তখন রাত পৌণে ন’টা; আধো আলো-আধো অন্ধকার। রোববার এমন সময় কুমিল্লার হোমনা আদর্শ উচ্চবিদ্যালয়ের দক্ষিণের সড়কের এক পাশে সিএনজি অটোরিকশা নিয়ে ঘাপটি মেরে বসেছিল চল্লিশোর্ধ সিএনজি চালক লম্পট আনেয়ার হোসেন। এ সময় পঞ্চম শ্রেণির এক শিক্ষার্থী (১২) প্রাইভেট পড়ে ওই সড়ক ধরে বাসায় ফিরছিল। সুযোগ বুঝে হাত বাড়িয়ে শিশুটিকে টেনে ধরে। শিশুটির আর্তচিৎকারে ‘ছেলেধরা’ সন্দেহে আশপাশের শত শত লোক দৌড় এসে সিএনজিটিকে ঘেরাও করে মেয়েটিকে উদ্ধার করে। খবর পেয়ে ঘটনাস্থল থেকে লম্পট আনোয়ার হোসেনকে আটক করেছে পুলিশ। রাতেই মেয়েটির বাবা তাকে একমাত্র আসামি করে হোমনা থানায় একটি মামলা দায়ের করেন। গতকাল সোমবার কুমিল্লা কোর্টের মাধ্যমে আনোয়ার হোসেনকে জেলে পাঠিয়েছে পুলিশ।
থানা পুলিশ, ভিকটিম ও তার বাবা-মা’র সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, সিএনজি অটোরিকশা নিয়ে আগে থেকেই লম্পট আনোয়ার হোসেন হোমনা পল্লী বিদ্যুৎ সমিতি-৩ -এর জোনাল অফিস সংলগ্ন ও আদর্শ উচ্চবিদ্যালয় দক্ষিণের সড়কে বসা ছিল। ওই সড়ক দিয়ে রাত পৌণে নটার দিকে মেয়েটি প্রাইভেট পড়ে বাসায় ফেরার পথে সিএনজি থেকে হাত বাড়িয়ে মেয়েটিকে টেনে ধরে। অমনি মেয়েটিও জোরে-শোরে চিৎকার চেঁচামেচি শুরু করে দেয়। সঙ্গে সঙ্গে আশ-পাশের লোকজন ‘ছেলেধরা’ সন্দেহে দৌড়ে এসে সিএনজিসহ আনোয়ার হোসেনকে ঘীরে ফেলে। খবর পেয়ে ছুটে আসেন এ এলাকার বাসিন্দা পৌর মেয়র অ্যাড. নজরুল ইসলামও। তিনিই খবর দেন পুলিশকে।
এদিকে সারাদেশের ‘ছেলেধরা’ গুজবে কান না দিতে জোর প্রচারণার ফলে কেউ তাকে তেমন আঘাত করেনি বলে জানা গেছে। মেয়েটির বাবার বাড়ি তিতাস উপজেলায়। মেয়েটি ফাতেমা হলি চাইল্ড কিন্ডার গার্টেনের পঞ্চম শ্রেণির শিক্ষার্থী। মেয়েটির পরিবার হোমনা পল্লী বিদ্যুৎ অফিস সংলগ্ন এলাকায় ভাড়া বাসায় থাকেন। বাবা গাড়ির সহকারীর (হেল্পার) চাকরি করে মেয়ের পড়াশোনার খরচ ও পরিবারের ব্যয় নির্বাহ করছেন। লম্পট আনোয়ার হোসেনের বাড়িও তার পাশর্^বর্তী উপজেলা দাউদকান্দির গৌরীপুর পেন্নাই গ্রামে। সে ঢাকা-হোমনা রোডের সিএনজি অটোরিকশা চালক।
পৌর মেয়র অ্যাড. নজরুল ইসলাম বলেন, ‘ ছেলেধরা’ সন্দেহে শত শত লোক জড়ো হয়েছে দেখে তাৎক্ষণিক সেখানে উপস্থিত হয়ে পরিস্থিতি শান্ত করে ওসি সাহেবকে খবর দেই।
থানা ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) সৈয়দ মো. ফজলে রাব্বী বলেন, আনোয়ার হোসেন অবৈধভাবে তার যৌন কামনা চরিতার্থ করার অসৎ উদ্দেশ্যে মেয়েটির গায়ে হাত দিয়ে শ্লীতহানি করে। এ সময় ‘ ছেলেধরা’ সন্দেহে অনেক মানুষ জড়ো হওয়ার খবর পেয়ে সঙ্গে সঙ্গে ঘটনাস্থলে উপস্থিত হয়ে মেয়েটিসহ তাকে থানায় নিয়ে আসি। আনোয়ার হোসেনের বিরুদ্ধে মামলা হয়েছে। আজ (গতকাল) তাকে কুমিল্লা কোর্টের মাধ্যমে জেলে পাঠানো হয়েছে।