তিন দিনের টানা ভারি বর্ষন ও উজানের পাহাড়ি ঢলে তিস্তা ও ধরলা নদীর চরাঞ্চল ও নিম্নাঞ্চলগুলো প্লাবিত হয়ে লালমনিরহাটে প্রায় ৬হাজার পরিবার পানিবন্দি হয়ে পড়েছেন। তবে পানিবন্দির খবর জানেন না জেলা প্রশাসক (ডিসি) আবু জাফর।
বুধবার (১০ জুলাই) সকাল ৯ টায় দেশের বৃহত্তম সেচপ্রকল্প তিস্তা ব্যারাজ ডালিয়া পয়েন্টে তিস্তার পানি প্রবাহ রেকর্ড করা হয় ৫২ দশমিক ৪০ সেন্টিমিটর। যা (স্বাভাবিক ৫২.৬০সেঃমি) বিপদসীমার ২০ সেন্টিমিটার নিচে।
স্থানীয়রা জানান, উজানের পাহাড়ি ঢলের সাথে যুক্ত হয়েছে গত দিন দিনের ভারি বৃষ্টি। এতে লালমনিরহাটের ৫টি উপজেলার তিস্তা ও ধরলা অববাহিকার চরাঞ্চল ও নিম্নাঞ্চলগুলো প্লাবিত হয়েছে। ফলে পানিবন্দি হয়ে পড়েছে জেলার প্রায় ৬ হাজার পরিবার। কিছু পরিবার মঙ্গলবার (০৯ জুলাই) দুপুর থেকে পানিবন্দি হয়ে পড়েছেন। নৌকা বা ভেলা ছাড়া চরাঞ্চলের যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়েছে। বৃষ্টি যত বাড়ছে পানিবন্দি পরিবারের সংখ্যা ততই বাড়ছে। এতে বড় সমস্যায় পড়েছেন শিশু, বৃদ্ধ ও প্রতিবন্ধিরা। চার দিকে অথৈ পানির কারণে গবাদি পশুপাখি নিয়ে অনেকটা বিপদে পড়েছেন চরাঞ্চলের খামাড়ি ও চাষিরা।
উজানের ঢল ও টানা ভারি বৃষ্টিতে সৃষ্ঠ এ বন্যায় জেলার পাটগ্রাম উপজেলার দহগ্রাম, হাতীবান্ধার সানিয়াজান, গড্ডিমারী, সিন্দুর্না, পাটিকাপাড়া, সিংগিমারী, কালীগঞ্জ উপজেলার ভোটমারী, কাকিনা, আদিতমারী উপজেলার মহিষখোচা, সদর উপজেলার খুনিয়াগাছ, রাজপুর, গোকুন্ডা, কুলাঘাট ও মোগলহাট ইউনিয়নের তিস্তা ও ধরলার নদীর চরাঞ্চল প্লাবিত হয়ে পড়েছে। এসব ইউনিয়ের প্রায় ৬ হাজার পরিবার পানিবন্দি হয়ে মানবেতর জিবন যাপন করছেন।
বেসরকারী উন্নয়ন সংস্থা এসোড এর বন্যা সহনশীল প্রকল্পের ফিল্ড কর্মকর্তা মমতাজ বেগম বলেন, উজানের ঢল ও ভারি বর্ষনের কারণে তিস্তা চরাঞ্চলের বেশ কিছু এলাকা প্লাবিত হয়ে পানিবন্দি হয়ে পড়েছে মানুষ। এতে হাতীবান্ধা উপজেলায় সব থেকে বেশি ক্ষতিগ্রস্থ হয়ে পড়েছে। এসোডের পক্ষ থেকে বন্যা কবলিতদের খোঁজ খবর নেয়া হচ্ছে বলেও দাবি করেন তিনি।
চরাঞ্চলের পানিবন্দি খেটে খাওয়া মানুষগুলো শিশুখাদ্য ও নিরাপদ পানির সমস্যায় পড়েছেন। দুই দিন পানিবন্দি থাকলেও সরকারী ভাবে কোন ত্রান বা শুকনো খাবার পৌছানো হয়নি বলে পানিবন্দি পরিবারগুলোর অভিযোগ।
