একটি অপারেশন থিয়েটারের অভাবে কুমিল্লার হোমনা উপজেলার মা ও প্রসূতিদের ভুগতে হয়েছে দীর্ঘ চল্লিশ বছর। একটি দরিদ্র মায়ের মুখে হাসি ফুটানোর মধ্য দিয়ে ঘুচল সেই অভাব। গতকাল মঙ্গলবার সকাল সাড়ে দশটায় উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ভর্তি হন জোবেদা আক্তার। তিনি এই প্রথম মা হতে চলেছেন। স্বভাবতই ভয় এবং উৎকণ্ঠা কাজ করছিল প্রসূতি এবং সঙ্গীয় পরিজনদের মধ্যেও। বাবার বাড়ির স্বজনদের সহযোগিতায় তিনি উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে আসেন। তিন ঘণ্টা পর জোবেদার সকল ভয় আর উৎকণ্ঠা দূরে ঠেলে তিন জন ডাক্তার, তিনজন প্রশিক্ষিত নার্স ও স্টাফদের সহযোগিতায় একটি ফুটফুটে কন্যাসন্তান প্রসব করার খবর পেলে সবার মুখেই ফুটে ওঠে অনাবিল সুখানুভুতি। সঙ্গে সঙ্গে হাসপাতালের ডাক্তার নার্স ও অন্যান্য স্টাফদের মধ্যেও ছড়িয়ে পড়ে খুশির সেই ফোয়ারা। এমন সুখের খবরে প্রসূতি ও তার পরিবার খুশি হবেন এটাই স্বাভাবিক; কিন্তু ডাক্তার-নার্স আর স্টাফদের খুশির জায়গা অন্যত্র।
সূত্রে জানা যায়, প্রসূতির শারিরিক অবস্থা তেমন ভালো ছিল না। ফ্লুইডের পরিমান অনেক কমে গিয়েছিল, বেবির মুভমেন্ট এবং অবস্থা স্বাভাবিক প্রসবের পর্যায় থেকে কিছুটা জটিল ছিল। এমন পরিস্থিতিতে রোগীনীর স্বজনরা বাইরের ক্লিনিকে নিয়ে সিজারিয়ান অপারেশন করার কথা ভাবে। রোগীনীর আর্থিক স্বচ্ছলতাও তেমন নেই। বেসরকারি ক্লিনিকগুলোতে গেলে অনেক খরচের ব্যাপার নিয়ে চিন্তায় পড়েন সবাই। আস্বস্ত করেন স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডা. সরফরাজ হোসেন খান। স্বজনদের সম্মতি নিয়ে সরকারি হাসপাতালেই সিজারিয়ান অপারেশন করার কথা জানান।
উপজেলা স্বাস্থ্যকমপ্লেক্সটি ১৯৭৯ সালের ১৯ জুলাই প্রতিষ্ঠিার পর কেটে যায় চল্লিশ বছর। এতোদিন কোনো ধরনের অপারেশন হতো না ৫০ সজ্জার এ সরকারি হাসপাতালটিতে। গত ১০/১৫ দিন আগেই হাসপাতালের অপারেশন থিয়েটারটি সম্পূর্ণরূপে প্রস্তুত করা হয়। স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডা. সরফরাজ হোসেন খান (এনেসিওলজিস্ট), ডাক্তার আখতার আলম (সার্জন), ডা. সুব্রত, সিনিয়ার স্টাফ নার্স জাহানারা, জেসমিন, রুমি আক্তার, ওটি বয় মনির হোসেন ও রুহুল আমিনের সহযোগিতায় গতকাল মঙ্গলবার অত্যন্ত সফলভাবে একজন প্রসূতির সিজারিয়ান অপারেশনের মাধ্যমে অপারেশন থিয়েটারটি চালু হওয়ায় একদিকে উপজেলাবাসীর দীর্ঘ চল্লিশ বছরের প্রত্যাশা পূরণ হলো; অপরদিকে, একটি দরিদ্র মায়ের মুখে ফুটে ওটে প্রথম মা হওয়ার স্বর্গীয় সুখ।
এ ব্যাপারে স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডা. সরফরাজ হোসেন খান বলেন, আজই (গতকাল মঙ্গলবার) নানা জটিলতা নিয়ে প্রসূতি জোবেদা আক্তার ভর্তি হন উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে। ফলে তারা প্রাইভেট ক্লিনিকে নিয়ে সিজারিয়ান অপারেশন করানোর পরিকল্পনা করছিলেন; আর অনেক টাকা পয়সার কথাও ভাবছিলেন। সরকারি হাসপাতালে বিনা খরচে আমরা প্রশিক্ষিত ডাক্তার নার্সদের সহযোগিতায় দীর্ঘ চল্লিশ বছর পর হোমনা উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে অত্যন্ত সফলভাবে এই মায়ের প্রথম সিজারিয়ান অপারেশন করেছি। তবে, বাইরে থেকে তাদের বারো শ’ টাকার ওষুধ ক্রয় করতে হয়েছে। এই হচ্ছে সর্বসাকুল্যে খরচ। বর্তমানে মা ও শিশু দুজনেই ভালো আছেন।