কক্সবাজারের মহেশখালীতে চাকরিজীবী এক তরুণীকে গণধর্ষণের পর ৫ দিন আটকে রাখা হয়। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে খবরটি ভাইরাল হলে পুলিশ অবরুদ্ধ ওই তরুণীকে শুক্রবার উদ্ধার করে। ঘটনা ধামাচাপা দেয়ার অভিযোগে গ্রেফতার করা হয়েছে দুই ইউপি সদস্যকে। এ ঘটনায় ধর্ষিতা মহেশখালী থানায় মামলা করেছেন। পুলিশ এক ধর্ষককে গ্রেফতার করেছে। গ্রেফতার তিনজনকে জেলহাজতে পাঠানো হয়েছে।
প্রেমিকের সঙ্গে দেখা করতে ৭ জুলাই মহেশখালী পৌর এলাকার গোরকঘাটায় যান ওই তরুণী। প্রেমিক দেখা করতে না আসায় বিপাকে পড়েন তরুণী। সহায়তার আশ্বাস দিয়ে চালিয়াতলী বালুরডেইল পাহাড়ি ঝিরি এলাকায় নিয়ে রাতভর মেয়েটিকে ধর্ষণ করে অন্তত ১৪ লম্পট। জড়িতদের বাঁচাতে ঘটনার পরদিন মেয়েটিকে হেফাজতের কথা বলে মাতারবাড়ি ইউনিয়ন পরিষদের নারী সদস্য শামীমা আক্তারের বাড়িতে আটকে রাখা হয়। ঘটনা ধামাচাপা দিতে টাকার বিনিময়ে আপসের চেষ্টা করে কালারমারছড়া ইউনিয়ন পরিষদের মেম্বার লিয়াকত আলী ও মাতারবাড়ি সিএনজি অটোরিকশা স্টেশনের লাইনম্যান রশিদ। রশিদ নিজেও ধর্ষণের ঘটনায় জড়িত।
স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, ধর্ষণের শিকার ওই তরুণীর বাড়ি চকরিয়ায়। চট্টগ্রামে একটি বেসরকারি প্রতিষ্ঠানে চাকরি করছেন। সম্প্রতি স্থানীয় গোরকঘাটার এক তরুণের সঙ্গে মোবাইল ফোনে প্রেমের সম্পর্ক গড়ে ওঠে। কথিত ওই প্রেমিকের সঙ্গে দেখা করতে ৭ জুলাই সকালে মহেশখালীর চালিয়াতলী স্টেশনে আসেন তিনি। সেখান থেকে নলবিলা গ্রামের শাহ আলমের ছেলে ওসমান গণির সিএনজিচালিত অটোরিকশা রিজার্ভ করে গোরকঘাটায় যান। প্রেমিকের দেখা না পেয়ে তরুণী চালিয়াতলীতে ফিরে আসেন। কিন্তু ভাড়া দিতে না পারায় সিএনজিচালিত অটোরিকশাচালকের সঙ্গে তরুণীর বাকবিত-া হয়। নিজের মোবাইল ফোন চালককে দিয়ে বিষয়টি সুরাহার চেষ্টা করেন তরুণী। একপর্যায়ে সহায়তার আশ্বাস দিয়ে স্থানীয় আবুল হাছিরের ছেলে আমির সালাম, মোস্তাক আহমদের ছেলে এনিয়া এবং নলবিলা দরগাহপাড়ার মোক্তার আহমদের ছেলে আদালত খাঁ ওই তরুণীকে বালুরডেইল পাহাড়ি ঝিরির দিকে নিয়ে যায়। সন্ধ্যার দিকে তারা ওই তরুণীকে ধর্ষণ করে। পরে ওই তিনজনের সঙ্গে যোগ দেয় সিএনজিচালিত অটোরিকশাচালক ওসমানসহ আরও অন্তত ১১ জন। রাতভর তরুণীকে ধর্ষণ করে পালিয়ে যায় জড়িতরা। যাওয়ার আগে মেয়েটির বোরকা, ঘড়ি ও হাতব্যাগও কেড়ে নেয় তারা। পরদিন স্থানীয় এক মৎস্য ব্যবসায়ী ওই তরুণীর অবস্থা দেখে তাকে মাতারবাড়ী পৌঁছানোর ব্যবস্থা করেন।
ঘটনার পাঁচদিন পর শুক্রবার সৌরভ হাসান নামের এক ফেসবুক ব্যবহারকারী বিষয়টি নিয়ে একটি স্ট্যাটাস দেন। শুরু হয় প্রশাসনের তৎপরতা। মেম্বার শামীমার বাড়ি থেকে ওই তরুণীকে উদ্ধার করা হয়। শুক্রবার রাত সাড়ে ৮টায় তরুণীকে মহেশখালী থানায় নিয়ে আসা হয়। এরইমধ্যে পুলিশ ইউপি সদস্য লিয়াকত আলী ও খদিজা বেগমকে গ্রেফতার করে। এদিকে তরুণী ৬ জনের নাম উল্লেখ করে ১২-১৩ জনের বিরুদ্ধে মামলা করেন। মামলায় দুই ইউপি মেম্বারকেও আসামি করা হয়। শনিবার সকালে পুলিশ এক ধর্ষককে গ্রেফতার করে। তার নাম মনু মিয়া, সে নলবিলা মাঝেরপাড়ার আবদুর রশিদের ছেলে। মামলার তদন্ত করছেন মহেশখালী থানার ওসি (তদন্ত) শফিকুল আলম। তিনি জানান, গ্রেফতার ৩ জনকে শনিবার বিকালে আদালতের মাধ্যমে জেলহাজতে পাঠানো হয়েছে। আসামিদের পাঁচ দিন করে রিমান্ড চাওয়া হয়েছে। অন্য আসামিদের ধরতে অভিযান চলছে।