তিস্তা ও ধরলার নদীর পানি বৃদ্ধি পেলে ও আবারও বন্যার সৃষ্টি হলে এবং বন্যা পরবর্তী যে কোন প্রাকৃতিক দুর্যোগ মোকাবেলায় লালমনিরহাট জেলা প্রশাসন প্রস্তুত আছে বলে সংবাদ সম্মেলন করেছে। এ ব্যাপারে লালমনিরহাট জেলা প্রশাসন সাংবাদিকদের একটি প্রতিবেদন দিয়েছে। উজান থেকে নেমে পাহাড়ি ঢল ও কয়েকদিনের ভারী বৃষ্টির কারণে লালমনিরহাটে মারাত্মক বন্যার সৃষ্টি হয়। পানির নিচে তলিয়ে যায় সদর উপজেলাসহ ৫টি উপজেলার বেশ কয়েকটি ইউনিয়ন। গত দুইদিনে পানি একটু করলেও হঠাৎ করে তিস্তা নদীর পানি আবারও বৃদ্ধি পেতে শুরু করেছে।
সোমবার (১৫ জুলাই) রাত সাড়ে ৮টায় বন্যা মোকাবেলায় জেলা প্রশাসনের সম্মেলন কক্ষে সংবাদ সম্মেলন করেছেন জেলা প্রশাসকের দায়িত্বে থাকা এডিসি (রাজস্ব) আহসান হাবীব সংবাদ সম্মেলনে বলেন, গত কয়েকদিনের অতিবর্ষন এবং উজান থেকে নেমে আসা পানিতে গোটা জেলা প্লাবিত হয়ে পড়ে। তিস্তা ও ধরলা নদীর পানি বৃদ্ধি পাওয়ায় সদরসহ ৫টি উপজেলার ২০টি ইউনিয়নের (সরকারী হিসেব অনুয়ায়ী) প্রায় ১৭ হাজার পরিবারের মানুষ পানি বন্দি হয়ে পড়ে। নদী ভাঙ্গনের শিকার হয় ৩৮টি পরিবার। সৃষ্ট বন্যায় ক্ষতিগ্রস্থ পরিবারের মাঝে ২৪৫ মেঃটন জিআর চাল ও ৪ লক্ষ ৫০ হাজার ক্যাশ টাকা বিতরন করা হয়। এক হাজার ৪শত পরিবারের মাঝে শুকনা খাবারের প্যাকেট দেয়া হয়। এখনো মজুত আছে ২০৫ মেঃটন চাল ও ৩ লক্ষ টাকা। এই ত্রান ও নগদ অর্থ বন্যা পরবর্তী ক্ষতি গ্রস্থ পরিবারের মাঝে বিতরন করা হবে। লালমনিরহাটে তিস্তা ও ধরলা নদীর পানি বৃদ্ধির কারণে ১৯০ হেক্টর জমির রোপা আমনসহ বিভিন্ন সবজি ক্ষতিগ্রস্থ হয়। তবে আবারও পানি বৃদ্ধি পেলে ও বন্যার সৃষ্টি হলে এবং বন্যা পরবর্তী য়ে কোন প্রাকৃতিক মোকাবেলায় জেলা প্রশাসন প্রস্তুত আছে।
এদিকে গত দুইদিনে পানি একটু কমলেও সোমবার (১৫ জুলাই) বিকেল ৫টার পর তিস্তা নদীর পানি আবার নতুন করে বৃদ্ধি পেতে শুরু করেছে। ফলে বাঁধ ও সড়কের ভাঙ্গা অংশ গুলো দিয়ে হাতীবান্ধা এলাকার সতী নদীসহ জেলার বিভিন্ন জায়গা দিয়ে তিস্তার পানি শহরে প্রবেশ করছে। শুক্রবার রাতে তিস্তা নদীর পানি বিপদসীমার ৫০ সেন্টিমিটারের উপর দিয়ে প্রবাহিত হতে থাকে। শনিবার সকালে পানির চাপে হাতীবান্ধাহাট থেকে বড়খাতা বিডিআর গেট বাইপাস সড়ক ভেঙ্গে তিস্তা নদীর পানি হাতীবান্ধা উপজেলা শহরসহ ৬টি ইউনিয়নের লোকালয়ে প্রচন্ড বেগে