কুমিল্লার হোমনা, গৌরিপুর ও ঢাকা রুটে অনির্দিষ্টকালের জন্য পবিহন ধর্মঘট চলছে। মালিক সমিতির দ্বন্দ্বের জেরে বাস চলাচল বন্ধ রেখে অনির্দিষ্টকালের জন্য এই ধর্মঘট করছেন মালিকপক্ষের একটি বড় অংশ। এতে দুর্ভোগে পড়েছেন সাধারণ যাত্রীরা।
গতকাল বুধবার সকাল থেকে ঢাকা-হোমনা সুপার সার্ভিস ও লোকাল সার্ভিসের সকল বাস চলাচল বন্ধ রয়েছে। ফলে সাধারণ যাত্রীরা ঢাকার উদ্দেশে হোমনা থেকে সিএনজি অটোরিক্শাযোগে আঠারো কিলোমিটার দূরত্ব অতিক্রম করে গৌরিপুর থেকে অন্যান্য বাসে চড়তে বাধ্য হচ্ছেন। এতে যাত্রীরা প্রকাশ করছেন ক্ষোভ; আর শ্রমিকদের মাঝে বিরাজ করছে হতাশা।
একাধিক বাসমালিক ও শ্রমিকের সঙ্গে কথা বলা জানা গেছে, বাস থেকে উত্তোলিত চাঁদায় রুটের আনুষাঙ্গিক খরচ না মেটানো এবং হিসাব নিকাশসহ মালিকদের মূল্যায়ন না করায় বর্তমান মালিক সমিতির সভাপতি মো. জহিরুল ইসলাম উজ্জ¦লের সঙ্গে অন্যান্য মালিকদের দূরত্ব তৈরি হওয়ার বিদ্যমান সমস্যাটি অনেক দিন ধরেই চলছে। সমস্যা সমাধানে স্থানীয় সংসদ সদস্য পর্যন্ত যাওয়ার পরও এর কোনো সঠিক সমাধানে পৌঁছতে পারেনি মালিকদের উভয় পক্ষ। ফলে গতকাল বুধবার সকাল থেকে মালিকদের একটি বড় অংশ বাস চলাচলা বন্ধ করে দিয়ে ধর্মঘটে আছে।
ঢাকাগামী জাহানারা নামে এক যাত্রী ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, ‘মালিকদের স্বার্থের জন্য আমাদের সাধারণ যাত্রীদের দুর্ভোগে পড়তে হয়। ঈদ এলেই তাদের ভাড়া বাড়ানোর অসম প্রতিযোগিতার বলি আমাদেরই হতে হয়। শুনলাম, আজকে নাকি মালিক-মালিক কমিটি দ্বন্দ্ব। শুনছি, বাস না-কি সারাদিনেও চলবে না। আমাদের দুর্ভোগের কথা কে শুনে?’
বাসচালক মো. জাকির ও সফর আলী জানান, ‘মালিকরা যদি বাস বন্ধ রাখে আমাদেরতো করার কিছু নাই। বাস না চললে বেতনও পামু না। আমরা গরীব শ্রমিক; টানাটানি কইরাই সংসার চালাইতে হবে আরকী।
আন্দোলনকারী মালিকদের নেতা ও নীলা পরিবহনের মালিক মো. নাসির উদ্দিন জানান, রোডে গাড়ি চললে অনেক খরচ আছে। প্রায় সময়ই কোনো না কোনো গাড়ি মামলা খাচ্ছে; এতে ২০/২৫ হাজার টাকা জরিমানা দিচ্ছে মালিকরা। লাভের জায়গায় লোকসানের শেষ নাই। রোডে আগে আমাদের একটা মান্থলি করা ছিল; তখন এত জরিমানা হতো না। সহজে মামলাও খেত না। এখন উজ্জ্বল সভাপতি হওয়ার পরে রোড এবং মালিকদের কোনো খোঁজ খবর রাখছে না। টাকা পয়সার কোনো হিসাব নাই। কমিটির পরিবর্তন চায় মালিকরা। এখন আমরা সকলে সিদ্ধান্ত নিয়েছি, সমস্যা সমাধান না হওয়া পর্যন্ত গাড়ি বন্ধ থাকবে।
এ ব্যাপারে হোমনা-গৌরিপুর-ঢাকা বাস মিনিবাস মালিক সমিতির বর্তমান সভাপতি মো. জহিরুল ইসলাম উজ্জ্বল মোবাইল ফোনে এই প্রতিবেদককে জানান, হোমনা থেকে ঢাকার উদ্দেশ্যে ছেড়ে যাওয়া গাড়িগুলো থেকে নাসির সিকদার, মমিন ভূঁইয়া, শাহ আলম, মফিজ এরা পাঁচ-ছয় জন মিলে পথে যাত্রীদের নামিয়ে দিয়ে হয়রানি করছে। যা তারা করতে পারে না। রোডে কোনো সমস্যা থাকলে আমি দেখব। কিন্তু তারা জোর করে গাড়ি থেকে যাত্রী নামিয়ে দেওয়ার আইন কি বাংলাদেশে আছে? তাদের এমন হয়রানির বিরুদ্ধে থানায় লিখিত দরখাস্ত দিচ্ছি।
এ ব্যাপারি হোমনা থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) সৈয়দ মো. ফজলে রাব্বী বলেন, কমিটির দ্বন্দ্বে তিতাসের মালিকদের গাড়ি বন্ধ রেখেছে। শুধু ৬টি গাড়ি চলছে। তবে কথাবার্তাও চলছে। আশা করি এ সমস্যার সুষ্ঠু সমাধান হবে।