“সবাইরে দেহি, মোগো মা ও বাবারে খালি দেহিনা। ও আল্লাহ..বাবা-মায়ের লগে মোগো ক্যান তুমি লইয়া গ্যালানা। মুই এ্যাহন ছোট ছোট বুইনেগো ক্যামনে বাঁচামু, অগো এ্যাহন কি খাওয়ামু। মোগোতো আর কেউ রইলো না।”
বিদ্যুৎ বিভাগের দায়িত্বহীনতার জন্য অকালে মা ও বাবার একসাথে মৃত্যুর শোকে অবুঝ তিন বোনকে জড়িয়ে ধরে অঝোড় ধারায় কেঁদে কেঁদে এভাবেই বিলাপ করে কথাগুলো বলছিলো ১১ বছরের রবিন হাওলাদার। তার (রবিন) বিলাপে ওই এলাকার আকাশ বাতাস ভাড়ি হয়ে ওঠে।
শনিবার সকালে জেলার বাবুগঞ্জ উপজেলার রমজানকাঠী গ্রামেও রবিনদের বাড়িতে গিয়ে দেখা গেছে, বিদ্যুৎ বিভাগের দায়িত্বহীনতার জন্য অকালে বাবা ও মাকে হারানো এক বছরের শিশু কন্যা জেসমিন বুকের দুধ পানের জন্য হন্য হয়ে খুঁজছে তার মাকে। সাত বছর বয়সের হাবিবা এখনও বুঝছে না তার মা ও বাবা পৃথিবীতে আর বেঁচে নেই। মৃত্যুর খবরে ওই বাড়িতে ছুটে আসা শত শত মানুষের মুখের দিকে তাকিয়ে আছে আট বছরের শিশু কন্যা হামিদা খানম। বার বার জিজ্ঞাসা করছে বাবা ও মা কোথায়? ওই দম্পত্তির ১১ বছরের জ্যেষ্ঠ পুত্র রবিন হাওলাদার অঝরে কাঁদছেন মা ও বাবার মৃত্যুতে। তাকিয়ে থাকছেন নিজের অবুঝ বোনদের মুখের দিকে।
বাবুগঞ্জ উপজেলার বীরশ্রেষ্ঠ জাহাঙ্গীর নগর ইউনিয়নবাসী তীব্র ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন, বরিশাল পল্লী বিদ্যুৎ সমিতি-২ এর কর্মরত বিদ্যুৎকমীদের ওপর। তাদের দায়িত্ব ও অবহেলার কারনেই বাবা ও মা অকালে প্রাণ হারিয়ে চার অবুঝ শিশু চিরদিনের জন্য আশ্রয়হীন হয়েছে। ইউনিয়নবাসীর দাবি এখন কে নিবে ওই অবুঝ চার শিশুর দায়িত্ব। বাবা ও মা দুইজনেই একসাথে প্রান হারানোর পর ওদের আর কেউ রইলো না।
সূত্রমতে, বীরশ্রেষ্ঠ জাহাঙ্গীর নগর ইউনিয়নের রমজানকাঠী গ্রামের মৃত রজ্জব আলী হাওলাদারের ছোট পুত্র ভ্যানচালক কামাল হোসেন হাওলাদার (৪০) চরম দৈন্যতার মধ্যে জীবন-যাপন করতো। গত ১১ জুলাই দুপুরে কামালের স্ত্রী মমতাজ বেগম (৩০) বাড়ির পাশের একটি ক্ষেতে পাট শাক তুলতে যায়। ওই ক্ষেতের মধ্যে আগে থেকেই বিদ্যুতের তার ছিড়ে পরে রয়েছিলো। ফলে মমতাজ বেগম বিদ্যুৎস্পৃষ্ট হয়ে ছটফট করতে থাকে। বিষয়টি দেখে তাকে বাঁচাতে এগিয়ে যায় স্বামী কামাল হোসেন। এ সময় ওই দম্পতি পাট ক্ষেতে বসেই বিদ্যুৎপৃষ্ট হয়ে মারা যায়।