চট্টগ্রাম বন্দরে ধীরগতিতে চলছে কনটেইনার খালাস ও ডেলিভারি। ফলে বন্দরে জাহাজ ও কনটেইনারের চাপ বেড়েছে। আমদানিকারকরা স্বাভাবিক সময়ের চেয়ে অনেক কম পণ্য ডেলিভারি নেয়ায় বন্দর ইয়ার্ডে কনটেইনারের স্তূপ জমেছে। মূলত ঈদের লম্বা ছুটির কারণে এমন পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়েছে। বর্তমানে প্রতিদিন জাহাজ থেকে যে পরিমাণ কনটেইনার নামানো হচ্ছে, ওই তুলনায় ডেলিভারি কম হচ্ছে। এ পরিস্থিতি সামাল দিতে দুই থেকে তিন সপ্তাহ লাগতে পারে। জাহাজ থেকে পণ্য খালাসও ধীরগতিতে হচ্ছে। এ কারণে বাড়ছে জাহাজের গড় অবস্থানকাল। কারণ বহির্নোঙরে খালাসে নিয়োজিত শ্রমিকদের অনেকেই ছুটিতে চলে গেছেন। চট্টগ্রাম বন্দর সংশ্লিষ্ট সূত্রে এসব তথ্য জানা যায়।
সংশ্লিষ্ট সূত্র মতে, ঈদের আগে ৮ আগস্ট চট্টগ্রাম বন্দর ইয়ার্ডে কনটেইনারের সংখ্যা ছিল ৩৩ হাজার ২২১ টিইইউএস (২০ ফুট সমমানের কনটেইনার)। আর পরবর্তী ৭ দিনে বেড়েছে ৯ হাজার ৩৭৯ টিইইউএস। চট্টগ্রাম বন্দরের কনটেইনার ধারণক্ষমতা ৪৯ হাজার ১৮ টিইইউএস। আন্তর্জাতিক স্ট্যান্ডার্ড অনুযায়ী বন্দরের ভেতরে হ্যান্ডলিং কার্যক্রম স্বাভাবিক রাখতে কনটেইনারের সংখ্যা ধারণ ক্ষমতার ৭০ শতাংশ রাখতে হয়। এর বেশি হলে হ্যান্ডলিং যন্ত্রপাতি স্বাভাবিকভাবে কাজ করতে পারে না। এ হিসাবে বলা যায়, বর্তমানে বন্দরে কনটেইনারের সংখ্যা প্রকৃত ধারণক্ষমতা ছুঁইছুঁই।
সূত্র জানায়, ঈদের ছুটির কারণে সিঅ্যান্ডএফ এজেন্টরা বন্দর থেকে পণ্য ডেলিভারি নেয়া কমিয়ে দিলে কনটেইনারের সংখ্যা বাড়তে থাকে। স্বাভাবিক সময়ে চট্টগ্রাম বন্দর থেকে প্রতিদিন সাড়ে চার হাজার টিইইউএস কনটেইনার ডেলিভারি হয়। ছুটিতে তা এক থেকে দেড় হাজারের নিচে নেমে আসে। ঈদের আগে শনিবার এক হাজার ১০, রোববার এক হাজার ১২৮ টিইইউএস কনটেইনার ডেলিভারি হয়েছে। ঈদের পরও একই অবস্থা দেখা গেছে। গত বুধবার এক হাজার ২০০ ও বৃহস্পতিবার এক হাজার ৫০০ কনটেইনার ডেলিভারি হয়েছে। তবে ঈদের আগের ও পরের দিন সরকারি ছুটি থাকলেও সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তা-কর্মচারীরা কাজ করেছেন। ওই সময় জাহাজ থেকে পণ্য খালাস হয়েছে। কিন্তু ডেলিভারি কম হয়েছে। সিঅ্যান্ডএফ এজেন্টরা কনটেইনার নেয়নি। ভারি যানবাহন স্বল্পতা এবং অধিকাংশ কলকারখানায় উৎপাদন বন্ধ থাকায় ব্যবসায়ীরা পণ্য ডেলিভারি নিতে আগ্রহী হননি। এ কারণে আমদানি কনটেইনারের সংখ্যা বেড়ে গেছে।
সূত্র আরো জানায়, বন্দরে কনটেইনারের সংখ্যা ধারণক্ষমতার কাছাকাছি গেলে কিংবা অতিক্রম করলে জাহাজ থেকে কনটেইনার নামিয়ে রাখার জায়গা পাওয়া যায় না। আবার কনটেইনার নাড়াচাড়া করা কিংবা ট্রেইলারে তুলতেও অসুবিধার সৃষ্টি হয়। কিছু কনটেইনার খুলে পণ্য ট্রাক ও কাভার্ড ভ্যানযোগেও তোলা হয়। এজন্য ফাঁকা জায়গা দরকার হয়। চট্টগ্রাম বন্দরে গত এক থেকে দেড় মাসে জাহাজ বেশি এসেছে। ফলে বহির্নোঙর থেকে জেটিতে বার্থিং পেতে জাহাজগুলোকে নির্ধারিত সময়ের অতিরিক্ত অবস্থান করতে হচ্ছিল। ঈদের ছুটিতে শ্রমিক কমে যাওয়ায় বহির্নোঙরে খোলা পণ্য খালাস কমে গেছে। ফলে জাহাজের অবস্থানকালও বাড়ছে। খোলা পণ্যবোঝাই জাহাজগুলোর বার্থিং পেতে কিছুটা সময় বেশি লাগছে। এক্ষেত্রে ওয়েটিং টাইম সাত থেকে আট দিন। এ সমস্যা ঈদের আগে থেকে ছিল। তবে কনটেইনার জাহাজের ক্ষেত্রে ওয়েটিং টাইম তেমন বেশি নয়। গত বৃহস্পতিবার বন্দরের বহির্নোঙরে ৮৮টি এবং জেটিতে ১৩টি জাহাজ ছিল। আর ১৮টি কনটেইনারবাহী জাহাজ বার্থিংয়ের অপেক্ষায় ছিল। গত বৃহস্পতিবার বহির্নোঙর ও জেটিতে আমদানি পণ্যবোঝাই ১০১টি জাহাজ ছিল। আর একবার জাহাজ ও কনটেইনারের সংখ্যা বেড়ে গেলে পরিস্থিতি স্বাভাবিক করতে বেশ কয়েকদিন সময়ের প্রয়োজন হয়। নতুন কোনো সমস্যার সৃষ্টি না হলে বন্দরে বর্তমান অবস্থা থেকে স্বাভাবিক অবস্থায় ফিরতে দুই থেকে তিন সপ্তাহ সময় লাগতে পারে।
এ প্রসঙ্গে চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষের সচিব মো. ওমর ফারুক যুগান্তরকে বলেন, ঈদের ছুটিতে কনটেইনারের পরিমাণ কিছুটা বেড়ে গেছে। বন্দরের কর্মকর্তা-কর্মচারীরা শুধু ঈদের দিন ছুটি কাটিয়েছেন।