নওগাঁর পত্নীতলায় জেলা আহ্বায়ক কমিটি কর্ত্তৃক ঘোষিত আহ্বায়ক কমিটিকে অগ্রহণযোগ্য ও অবাস্তব বলে তা প্রত্যাখানের দাবী জানিয়েছেন উপজেলার সর্বস্তরের নেতাকর্মী। গত ১৮ জুলাই ঘোষিত কমিটিকে তাঁরা উদ্দেশ্য প্রণোদিত ও বিএনপিকে ভাঙ্গার চক্রান্ত বলে অভিহিত করেন এবং দ্রুত তা বাতিলের দাবী জানান। শ্রক্রবার বিকেল ৫টায় সাবেক এমপি ও কেন্দ্রীয় কৃষি বিষয়ক সম্পাদক সামসুজ্জোহা খাঁনের বাসভবনে গিয়ে তাঁরা এই দাবী জানান। ঘোষিত কমিটি বাতিল করা না হলে সদস্যদের প্রতিরোধও প্রয়োজনে গণপদত্যাগের হুশিয়ারীও দেন নেতারা।
এ সময় বক্তব্য রাখেন উপজেলা বিএনপি’র সাবেক সভাপতি মোকছেদুর রহমান ছিঁরি, উপজেলা বিএনপি’র সাধারণ সম্পাদক ও সাবেক উপজেলা চেয়ারম্যান মো. আবদুল হামিদ, কৃষ্ণপুর ইউনিয়নের সভাপতি ও ইউপি চেয়ারম্যান নজরুল ইসলাম, পাটিচরা ইউনিয়নের সভাপতি আবু ইউসুফ, শিহাড়া ইউনিয়নের সভাপতি নওশাদ আলী, আমাইড় ইউনিয়নের সভাপতি লুৎফর রহমান, পৌর বিএনপি’র মহিলা বিষয়ক সম্পাদক ও সাবেক মহিলা ভাইস চেয়ারম্যান মরিয়ম বেগম শেফা, নজিপুর পৌর বিএনপি’র দপ্তর সম্পাদক ও বাসষ্ট্যান্ড বণিক কমিটির সাধারণ সম্পাদক এ জেড মিজান, পতœীতলা থানা যুবদলের আহ্বায়ক বায়েজীদ রায়হান, পৌর কাউন্সিলর ওবায়দুল হক নান্টু প্রমুখ। বক্তারা অভিযোগ করে বলেন, জেলা আহ্বায়ক কমিটি সমন্বয়ের নাম করে, ঐক্যের নাম করে তৃণমূল নেতাকর্মীদের মতামত প্রত্যাখান করেছেন। বিএনপি’র প্রকৃত ত্যাগী ও দুঃসময়ের সাথীদের বাদ দিয়ে দলছুট ও নিস্কীয়দের আহ্বায়ক কমিটিতে স্থান দেওয়া হয়েছে। কমিটিতে নাম অন্তর্ভূক্তির জন্য অর্থের লেনদেন হয়েছে এমন অভিযোগ তুলে নেতাকর্মীরা তা অচিরেই বাতিল করার দাবী জানান। অন্যথায় কমিটির সদস্যদের প্রতিহতের পাশাপাশি গণপদত্যাগের হুমকিও প্রদান করেন তাঁরা। বক্তারা অভিযোগ করে আরো জানান, উপজেলা বিএনপি’র আহ্বায়ক করা হয়েছে মো. আনিছুর রহমান শেখকে যিনি গত ১৫ বছর ধরে দলছুট। ২০০৪ সালে স্থানীয় বিএনপি নেতাকর্মীদের চাহিদার প্রেক্ষিতে দূর্নিতীর দায়ে তাঁকে দলথেকে বহিস্কার করা হয়। এরপর থেকেই তিনি সকল জাতীয় ও স্থানীয় নির্বাচনে বিএনপি প্রার্থীর বিপক্ষে কাজ করেছেন। ২০১৪ সালে উপজেলা নির্বাচনে বিএনপি’র প্রার্থী থাকা সত্বেও চেয়ারম্যান পদে নিজেই নির্বাচন করেন। যুগ্ম আহ্বায়ক করা হয়েছে থানা