুষ।
২০১৬ সালের ১৯ জুলাই লালমনিরহাটে পুলিশ সুপার হিসেবে যোগদানের পর জানতে পারেন লালমনিরহাট জেলা মাদক পাচারের একটি নিরাপদ রুট। তখন থেকে মাদকের সাথে কোন আপস না করে তিনি লালমনিরহাট জেলাকে মাদক মুক্ত করতে অব্যাহত ভাবে অভিযান চালিয়ে যান। তার এই দির্ঘ তিন বছরের চাকুরী জীবনে ৩হাজার ৬৯টি মাদক মামলায় ৩ হাজার ৪শত ২৩জন মাদক ব্যবসায়ীকে গ্রেফতার করতে সক্ষম হয়। উদ্ধারকৃত মাদকের মধ্যে ৫ হাজার একশ কেজি গাঁজা, ৬৩ হাজার বোতল ভারতীয় ফেন্সিডিলসহ প্রচুর পরিমান ইয়াবা, বিদেশী মদ উদ্ধার করা হয়। যার মুল্য প্রায় পৌনে ২ কোটি টাকা। লালমনিরহাট জেলাকে মাদক জিরো টলারেন্সে নিয়ে আসতে আইনজীবী, পুলিশ, ডাক্তার, শিক্ষক, ড্রাগ সুপারসহ মাদক ব্যবসায়ী কেউ পার পাইনি। তাদেও সবাইকেও আইনের আওতায় এনে তাদের বিরুদ্ধে মাদকদ্রব্য নিয়োন্ত্রন আইনে মামলা দেয়া হয়েছে।
সড়ক দুর্ঘটনা এড়াতে লালমনিরহাট জেলা পুলিশ প্রায় সময় বিভিন্ন প্রচার প্রচারোনা চালায়। এজন্য স্কুল কলেজের শিক্ষার্থী, শিক্ষক, বাস, ট্রাক, পিকআপ ও মাইক্রোবাসের ড্রাইভারদের নিয়ে সচেতেনতা মুলক আলোচনা ও সড়ক দুর্ঘটনা এড়াতে বিভিন্ন পরামর্শ প্রদান করা হয়। সড়ক দুর্ঘটনা ও বিভিন্ন যান বাহনের ফিটনেসসহ অনেক সমস্যার কারণে ট্রাফিক পুলিশের পক্ষ থেকে ৫৮ হাজার ৩শত ৫১টি মামলা দেয়া হয়। সরকারী রাজস্ব খাতে জমা জমা হয় প্রায় ৩ কোটি টাকা। যেকারনে এই জেলায় সড়ক দুর্ঘটনার সংখ্যা নিতান্তই কম।
ধর্ষন একটি সামাজিক অপরাধ। নৈতিক অবক্ষয়ের কারনেই এসব ঘটনা ঘটে থাকে। তাই সমাজের সকলকে সজাগ ও সচেতন হতে হবে তবেই এটি রোধ করা সম্ভব। লালমনিরহাট জেলায় ধর্ষনের ঘটনা অন্যান্য জেলার থেকে একেবারেই কম। এরপরেও এই ঘটনা সাথে যারা জড়িত তাদের মধ্যে তিনজনসহ জেলায় মোট ১৫জন অপরাধি পুলিশের সাথে বন্দুক যুদ্ধে আহত হয়েছে।
এ সময় উপস্থিত ছিলেন, অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (এ সার্কেল) মোঃ হাসান ইকবাল চৌধূরী, অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (ইন সার্ভিস) শহিদ সোহরাওয়াদি, সহকারী পুলিশ সুপার (সদর) আমিনুল ইসলাম, সদর থানার কর্মকর্তা ইনচার্জ (ওসি) মাহফুজ আলম, ট্রাফিক পুলিশের টিআই তরিকুল ইসলাম, গোয়েন্দা (ডিবি) পুলিশের ইনচার্জ (ওসি) মকবুল কোসেন, সিনিয়র সাংবাদিক গেরিলা লিডার বীর মুক্তিযোদ্ধা শফিকুল ইসলাম কানাসহ জেলায় কর্মরত প্রিন্ট ও ইলেক্ট্রিক মিডিয়ার সকল সাংবাদিকবৃন্দ উপস্থিত ছিলেন। অনুষ্ঠান সঞ্চালোচনা করেন, পুলিশ সুপার (সদ্য পদোন্নতি প্রাপ্ত) এনএম নাসিরুদ্দিন।