বাংলাদেশ সেনাবাহিনী পাহাড়ের আইনশৃঙ্খলার দায়িত্বে নিয়োজিত থাকলেও এলাকার অর্থনৈতিক উন্নয়ন ও মানুষের কল্যাণে সৌহার্দ্য,সহাবস্থান ও সম্প্রীতির পাশাপাশি আর্থ-সামাজিক উন্নয়নে রাখছেন ভুয়সী অবদান। পুরো বছর জুড়েই থাকে নানা কর্মকাণ্ড। এর মধ্যে রয়েছে জাতীয় গুরুত্বপূর্ণ দিবস উদযাপন, ক্রীড়া ও সাংস্কৃতিক প্রতিযোগিতার আয়োজন, শান্তিচুক্তির বর্ষপূর্তি উদযাপন, রিজিয়নের প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী পালন।
ঈদ, দুর্গোৎসব ও প্রবারণা পুুর্ণিমা উদযাপনে বিভিন্ন জাতি-গোষ্ঠীকে সহায়তা প্রদান, মুক্তিযোদ্ধাদের সংবর্ধনা, বৃক্ষ রোপন, শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে উপবৃত্তি, অমর একুশে বই মেলা ও বই উৎসব, চক্ষু চিকিৎসা ও স্বাস্থ্য সেবা, দুস্থদের মাঝে শীত বস্ত্র, নগদ অর্থ ও ঢেউ টিন বিতরণ, প্রতিবন্ধীদের হুইল চেয়ার বিতরণসহ নানা জনকল্যাণমূলক কাজে গুইমারা রিজিয়নের সার্বিক সহযোগিতা ও এলাকার আইন-শৃঙ্খলা বজায় রাখতে মতবিনিময় সভার আয়োজন থাকে নিয়মিত। সচেতন ও বিজ্ঞমহলের মতে নিরাপত্তা, শান্তি, সম্প্রীতি ও উন্নয়নের মডেল ২৪ আর্টিলারি ব্রিগেড গুইমারা রিজিয়ন।
এখানকার পিছিয়ে পরা জনগোষ্ঠীর নানা আর্থ-সামাজিক উন্নয়নে সাধারণ মানুষের মৌলিক অধিকার শিক্ষা, চিকিৎসা এবং দুস্থ্যদের মাঝে আর্থিক সহযোগিতা দিয়ে অর্থনৈতিক উন্নয়নে বিরল অবদান রাখছেন গুইমারা রিজিয়নের সেনাবাহিনী। গৃহহীন পাহাড়ি জনগোষ্ঠীর বাড়ি-ঘর নির্মাণ, নগদ অর্থ সহায়তা, মসজিদ-মন্দির-কিয়াং নির্মাণ, বিনামূল্যে চিকিৎসা সেবা, চক্ষু শিবির আয়োজন উল্লেখযোগ্য।
গুইমারা রিজিয়নের আওতাধীন লক্ষ্মীছড়ি জোন, সিন্দুকছড়ি জোন, মাটিরাঙ্গা জোনের সমস্ত এলাকায় রিজিয়ন কমান্ডারের পরামর্শ ও দিক নির্দেশনায় প্রত্যন্ত পাহাড়ি পল্লীগুলোতে মানুষের সেবায় গুইমারা রিজিয়ন কাজ করে যাচ্ছেন। রিজিয়ন সদর দপ্তরে প্রতি সপ্তাহে নির্ধারিত দিনে সেনাবাহিনীর ডাক্তার চিকিৎসা সেবা দিয়ে থাকেন। অপর দিকে প্রত্যেকটি জোন সদরের পক্ষ হতে প্রতি সপ্তাহে অন্তত ২ দিন বিভিন্ন দুর্গম এলাকায় দিনব্যাপী বিনামূল্যে চিকিৎসা ক্যাম্প পরিচালনা করেন সেনাবাহিনীর চিকিৎসকরা।
অনেক ক্ষেত্রে জরুরী প্রয়োজনেও রোগীরা ছুটে যান সেনাবাহিনীর ডাক্তারের কাছে। শুধু তাই নয়, মূমূর্ষ রোগীদের দ্রুত উন্নত চিকিৎসার জন্য সেনাবাহিনীর নিজস্ব এ্যাম্বুল্যান্স’র সহায়তার পাশাপাশি হেলিকপ্টারযোগেও জরুরীভিত্তিতে রোগী পাঠানো হয় চট্টগ্রাম কিংবা ঢাকা সিএমএইচএ। গুইমারা রিজিয়ন এবং সেনাবাহিনীর বিভিন্ন জোনের তত্ত্বাবধানে কুমিল্লার লায়ন আই হসপিটাল ও চট্টগ্রামের লায়ন্স হসপিটালসহ কয়েকটি সামাজিক সংগঠনের উদ্যোগে প্রায় সবকয়টি উপজেলাতেই বিনামূল্যে চক্ষু শিবির পরিচালনা করে আসছেন সেনাবাহিনী।
সূত্র মতে, সাম্প্রতিক সময়ে গুইমারা রিজিয়ন কর্তৃক চক্ষু শিবির পরিচালনা করে প্রায় ৯০০ জন রোগীকে চিকিৎসা সেবার পাশাপাশি ১৩০ জন ছানি পড়া রোগীকে বিনামূল্যে অপারেশন করার সুযোগ করে দিয়েছে। চিকিৎসা সেবা ক্যাম্প পরিচালনা করে বছরের বিভিন্ন সময়ে প্রায় ১২’শর অধিক রোগীকে বিনামূল্যে ব্যবস্থাপত্র এবং ওষধ বিতরণ করা হয়। এছাড়াও বছরের বিভিন্ন সময়ে গুইমারা রিজিয়নসহ রিজিয়নের আওতাধীন প্রত্যেকটি জোন সদরে নানা কার্যক্রম পরিচালিত হয়ে থাকে।