যুবদলের সাবেক সভাপতি মো, হাবিবুর রহমান মিন্টুকে। দীর্ঘদিন থেকে তিনি দলীয় কোন কর্মকা-ে অংশগ্রহণ করেননা। ২৮ অক্টোবর তিনি এলাকায় শান্তি মিছিলের নেতৃত্ব দেন এবং মিষ্টি বিতরণ করেন। নির্মইল ইউনিয়নের সাবেক চেয়ারম্যান মো. আতাউর রহমানকে ২নং সদস্য করা হয়েছে যিনি ১৩/১১/২০১১ তারিখে দল থেকে অব্যাহতি নিয়ে আওয়ামী লীগের সাথে আঁতাত করে নির্বাচন করে ইউনিয়নের চেয়ারম্যান নির্বাচিত হন। সদস্য করা হয়েছে এলডিপি নেতা আবদুস সবুরকে। মাদকাসক্ত মোজাম্মেল হক চৌধুরীকে সদস্য করা হয়েছে। নজিপুর পৌর বিএনপির আহ্বায়ক করা হয়েছে সাবেক পৌর মেয়র মো. আনোয়ার হোসেনকে। যিনি মাঝে মধ্যেই পক্ষবদল করে থাকেন। এলাকায় রাজনৈতিক সুবিধাবাদী হিসাবে যাঁর যথেষ্ট দূর্নাম রয়েছে। এছাড়াও আনোয়ার হোসেনের পরিবার থেকে তার ছোট ভাই ও ২ভাতিজাকে কমিটিতে অন্তর্ভূক্ত করা হয়েছে। ২০১৯ সালের উপজেলা নির্বাচনে সাপেল মাহমুদ দলের সিদ্ধান্ত অমান্য করে ভাইস চেয়ারম্যান পদে নির্বাচন করলেও তাঁকে কমিটিতে স্থান দেওয়া হয়েছে। তিন বারের নির্বাচিত সংসদ সদস্য ও কেন্দ্রীয় কৃষি বিষয়ক সম্পাদক মো. সামসুজ্জোহা খানের নাম রাখা হয়েছে পৌর কমিটিতে ৮নং সদস্য হিসাবে। বক্তারা এই কমিটিকে অবান্তর ও হাস্যকর বলে আখ্যাদেন এবং বিতর্কিত কমিটি বাতিল করে অচিরেই নতুন কমিটি গঠনের দাবী জানান।
প্রধান অতিথি সামসুজ্জোহা খাঁন বলেন, সমন্বয় কমিটির নামে দলের ত্যাগী নেতাকর্মীদের সাথে তামাশা করা হয়েছে এবং বিশ্ঙখলা সৃস্টি করা হয়েছে। টাকার মাধ্যমে কমিটিতে অযোগ্য ও বিতর্কিতদের নাম অন্তর্ভূক্ত করা হয়েছে। যা কোনভাবেই গ্রহণযোগ্য নয়। তিনি বলেন, ১৩ জুলাই এর সমন্বয় মিটিংএ আহ্বায়ক কমিটির নিকট তালিকা প্রদান করা হলেও জেলা আহ্বায়ক কমিটি অদৃশ্য কারণে কাহারো কোন মতামত না দিয়ে ১৮ তারিখে একপেশে আহ্বায়ক কমিটি ঘোষনা করেন। তিনি এই কমিটি প্রতিরোধের ঘোষণা দিয়ে বলেন ইতিমধ্যেই কেন্দ্রে মৌখিক অভিযোগ দেওয়া হয়েছে এবং কেন্দ্র থেকে ঘোষিত কমিটির কার্যক্রম বন্ধ রাখার জন্য নির্দেশনা দিয়েছেন।
ছবি ক্যাপশন: নওগাঁর পতœীতলায় বিএনপি’র ঘোষিত আহ্বায়ক কমিটি বাতিল করার দাবীতে নেতাকর্মীরা কেন্দ্রীয় কৃষি বিষয়ক সম্পাদক ও সাবেক এমপি সামসুজ্জোহা খাঁনের সাথে প্রতিবাদ জানাতে গেলে তিনি উপস্থিত নেতাকর্মীদের উদ্দেশ্যে বক্তব্য রাখেন।