তিস্তার পানি প্রবেশ করে। এতে বাঁধ ও সড়ক ভেঙ্গে জেলার ৫ উপজেলার ১৭টি ইউনিয়নের লক্ষাধিক মানুষ পানিবন্দি হয়ে পড়ে। সব চেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্থ হয় হাতীবান্ধা উপজেলার ৬টি ইউনিয়ন। শনিবার বিকাল থেকে তিস্তা নদীর পানি কমতে থাকে। সোমবার সকালে পানি বিপদসীমার ৪৫ সেঃমিঃ নিচ দিয়ে প্রবাহিত হয়। কিন্তু সোমবার বিকেল থেকে আবারও পানি বৃদ্ধি পাওয়ায় তিস্তা পাড়ের লোকজনের মাঝে আতঙ্ক আবারও বেড়ে য়ায়। রাত ৮টায় তিস্তা ব্যারাজ পয়েন্টে পানি বিপদ সীমার ছুঁই ছুঁই করে পানি প্রবাহিত হচ্ছে।
ভারতের গজল ডোবা ব্যারাজের অধিকাংশ গেট খুলে দেয়ায় এ অবস্থার সৃষ্টি হয়েছে। আরও কি পরিমান পানি আসবে বা বাড়তে পারে তা ধারনা যাচ্ছে না। পানির শো শো শব্দে তিস্তা পাড়ে লোকজনের মাঝে আতঙ্ক বিরাজ করছে। তিস্তা নদীর ভয়ঙ্কর রুপ আর গর্জনে পানি বন্দি লোকজনের চোখে ঘুম নেই। গত দুইদিনের মধ্যে হাতীবান্ধায় সতি নদী ও পাটগ্রাম উপজেলার ধরলা নদী থেকে ভেসে আসা দুইজনের মরদেহ উদ্ধার করে পুলিশ।
তিস্তা ব্যরাজ দোয়ানী পানি উন্নয়ন বোর্ড’র নির্বাহী প্রকৌশলী রবিউল ইসলাম জানান, মুলত ভারতের গজল ডোবা ব্যারাজের অধিকাংশ গেট খুলে দেয়ায় এবং গত কয়েকদিনের ভারী বৃষ্টির কারণে এ অবস্থার সৃষ্টি হয়েছে। সোমবার বিকেল থেকে তিস্তা নদীর পানি আবারও বৃদ্ধি পেতে থাকে। আবারও কি হতে চলেছে বা কি পরিমাণ পানি আসবে তা ধারনা যাচ্ছে না। পানির গতি নিয়ন্ত্রন করতে তিস্তা ব্যারেজের প্রায় সব গেটই খুলে দেয়া হয়েছে।
জেলা ত্রাণ ও পুনর্বাসন কর্মকর্তা আলী হায়দার বলেন, বন্যায় ক্ষগ্রিস্থ পরিবারের মাঝে জিআর চাল ও টাকা বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে। প্রয়োজনে আবারো চাহিদা দেয়া হবে। এছাড়াও শুকনা খাবার সংগ্রহ করে বিতরণ করতে সংশ্লিষ্ট উপজেলা প্রশাসনকে বলা হয়েছে। শুকনা খাবার হিসেবে এখনো জেলা ত্রাণ শাখার গুদামে এক হাজার এক হাজার ৪শত তিন প্যাকেট শুকনা খাবার মজুদ রয়েছে বলেও জানান তিনি।
লালমনিরহাটের জেলা প্রশাসকের দায়িত্বে থাকা এডিসি (রাজস্ব) আহসান হাবীব বলেন, তিনিসহ প্রশাসনের দায়িত্বে থাকা সকল কর্মকর্তা বন্যা কবলিত এলাকা গুলো সড়েজমিন পরিদর্শন করেছেন। যেখানে যেভাবে প্রয়োজন সেই ভাবেই সহযোগিতা দেয়া হচ্ছে। বন্যা পরিস্থিতি মোকাবেলা সকল প্রস্তুতি নেয়া হয়েছে।