সনাতন ধর্মাবলম্বীদের প্রধান ধর্মীয় উৎসব শারদীয় দুর্গাপূজা উপলক্ষ্যে গুইমারা রিজিয়ন কমান্ডার ব্রিগেডিয়ার জেনারেল এ কে এম সাজেদুল ইসলাম অত্র রিজিয়ন অধীনস্থ সকল জোন এলাকার বিভিন্ন পূজাম-প পরিদর্শন করে মোট ১ লক্ষ ২০ হাজার ৫০০ টাকা অনুদান প্রদান করা হয়। অমর একুশে বই মেলা উপলক্ষ্যে মানিকছড়ি টাউন হলে বিভিন্ন কলেজে মোট ৪৮ হাজার টাকা অনুদান প্রদান করা হয়।
১০ জানুয়ারি বাইন্যাছোলা-মানিকপুর উচ্চ বিদ্যালয়ের নতুন বছরের শিক্ষা কার্যক্রম উদ্বোধন করেন নতুন বছরে পাঠ্যপুস্তক বিতরণ করেন এবং এসময় ৩৯০ জন শিক্ষাথীর মাঝে বই বিতরণ এবং স্কুল ড্রেস তৈরী বাবাদ ২ লক্ষ ৭৪ হাজার ৪০০ টাকা অনুদান প্রদান করেন রিজিয়ন কমান্ডার। জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ৯৯তম জন্মদিন উদযাপন উপলক্ষ্য রিজিয়নের দায়িত্বপূর্ণ সকল স্কুল কলেজে জাতির পিতার ‘মহান জীবন ও আদর্শ’ বিষয় রচনা প্রতিযোগীতার পুরষ্কার দেয়া হয় এবং ৭৮ জন বিশিষ্ট ব্যক্তিকে মাঝে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের লেখা ‘কারাগারের রোজনামচা’ এবং অসমাপ্ত আত্মজীবনী বই উপহার দেয়া হয়।
মাটিরাঙ্গা জোনে কম্পিউটার ও সেলাই প্রশিক্ষণ কার্যক্রম উদ্বোধন করেন রিজিয়ন কমান্ডার। এতে ১৭জন প্রশিক্ষনার্থী অংশ নেন। সিন্দুকছড়ি জোন সদরে মুক্তিযোদ্ধাদের সম্মাননা প্রদান ও ২টি টেলিভিশন এবং প্রত্যেককে শাল চাদর প্রদান করা হয়।
‘সুস্থ্য চোখে দেখি সুন্দর পৃথিবী’ এই প্রতিপাদ্যকে সামনে রেখে গুইমারা উচ্চ বিদ্যালয় মাঠে বিনামূল্যে চক্ষু চিকিৎসা ও ওষধ বিতরণ করা হয়।
২১ অক্টোবর লক্ষ্মীছড়ি জোনের তত্ত্বাবধানে বিনামূল্যে চক্ষু শিবিরের আয়োজন করা হয়। প্রাথমিক পর্যায় ২৬জনকে বাছাই করে অপারেশনের জন্য নিয়ে যাওয়া হয় কুমিল্লা লায়ন হসপিটালে। পৃথিবীর আলো ফিরে পাওয়া এমন এক ব্যক্তির সাথে কথা হয় এ প্রতিবেদকের। নাম সুরেশ চাকমা। চোখে ছানি পড়া অন্ধত্ব নিয়ে বিষম অসহায় দিন যাপন করতেন। আমি একে বারেই দেখতে পাই নি। অপারেশন করার পর সব কিছুই দেখতে পাই। আর্মিকে ধন্যবাদ দেই, আর্শিবাদ করি। এ কথাগুলোই বলছিলেন কুমিল্লা থেকে চক্ষু অপারেশন করে ফিরে আসা সুরেশ চাকমা। জানতে চাওয়া হয় যদি বিনামূল্যে এই সেবা না পেতেন তাহলে? সাব জানিয়ে দেয় আমার পক্ষে এত টাকা খরচ করে চক্ষু চিকিৎসা নেয়া সম্ভব হতো না।
গুইমারা রিজিয়ন কমান্ডার বলেন, সর্বোচ্চ নিরাপত্তা, সৌহার্দ্য ও সম্প্রীতির পাশাপাশি আর্থ-সামাজিক উন্নয়নে ভুয়সী অবদান রেখে চলেছে গুইমারা রিজিয়ন। এ ক্ষেত্রে শুধু প্রয়োজন শান্তিপূর্ণ পরিবেশ সকল সম্প্রদায় মিলেমিশে বসবাস করা। শান্তি শৃঙ্খলা ও সম্প্রীতি বজায় থাকলে উন্নয়ন কখনো বাধাগ্রস্থ্য হবে না উল্লেখ করে এই লক্ষ্য ও উদ্দেশ্যে নিয়ে গুইমারা রিজিয়ন মানুষের ভাগ্যোন্নয়নে কাজ করে যাচ্ছে এমনটাই জানান, গুইমারা রিজিয়ন কমান্ডার ব্রিগেডিয়ার জেনারেল এ কে এম সাজেদুল ইসলাম।