গত এক সপ্তাহের ভারী বর্ষণ ও পাহাড়ী ঢলে শেরপুর জেলার বন্যা পরিস্থিতির আরো অবনতি হয়েছে। রবিবার (১৪ জুলাই ) রাতের অতি ভারী বর্ষণে শেরপুর সদর, ঝিনাইগাতী, নালিতাবাড়ী, শ্রীবরদী ও নকলা উপজেলার অন্তত ৮০টি গ্রাম প্লাবিত হয়েছে। বর্ষণ অব্যহত থাকায় পানিবন্দি মানুষের দূর্র্ভোগ চরম আকার ধারণ করেছে। বন্যার পানিতে ডুবে গত তিন দিনে শ্রীবরদীতে ২ জন ও ঝিনাইগাতীতে এক শিশুসহ ৩ জন মারা গেছে। এদিকে, বন্যার পানি পানি প্রবেশ করায় ঝিনাইগাতী ও শেরপুর সদর উপজেলার ৪২টি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় সাময়িকভাবে বন্ধ ঘোষণা করা হয়েছে।এদিকে, ভারী বর্ষণের কারণে শেরপুর, নকলা ও নালিতাবাড়ী পৌর শহরের বিভিন্ন এলাকায় জলাবদ্ধতার সৃষ্টি হওয়ায় সাধারণ মানুষের দুর্ভোগ বেড়েছে।
পুরাতন ব্রহ্মপুত্র নদে পানি বৃদ্ধির ফলে শেরপুর সদর উপজেলার চরপক্ষিমারী ইউনিয়নের বেপারীপাড়া সংলগ্ন চরের ঘরবাড়িতে পানি প্রবেশ করায় ৫০টি পরিবার বেপারীপাড়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে আশ্রয় নিয়েছে।
শেরপুর সদর উপজেলা শিক্ষা কর্মকর্তা মো. আকরাম হোসেন বলেন, গাজীর খামার ও ধলা ইউনিয়নের চারটি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে পানি ওঠায় এবং চরপক্ষিমারি ইউনিয়নের বেপারীপাড়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে বন্যার্তরা আশ্রয় নেয়ায় এসব বিদ্যালয় বন্ধ ঘোষণা করা হয়েছে।
ঝিনাইগাতী উপজেলার পাঁচ ইউনিয়নের ৪০ গ্রামের অন্তত ১৫ হাজার মানুষ পানিবন্দি অবস্থায় রয়েছেন। পাহাড়ি ঢলের তোড়ে সোমবার (১৫ জুলাই ) দুপুরে মহরশি নদীর বন্যা নিয়ন্ত্রণ বাঁধের কিছু অংশে ভাঙন দেখা দেয়। স্থানীয় লোকজন ভাঙন প্রতিরোধের চেষ্টা চালায়। ঝিনাইগাতী উপজেলা চেয়ারম্যান এসএমএ ওয়ারেজ নাইম ভাঙন ও বন্যাকবলিত এলাকা পরিদর্শন করেন।
ঝিনাইগাতীর সহকারী প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা মো. নুরুন্নবী বলেন, পাহাড়ি ঢলে সৃষ্ট বন্যার কারণে উপজেলার ৩৭টি সহকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় সাময়িক বন্ধ ঘোষণা করা হয়েছে।
নালিতাবাড়ী উপজেলার চেল্লাখালি নদীর পানি বিপদসীমার ১৬৬ সে. মি. উপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। নালিতাবাড়ী উপজেলার নয়াবিল ও মরিচপুরান ইউনিয়নের আটটি গ্রামে নতুন করে পাহাড়ি ঢলের পানি প্রবেশ করেছে। ভোগাই নদীর তীরবর্তী বাঁধে ফাটল দেখা দেওয়ায় আতঙ্কে রয়েছে এলাকাবাসী। এদিকে, নালিতাবাড়ী পৌরশহরের গড়কান্দা এলাকায় চেল্লাখালী নদীর পানি বেড়ে কয়েকটি গ্রামে পানি ঢুকতে শুরু করেছে। মরিচপুরান ইউনিয়নের বাসিন্দা বাবুল মিয়া বলেন, আমাদের এ ইউনিয়নে শনিবার (১৩ জুলাই ) দুপুর থেকে পানি ঢুকতে শুরু করেছে। এতে আমরা খুবই চিন্তিত রয়েছি।
অন্যদিকে নকলা উপজেলার চন্দ্রকোনা ইউনিয়নের ভ্রহ্মপুত্র নদের শাখা মৃগী নদীর পানির তীব্র ¯্রােতে ভাঙন শুরু হয়েছে। মৃগী নদীর ভাঙনে নকলার বাছুর আলগা দক্ষিণ পাড়া গ্রামের আফাজ উদ্দিনের বাড়ির বসতভিটাসহ মাহবুব হাজী ও জামাল চৌকিদারের ১০ শতক আবাদি জমি নদী গর্ভে চলে গেছে। নদী ভাঙনে ওই এলাকার আরও দুইটি বসতভিটার বাড়ি-ঘর অন্যত্র সরিয়ে নেয়া হয়েছে। চিকারবাড়ী ঘাট সংলগ্ন ২০ ফুট পাকা রাস্তার নিচের মাটি সরে যাওয়ায় এলাকাবাসী ওই সড়কে ঝুকি নিয়ে যাতায়াত করছে।
এছাড়া ঢলের পানিতে উপজেলার গণপদ্দী, নকলা, উরফা ও গৌড়দ্বার ইউনিয়নের অনেক ফসলী জমি ও আমন চারা পানির নিচে তলিয়ে গেছে।
নকলা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মো. জাহিদুর রহমান ভাঙন কবলিত এলাকা পরিদর্শন করে জানান, ভারী বর্ষণে নদীতে পানির তীব্র ¯্রােতের কারণে নদী তীরবর্তী এলাকায় ভাঙন দেখা দিয়েছে। নদী ভাঙনের হাত থেকে সতর্ক থাকার জন্য এলাকাবাসীকে নির্দেশ দেয়া হয়েছে। ভাঙনের বিষয়ে পানি উন্নয়ন বোর্ড কর্মকর্তাসহ ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে অবহিত করা হয়েছে।
পানি উন্নয়ন বোর্ডের উপ-বিভাগীয় প্রকৌশলী মাজহারুল ইসলাম জানান, রবিবার সকাল থেকে নদী ভাঙন রোধে বালুর বস্তা ফেলা শুরু হয়েছে।