আদিতমারী উপজেলার মহিষখোচা ইউনিয়নের তিস্তা চরাঞ্চলের পাসাইটারী গ্রামের মানিক মিয়া, আজিজুল ইসলাম ও আমিনুর রহমান জানান, তিন দিনের টানা ভারি বৃষ্টিপাতে তারা দুই দিন ধরে পানিবন্দি রয়েছেন। তিস্তার তীরে বাসবাস করায় সামান্য পানি বাড়লেই তাদেরকে পানিবন্দি হতে হয়। খেয়ে না খেয়ে দিন কাটলেও দেখা মেলে না জনপ্রতিনিধি বা সরকারী কর্মকর্তা কর্মচারীদের। বড় বন্যা হলে শুস্কো এলাকা দিয়ে তিস্তা নদী দেখে সবাই চলে যান। কারণ চরাঞ্চলে পৌছতে হলে নৌকায় উঠতে হয়। এ কারণে তাদের খবর অনেকেই রাখেন না বলেও অভিযোগ তাদের।
হাতীবান্ধা উপজেলার চর ধুবনী গ্রামের আফাজ উদ্দিন ও আবদুর রহমান জানান, তিস্তার পানির সাথে বৃষ্টির পানি যুক্ত হয়ে বন্যা দেখা দিয়েছে। ফলে তাদের মত অনেকেই পানিবন্দি হয়ে পড়েছেন। তবে পানিবন্দিদের সহায়তার জন্য বিশুদ্ধ পানি ও শুকনো খাবারের সংকট দেখা দিয়েছে।
সিন্দুর্না ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) চেয়ারম্যান নুরুল আমিন বলেন, টানা তিন দিনের ভারি বর্ষন ও উজানের ঢলে এ ইউনিয়নের প্রায় দুই হাজার পরিবার পানিবন্দি হয়ে পড়েছেন। ত্রানের জন্য পানিবন্দিদের তালিকা সরকারের বিভিন্ন দফতরে পাঠানো হচ্ছে।
গোবর্দ্ধন চর সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক কাজি শফিকুল ইসলাম বলেন, বিদ্যালয়ের শ্রেনী কক্ষে পানি উঠায় শিক্ষার্থীরা আসেনি। ফলে দুই দিন ধরে পাঠদান বন্ধ রয়েছে।
হাতীবান্ধা উপজেলা ত্রান ও পুনবাসন কর্মকর্তা ফেরদৌস আলম জানান, তার উপজেলার ৬টি ইউনিয়ন তিস্তা নদীর অববাহিকায়। তিস্তায় সামান্য পানি বাড়লেই কিছু পরিবার পানিবন্দি হন। ভারি বৃষ্টি ও উজানের ঢলে কেউ পানিবন্দি হয়ে থাকলে তাদের তালিকা পাঠানোর জন্য সংশ্লিষ্ট ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যানদের আহবান করা হয়েছে। এ উপজেলায় ত্রান মজুদ না থাকলেও চাহিদা দিলে জেলা প্রশাসন দ্রুত পৌছাবেন বলেও দাবি করেন তিনি।
দেশের বৃহত্তম সেচ প্রকল্প তিস্তা ব্যারাজের ডালিয়ার নির্বাহী প্রকৌশলী রবিউল ইসলাম বলেন, তিস্তার পানি প্রবাহ বিপদ সীমার ২০ সেন্টিমিটার নিচ দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। টানা ভারি বৃষ্টির কারণে তিস্তা নদীর তীরবর্তি নিম্নাঞ্চল ও চরাঞ্চল প্লাবিত হতে পারে। তবে বড় কোন বন্যার আশঙ্কা নেই।
লালমনিরহাট জেলা প্রশাসক আবু জাফর বলেন, পানিবন্দি হয়েছে এমন কোন খবর জানা নেই। শুধুমাত্র সদরের খুনিয়াগাছ ইউনিয়নের ৩০/৩৫টি পরিবার জলাবন্ধতায় রয়েছেন। এ ছাড়া বন্যা বা পানিবন্দির কোন তথ্য জেলা প্রশাসনে নেই।