সুনামগঞ্জের দিরাই উপজেলার রাজানগর ইউনিয়নের কাইমা কমিউনিটি ক্লিনিকটি গর্ভবতী মা’দের জন্য নিরাপদ স্থানে পরিনত হয়েছে। দীর্ঘদিন অযতেœ অবহেলায় পড়ে থাকা ক্লিনিকটি এখন মানুষের চিকিৎসাসেবার একটি মহৎ প্রতিষ্টান হিসেবে পরিচিত পাচ্ছে। জাতীয় পাবলিক সার্ভিস দিবস-২০১৯ উপলক্ষে জনসেবায় বিশেষ অবদানের জন্য সুনামগঞ্জ জেলার ২১টি ক্যাটাগরিতে বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান ও ব্যক্তিদের সম্মাননা স্মারক প্রদান করেছে সুনামগঞ্জ জেলা প্রশাসন। শ্রেষ্ঠ কমিউনিটি হেলথ কেয়ার প্রোভাইডার ক্যাটাগরিতে কাইমা কমিউনিটি ক্লিনিক এর কমিউনিটি হেলথ কেয়ার প্রোডাইডার জয়ন্তি রানী রায় পুরস্কার পান। এটি মেনে নিতে পারছেন না এলাকার মানুষ। তাদের দাবি এক্লিনিকে কাজ করেন সিএসবি রসিদা বেগম পুরস্কার দিলে তাকে দেওয়া উচিত। এনিয়ে এলাকায় মিশ্র প্রতিক্রিয়া দেখা দিয়েছে। ইতোমধ্যে রসিদা বেগম কমিউনিটি ক্লিনিকে কাজ করা থেকে বিরত রয়েছেন।
দিরাই থেকে ১০ কি:মি: দূরে কালিয়াগুটা হাওরের পাড়ে কাইমা গ্রামে এর অবস্থান। রাজানগর ইউনিয়নের ১,২ও ৩ নং ওয়ার্ডবাসী এর চিকিৎসা সেবার অর্ন্তভূক্ত। কাইমা থেকে দিরাই হাসপাতালে যেতে মাত্র ২০ মিনিট সময় লাগলেও এ এলাকার কোন গর্ভবতী মহিলা দিরাই না গিয়ে এ ক্লিনিকে বাচ্চা প্রসবকে অনেক নিরাপদ ভাবেন। এ ক্লিকিটিকে মা’দের জন্য যিনি নিরাপদ স্থান হিসেবে চিহ্নি করেছেন তিনি হলেন কাইমা গ্রামের মরহুম জামাল উদ্দিনের স্ত্রী রসিদা বেগম। ২০১৪ সালের ১৫ সেপ্টেম্বর সিএসবি রসিদা বেগমের সহযোগিতায় কেজাউড়া গ্রামের আলফাজ উদ্দিনের স্ত্রী শামীমা বেগম কাইমা কমিউনিটি ক্লিনিকে প্রথম একটি ছেলে সন্তান প্রসব করেন। এরপর থেকে আর পিছনে ফিরে থাকাতে হয়নি। রসিদা বেগমের সহযোগিতায় ২০১৪ সালের ১৫সেপ্টেম্বর থেকে ২৮ জুলাই ২০১৯ পর্যন্ত ৪১২ জন মা বাচ্চা প্রসব করেন। ৪১২ জনের মধ্যে ২০১৪ সালের ২২নভেম্বর মধুপুরের হেলেনা বেগম একটি মৃত বাচ্চা প্রসব করেন। ক্লিনিকটিতে সেবাদানকারী এলাকার বাহিরে দক্ষিনসুনামগঞ্জ এবং শাল্লা উপজেলার মায়েরাও এ ক্লিনিকে বাচ্চা প্রসব করেছেন।
দীর্ঘ কয়েকবছর ক্লিনিকটি অপরিত্যক্ত একটি বাড়ীতে পরিনত হয়েছিল। একসময় এ ক্লিনিকে নিয়মিত জোয়ার আসর বসতো। ২০১০ সালের দিকে আবরোও সরকার কমিউনিটি ক্লিনিকে সেবা শুরু করার পর থেকে কাইমা কমিউনিটি ক্লিনিকটি কার্যক্রম শুরু করে। সরকারের পাশাপাশি বিভিন্ন বে-সরকারী প্রতিষ্টান কমিউনিটি ক্লিনিক কেন্দ্রিক কার্যক্রম শুরু করলে, প্রতিষ্ঠানটি গুলোতে আবারো মানুষের সমাগম বাড়তে থাকে।
সিএসবি রসিদা বেগম জানান, যখনই কোন মা ক্লিনিকে আসেন সংসারের কাজ রেখে ক্লিনিকে চলেই যাই তাদের সেবা দেওয়ার জন্য। এ কাজের জন্য সরকার আমাদের কোন মজুরিও দেয়নি এরপরও কাজটা করছি। সরকার যদি আমাদের কাজের বিনিময়ে সম্মান দিতো তাতে কাজের আগ্রহ আরো বাড়তো। এখানে কাজ করে কি হবে কাজ করি আমি পুরস্কার পায় আরেকজন।
শ্রেষ্ঠ কমিউনিটি হেলথ কেয়ার প্রোভাইডার ক্যাটাগরিতে কাইমা কমিউনিটি ক্লিনিক এর কমিউনিটি হেলথ কেয়ার প্রোভাইডার জয়ন্তি রানী রায় কিসের ভিত্তিতে পুরস্কার পান জানতে চাইলে দিরাই উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডা: মাহবুবুর রহমান জানান, এ ব্যাপারে আমাদের কোন হাত ছিলো না। সুনামগঞ্জ সিভিল সার্জন অফিস থেকে পুরস্কারের জন্য নির্বাচিত করা হয়েছে।
সুনামগঞ্জের সিভিল সার্জন ডা: আশুতোষ দাসকে ফোন দিলেও তিনি রিসিভ করেননি।
গ্রামীণ জনগণের চাহিদা অনুসারে কমিউনিটি ক্লিনিক স্থাপন করা হয়। এর মাধ্যমে সহজলভ্য ভাবে নির্দিষ্ট মান ও গুণসম্পন্ন সমন্বিত স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ সংক্রান্ত প্রাথমিক স্বাস্থ্য সেবা প্রদান করা হয়। কমিউনিটি ক্লিনিকের উদ্দেশ্য সফলভাবে বাস্তবায়ন, সহ¯্রাব্দের উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রা অর্জন ও ভিশন ২০২১ লক্ষ্যমাত্রা অর্জনের লক্ষ্যে কমিউনিটি ক্লিনিকসমূহের কার্যাবলী এবং কমিউনিটি হেলথ কেয়ার প্রোভাইডার, স্বাস্থ্য সহকারী ও পরিবার কল্যাণ সহকারীগণ দায়িত্ব পালন করে থাকেন।