হয়তো সমুদ্রের প্রতি ভালবাসার কারণে প্রথম সন্তানের নাম রেখেছিলেন সমুদ্র। সেই সমুদ্র রহমানের বয়স এখন পাঁচ। টাঙ্গাইল সদর উপজেলার ব্যবসায়ী মোমিনুল রহমান ও তানিয়া রহমান দম্পত্তির এই সন্তান এখন প্রাক প্রাথমিকের শিক্ষার্থী। ছেলেকে সাথে সমুদ্রের সাথে পরিচয় করিয়ে দিতেই তারা ভ্রমনে এসেছেন কুয়াকাটায়। নিরিবিলি, প্রাকৃতিক সৌন্দর্য ও শান্ত সাগরের বিশালতার প্রেমে মুগ্ধ হয়ে তারা ছেলে সমুদ্রকে ছেড়ে দিয়েছেন সমুদ্র সৈকতে। সমুদ্রও সমুদ্রের তীরে তীড়ে কখনও দৌড়াদৌড়ি,কখনওবা শান্ত হয়ে দাঁড়িয়ে উপভোগ করছেল সমুদ্রকে।
হাজার হাজার পর্যটকদের সাথে প্রতিদিন শতশত স্কুলগামী শিশু শিক্ষার্থীরা কুয়াকাটায় শিক্ষা সফরে বা কুয়াকটায় ভ্রমনে আসে। শান্ত ও নিরাপদ এ কুয়াকাটা সৈকত সব বয়সী পর্যটকদের মতো শিক্ষার্থীদের ভ্রমনের অন্যতম পর্যটনস্পট।
কুয়াকাটার ব্যবসায়ীদের আসা,এই কোরবানীর ছুটিতে কুয়াকাটায় লাখো পর্যটকের সমাগম হবে। বর্ষায় সাগরের উত্তাল ঢেউয়ের দৃশ্য উপভোগে পর্যটকরা মুগ্ধ হবে। তাছাড়া সৈকত নিরপদ হওয়ায় এখানে সব বয়সের পর্যটকরাই সাগরে নেমে নির্বিঘেœ গোসল করতে পারছে।
প্রায় তিন বছর আগে কুয়াকাটার পশ্চিম সৈকতে মোটরসাইকেলে ঘুরতে গিয়ে সাগরে ফেলা মাছ ধরা জালের দড়ি গলায় আটকে শরীর থেকে মাথা বিচ্ছিন্ন হয়ে মর্মান্তিক মৃত্যু হয়েছিল পঞ্চম শ্রেণির ছাত্র শাকিলের (১১)। সেটাই শেষ দূর্ঘটনা। প্রশাসনের কড়াকড়ি, সৈকতে ট্যুরিষ্ট পুলিশ ও নৌ-পুলিশের বাড়তি সতর্কতা কুয়াকাটা সৈকত এখন স্কুলগামী শিশু-কিশোরদের অন্যতম ভালোলাগার স্পট।
পর্যটক মোমিনুল রহমান বলেন, তারা দেশের বিভিন্ন পর্যটন স্পট ভ্রমন করেছেন। কিন্তু একমাত্র কুয়াকাটাই যেখানে সন্তানকে নিরিবিলি ও নির্ভয়ে সৈকতে ঘুরতে দেয়া সম্ভব হয়েছে।
নবম শ্রেণির ছাত্রী সিফাতের এখনও সাঁতার শেখা হয়নি। ফরিদপুর জেলা সদরের এ স্কুল ছাত্রীর কখনও পুকুরেও পা ভেজানোও হয়নি। কিন্তু শান্ত সাগরের তীরে ঢেউয়ের ঝাপটায় সে হাঁটছে আপন মনে। তার সঙ্গী সপ্তম শ্রেণির ছাত্রী জিনিয়া, বিন্দু, ৬ষ্ঠ শ্রেণির নাইমা, দশম শ্রেণির পাপড়িও সাঁতার জানে না। তবুও তারা সাগরের কূলে হাঁটুসমান পানিতে হাঁটছে।
সিফাত জানায়, বন্ধুদের কাছে অনেক শুনেছি কুয়াকাটার কথা। আজ এখানে এসে সত্যিই তাদের চোখে দেখা সৌন্দর্যের বিবরণ বাস্তবে উপভোগ করলাম। সাঁতার না জানলেও তারা শুনেছেন কুয়াকাটা চোরাবালি নেই। নেই সাগরের গভীর ঢেউয়ের টান। তাই সাঁতার না জানলেও সাবধানে হাঁটছে তারা সৈকতে।
নাইমার পিতা চাকুরীজীবি সাইফুল ইসলাম বলেন, কুয়াকাটা সৈকতের পরিবেশ ও নিরাপত্তা ব্যবস্থায় তারা মুগ্ধ। এখানে সব বয়সের মানুষকে নিরাপদে ভ্রমন করতে দেখে ভালো লাগছে। তাই সন্তানের আবদার রাখতে বোন ও বন্ধুদের সাথে নাইমাও ঘুরছে সাগর পাড়ে।
কুয়াকাটা হোটেল ব্যবসায়ীরা জানান, প্রতিবছর অন্তত তিন-চারশ বিদ্যালয়ের কয়েক হাজার শিক্ষার্থী, শিক্ষক শিক্ষা সফরে কুয়াকাটায় ভ্রমনে আসে। এ ছাড়া পিটিআই শিক্ষক, বিভিন্ন কলেজ, বিশ্ববিদালয়ের শিক্ষক-ছাত্র-ছাত্রীদের আগমন থাকে বছরের পুরোটা সময় জুড়ে। তবে শীত ও বর্ষার সময়ে বেশি পর্যটক আসে।
কুয়াকাটা সৈকতের একাধিক ব্যবসায়ী বলেন, পর্যটকদের সাথে সাথে দেশের বিভিন্ন স্থান থেকে প্রতিদিন অন্তত তিন-চারশ স্কুল গামী পাঁচ-১৩ বছর বয়সী শিশু-কিশোররা আসে বাবা-মা কিংবা শিক্ষকদের সাথে। অভিভাবকরা সৈকতের নিরিবিলি স্থানে বসলেও শিশুরা গোটা সৈকত হৈ-হুল্লোরে মাতিয়ে রাখে। কখনও কোন দূর্ঘটনা ঘটেনি এখানে।
তৃতীয় শ্রেনির ছাত্র মিশুক খুশি সাগরের হাট সমান পানিতে নামতে পেরে। প্রথমে একটু ভয় করলেও তার বয়সী ও ছোট অনেককে নামতে দেখে সেও সাহস করে নেমেছে। মিশুক জানায়, ভাবছি এবার সাঁতার শিখবো। পরের বার যখন গ্রীস্মের ছুটিতে কুয়াকাটায় আসবো তখর সাগরে বন্ধদের সাথে সাঁতার কাটবো। এখানে সবাই( ট্যুরিষ্ট পুলিশ,নৌ-পুলিশ) কেয়ারিং করে দেখে তার আর ভয় করে না।
স্থানীয় বাসিন্দা সোলায়মান মিয়া বলেন, কুয়াকাটা সৈকত ঘেষা জেলে পল্লী ও আদর্শ গ্রামের কয়েকশ শিশুর-সকাল সন্ধা কাটে এই সৈকতেই। কিন্তু সৈকতে চোরাবালি না থাকায় এবং সাগরের ¯্রােতের টান না থাকায় কোন দূর্ঘটনা ঘটেনি।
কুয়াকাটায় সহকর্মী শিক্ষকদের সাথে ভ্রমনে আসা শিক্ষিকা কবিতা রানী জানান, তারা পিটিআই থেকে এখানে প্রশিক্ষণকালীন ভ্রমনে এসেছেন। আগামি শিক্ষা সফরে স্কুলের শিক্ষার্থীদের নিয়ে আসবেন বলে জানান। তার মতে, এখানে সবকিছুই ছবির মতো সাজানো গোছানো, নেই কৃত্রিমতা কিংবা বয়াল কিছু। আতঙ্কিত হওয়ার কিছু না থাকায় শিশু-কিশোররা এখানে ইচ্ছে মতো ঘুরে বেড়াতে পারবে।
কুয়াকাটা ট্যুরিষ্ট পুলিশর জানায়, সৈকতে নিরাপদে ভ্রমনের জন্য সব বয়সী পর্যটকের নিরাপত্তায় তারা বেশি মনোযোগী। সাগরে সাঁতার করা কিংবা জলযানে ভ্রমনের ব্যাপারেও তারা লাইফ জ্যাকেট ছাড়া কাউকেই উৎসাহী করছেন না। তবে কুয়াকাটা সৈকতের বালুকাবেলা নিরাপদ হলেও এখানে ভ্রমনে এসে পর্যটকরা যাতে কোন বিপদের সম্মুখীন না হয় সে ব্যাপারে ট্যুরিষ্ট পুলিশ ও পর্যটক গাইডরা সজাগ রয়েছেন বলে জানান।